রংপুরে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এখন চা বিক্রেতা

হাজী মারুফ :



হনুফা বেগম বয়স ৬৭, স্বামী মজিবর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার ৪৪ বৎসরেও ভাতা হয়নি, খাস জমিতে বসবাস করে অর্থের অভাবে অতিকষ্টে জীবন যাপন করে এ পৃথিবী থেকে তিনি চলে গেছেন। অনেকের পিছনে ধর্না দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য, চেষ্টা করেছেন খাস জমি পাবার কিন্তু কাহারো সহযোগিতা না পাওয়ায়, হতাশা আর দুঃখ নিয়ে ৭৭ বৎসর বয়সে গত বৎসর ২৫ জানুয়ারী চীরকালের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর পেলেন রাষ্টীয় সম্মানা। এটাই ছিল তাঁর পরিবারের সান্তনা। ৮ সন্তানের সবার বিয়ে হলেও জামাইকে সন্তুষ্ট করতে না পারায় ১ মেয়ে বাড়িতে আছে । স্বামীর মৃত্যুর পর হনুফা বেগম খাস জমিতে চিপার মধ্যে ল্যাট্রিনের হাউজের উপর বসবাস করছেন। সংসার চালাতে গিয়ে ছেলের সঙ্গে বৃদ্ধ বয়সে ফুটপাতে চা বিক্রি করছেন।
জানাযায়, দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ মুশিদ হাট (শহীদ পাড়া) এলাকার জমির উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে মজিবর রহমান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সাথে স্ত্রী আর ২ সন্তানকে রেখে ৩৪ বয়সের যুবক চলে মুক্তিযোদ্ধে। যোগদেন ভারতের রায়গঞ্জের বাহারাইল ইউথ ক্যাম্পে। সেখানে ট্রেনিং অবস্থায় বন্যা দেখা দিলে, ক্যাম্প কোজ করে ৭নং সেক্টরের ফতেপুর শালবন ক্যাম্পে স্থানান্তর করে পুনরায় ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহন করেন। বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলে সেখান থেকে পানি ঘাটায় ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হলে ট্রেনিং সম্পন্ন করেন। ট্রেনিং শেষে গ্র“প কমান্ডার আব্দুর রশীদের সহিত ইসলামপুর জেলার থুকরাবাড়ী ক্যাম্পে ভারতীয় যৌথ বাহিনীর ক্যাপ্টেন শীব রায়ের অধীনে ঠাকুরগাও জেলার বালিয়াডাঙ্গী, আটোয়ারী ও রুহিয়া এলাকায় যুদ্ধ করেন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে রায়গঞ্জ জেলাধীন মালন ক্যাম্পে বদলী হয়ে আসেন এবং ঠাকুরগাও ও দিনাজপুর জেলার পীরগঞ্জ, বোচাগঞ্জ, বিরল ও কাহারোল এলাকায় যুদ্ধ করেন। দেশ স্বাধীন হলে ৭নং সেক্টরের তরঙ্গপুর সেক্টরের কমান্ডার লেঃ কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামানের নিকট ১টি ৩০৩ রাইফেল ও গুলি জমা করে দিনাজপুর মহারাজা হাইস্কুলের ম্যালেশিয়া ক্যাম্পে যোগদেন এবং ১৯৭২ সালের ৬ই জানুয়ারী রিলিজ হয়ে বাড়িতে চলে আসেন। ৭ নং সেক্টরের পানি ঘাটার আলফা ইউং এর তাঁর এফ, এফ নং-২০৪৪।
জীবন জীবিকার তাগিদে নিজ গ্রাম থেকে ১৯৮১ সালে স্ত্রী সন্তাকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মজিবর চলে আসেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায়। থানার সামনে খাস জমিতে বাড়ি করে বসবাস করেন।  মাঝে মধ্যে নিজ গ্রামে আত্বীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাতা ও খাস জমি পাবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এক জেলার মুক্তিযোদ্ধা আর এক জেলায় বসবাসের কারণে সেখানকার নাগরিক, ফলে কোনদিক থেকে সঠিকভাবে সহযোগিতা না পাওয়ায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনেক হতাশা আর দুঃখ নিয়ে চলে যান। তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হলেও পায়নি বেচে থাকা বৃদ্ধ স্ত্রী ও সন্তানেরা খাস জমি বন্দোবস্ত নিতে, স্বামীর ভাতার জন্য বৃদ্ধ বয়সে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কিন্তু সে ভাতা তিনি ভোগ করতে পাবেন কিনা শেষ বয়সে।
হনুফা বেগম বলেন, স্বামী দেশের জন্য যুদ্ধ করে খেয়ে না খেয়ে মরে গেল। খাস জমিত বাড়ি কয়বার ভাঙছি ঠিক নাই, বাচি থাকতে ভাতা আর জমির জন্য খুব চেষ্টা  করেছে হয় নাই সে কষ্ট বুকে নিয়ে গেছে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্দের ডাকায় হামার খোজও নেয় না। মুক্তিযোদ্ধার বিল্ডিং হইছে হামরা সেই বিল্ডিংয়ের পায়খানার গর্তের উপর চিপার মধ্যে কোন রকম বাড়ি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অতি কষ্টে আছি। অভাবের কারণে বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ফুটপাতে বৃদ্ধ বয়সে ছেলে মনুসহ চায়ের দোকান দিয়ে সংসারের খরচ যোগাচ্ছেন। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করেছেন, তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দেখে যেতে না পারলেও তিনি যেন স্বামীর ভাতা ও বাড়ি করার জন্য একটু জমি পান।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 2443274503424911879

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item