পীরগঞ্জে সুদের টাকা পাওয়াকে কেন্দ্র করে ৬ পরিবারের উপর দু’সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলা!

অশান্ত গ্রাম সরলিয়া, আতংকে নারী-পুরুষ, আবারো হামলার সম্ভাবনা, পুলিশ টহল চলছে

মামুনুর রশিদ মেরাজুল-   

পীরগঞ্জে সুদের টাকা পাওয়াকে কেন্দ্র করে দু’বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ৬ পরিবারের সদস্যদের উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে লুটতরাজ করেছে। হামলার সময় পুরুষরা বাড়ীতে না থাকায় সন্ত্রাসীরা বাড়ীর নারীদের শ্লীলতাহানি ও মারপিট করে গরু, পাওয়ার টিলার-স্যালোমেশিনসহ দোকান লুটপাট করেছে। গত শনিবার সন্ধ্যার আগে উপজেলার সরলিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই ওই গ্রামে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে হামলার শিকার পরিবারগুলো চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে। যেকোন সময় ওই সন্ত্রাসীরা গ্র“প দুটি পুনঃ হামলা করতে পারে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের সরলিয়া গ্রামের মৃত. আমত উল্লাহর ছেলে মকবুল হোসেনের কাছে প্রতিবেশী মোখলেছার রহমান সুদের ৭ হাজার টাকা পায় বলে ধুয়া তোলে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহষ্পতিবার রাতে মকবুল হোসেনের ছেলে এহতেশাম মিয়া কে গ্রামটির মতিয়ার বাহিনীর সদস্য অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম (৪৬), মোখলেছার, নওশা, মাহফুজার, ইবরাহীম, আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন মারপিট করে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধলে মতিয়ার বাহিনীর অন্যতম সদস্য নজরুল ও অপরপক্ষের এহতেশাম আহত হয়ে পীরগঞ্জ মেডিকেলে ভর্তি হয়। পরে নজরুলকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। পরে পার্শ্ববর্তী বেতকাপা গ্রামের ত্রাস বাহিনী হিসেবে খ্যাত মঞ্জু বাহিনীও মতিয়ার বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। শনিবার সকালে ওই দু’বাহিনীর নেতৃত্বে মৃত. আমত উল্লাহর ছেলেদের ৬ পরিবারের উপর হামলার প্রস্তুতি নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি তার পরিষদবর্গকে সাথে নিয়ে সরলিয়া গ্রামে যান এবং শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে দু’পক্ষকেই শান্ত করে চলে আসেন।
এদিকে ওই দু’বাহিনীর দু’প্রধানের নেৃতৃত্বে উক্ত ৬ পরিবারের উপর শনিবার সন্ধ্যার আগেই সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলাকারীরা ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালিয়ে ৬ পরিবারের সদস্য রাশেদুলের ৩ লক্ষাধিক টাকা মুল্যের ৬ টি গরু, ইমরান মিয়ার ১টি নতুন পাওয়ার টিলার, ১টি স্যালোমেশিন, এবং আশরাফুলের গালামালের দোকান থেকে দেড়’শ বস্তা রাসায়নিক সার, ডিজেল ভর্তি ড্রামসহ দোকানের লক্ষাধিক টাকার মালামাল, ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড় লুটপাট করে, কাশেম ও আনিছার রহমানের ঘরের বারান্দা, জানালা-দরজা, বিদ্যুতের মিটার ও রান্নার চুলা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনার রাতেই সেখানে যায়। গতকাল রবিবারও পুলিশ সরলিয়া গ্রামে টহলে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দু’সন্ত্রাসী গ্র“পের সদস্যরা পালিয়ে যায়। এখনো আতংকে রয়েছে ৬ পরিবারের ৭০ জন সদস্য। অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে সরলিয়ায়।
গতকাল রবিবার সকালে গ্রামটিতে গেলে হামলার শিকার ষাটোর্ধ রাজা মিয়া, কাশেম মিয়া (৫৫), গৃহবধু ববিতা বেগম (২৫),  সর্বস্ব হারিয়ে আহাজারি করে বলেন, দ্যাশোত কি আইন নাই বাবা! হামরা কি এই দ্যাশোত থাকপার পাবালাই। দিনে দুপুরে আমাদেরকে মারপিট করলো। আবারও হামলা করবে বলে আমাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। শ্লীলতাহানির শিকার ববিতা জানায়, সন্ত্রাসীরা আমার পরনের ওড়না, মেক্সি টেনেহেচড়ে ছিড়ে ফেলেছে। আমার স্বামীর দোকানের সমস্ত মালামাল লুটপাট করেছে। কাশেমের স্ত্রী আরেফা বেগম বলেন, ইব্রাহীম, মতিয়ার, নওশা, মাহফুজার, আশরাফুল, রাশেদুল, আনারুল আমাদের পাওয়ার টিলার ও স্যালোমেশিন রশি দিয়ে বেধে টেনে নিয়ে গেছে। ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি সমঝোতার লক্ষ্যে শনিবার সন্ধ্যায় বসার কথা ছিল। কিন্তু মঞ্জু বাহিনীর অন্যতম সদস্য বেতকাপার সুমন মিয়া তাদের সদস্যদেরকে বলে, চেয়ারম্যান বসার আগেই আমাদেরকে ঘটনা ঘটাতে হবে বলে। এরপরই দু’টি সন্ত্রাসী গ্র“পের লাঠি, ছোড়াসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। মঞ্জু বাহিনীর সদস্য ফেরদাউস মোবাইল ফোনে বলেন, আমি চেয়ারম্যানের সাথে সকালে বৈঠকে ছিলাম। সন্ধ্যায় বসার কথা ছিল। আমি হামলার সময় ছিলাম না। মঞ্জু ও মতিয়ার বাহিনীর সদস্যরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ঘটনায় যায় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসী জানায়। ওসি রেজাউল করিম বলেন, এ ঘটনায় মকবুল হোসেন বাদী হয়ে অভিযোগ দেয়ায়সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 1586433011619041485

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item