অতুল চন্দ্র গোস্বামী বিনে পয়সার ডাক্তার!

মামুনুর রশিদ মেরাজুল,রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে ফিরে ঃ

অতুল চন্দ্র গোস্বামী (৬৫)। বিনি পয়সার ডাক্তার। ৩১ বছর ধরে হোমিও ওষুধ দিয়ে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস্, প্যারালাইসিসসহ জটিল-কঠিন রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। সারাদেশের এমনকি বিদেশ ফেরত রোগীরাও তার কাছে চিকিৎসা নিয়ে ভালও হচ্ছেন। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের জামালপুর (কুমারপাড়া) গ্রামে ডাঃ অতুল চন্দ্রের বাড়ী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরবেলা থেকেই বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিক্সা-ভ্যান, অটো, মাইক্রোবাসযোগে রোগীরা ডাক্তারের বাড়ীতে আসছে। কারো মুখে হাসি নেই। রোগীরা ব্যথায় কাতরাচ্ছে, কেউ ইস-আঁশ শব্দে কষ্ট দুর করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন। একপর্যায়ে সকাল ১১টার দিকে ষাটোর্ধ বয়সী ডাঃ অতুল চন্দ্র গোস্বামী আসলেন। গায়ে ঘিয়ে রংয়ের হাফ হাতা ফতুয়া, পরনে সাদা রংয়ের ধুতি, পায়ে স্যান্ডেল। তিনি প্রতিদিনের ন্যায় নতুন রোগীদের উদ্দেশ্যে রোগ সম্পর্কে কয়েক মিনিটের দিক নির্দেশনা ও শান্তনামুলক বক্তব্য দিলেন। এ সময়ের মধ্যেই জমায়েত হয়েছে ৫ শতাধিক রোগী। কিছুক্ষণ পর ডাক্তারের একমাত্র ছেলে ডাঃ অনীক বরণ গোস্বামীও (২৬) আসেন পুরাতন রোগীদের কাছে। শুরু হয় রোগ বৃত্তান্ত শোনা ও ওষুধ দেয়া-নেয়ার পালা।
একসাথে ১৫/১৬ জনের কাছ থেকে রোগের বর্ননা শুনে বাড়ীর ভিতর থেকে এক চিমটি পরিমান হোমিও (পাউডার) ওষুধ কাগজে পুরিয়া করে রোগীদেরকে দেয়া হয়। মজার ব্যাপার হলো, ডাঃ অতুল ও ডাঃ অনীক রোগীদের সাথে নির্দিষ্ট দুরুত্ব বজায় রেখে কথা বলেন এবং ওষুধ দেন। রোগী না এলেও রোগীর অভিভাবক ওষুধ নিতে পারে। ওষুধ সেবনের ব্যাপারে একটি লিফলেট (প্রচারপত্র) রোগীদের হাতে দেয়া হয়। সপ্তাহের সোম, মঙ্গল, বুধ, শুক্র ও শনি ওষুধ দেয়া হয়। ডাক্তারের মোবাইল নং- ০১৭১৪৯১১০৯৯।
ওষুধ নিতে আসা ডায়াবেটিকস্ রোগী রংপুরের পীরগাছার শিরিনা বেগম ও ছালেহা বেগম, পিত্তথলিতে পাথর নিয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মজিদা বেগম, পেটে টিউমার-পাথর-জন্ডিস রোগী খামার বোয়ালীর লাভলী বেগম, ব্রেষ্ট ক্যান্সার রোগী বারবলদিয়ার সাবিজান খাতুন (৫৬), সাদুল্লাপুরের ফাতেমা বেগম, খাদ্যনালীতে ক্যান্সার ও পিত্তথলিতে পাথরের রোগী মিঠাপুকুরের বিলকিস বেগম জানান, অতুল ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে অনেকটা আরাম পেয়েছি। কোমর ব্যথায় বগুড়ার শাকপালার শহিদুল ইসলাম, মেরুদন্ডের হাঁড় বেড়ে যাওয়া সারিয়াকান্দির ওয়াহেদুল ইসলাম, ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবু তাহের (৬০), পেটের ব্যথায় শুকিয়ে যাওয়া সোনাতলার ছায়দার রহমান, জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত শাহেদা বানু (৭২), মাদারীপুরের সফিকুল শরীরে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তারা জানান, অনেক ডাক্তারী-কবিরাজী চিকিৎসা করে বিফল হয়ে এখানে ওষুধ খেয়ে সুস্থ আছি।
ডাঃ অতুল চন্দ্রের বাড়ীতে বিমান, সড়ক ও রেলপথে যাওয়া যায়। সড়কপথে দেশের যে কোন স্থান থেকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ, শঠিবাড়ী ও মিঠাপুকুর বাসষ্ট্যান্ডে নামতে হয়। এরপর পীরগঞ্জ, শঠিবাড়ী ও মিঠাপুকুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে ২৫ কি.মি পূর্বে মোটর সাইকেল, অটো, টেম্পু, কার, মাইক্রোবাসে করে বৈরাতিহাট দিয়ে ইমাদপুর ইউনিয়নের মাঠেরহাট থেকে জামালপুর (কুমারপাড়া) গ্রামে যাওয়া যায়। একইভাবে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে বাসযোগে উল্লেখিত ষ্ট্যান্ডে নেমে ডাক্তারের বাড়ীতে যাওয়া যায়। অপরদিকে রেলপথে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা রেলষ্টেশনে নেমে পশ্চিমে প্রায় ১৫ কি.মি পর মির্জাপুর হয়ে জামালপুর (কুমারপাড়া) গ্রামে যাওয়া যায়।
ডাঃ অতুল চন্দ্র বলেন, ৩১ বছর আগে বিনি পয়সায় হোমিও চিকিৎসা শুরু করি। ইশ্বরের কৃপায় রোগীরা ভাল হচ্ছেন। রোগীরা অসহায়, তাই তাদের সেবায় আমি আত্মনিয়োগ করেছি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগীরা ওষুধ নিতে আসে। তিনি আরও বলেন, মাঠেরহাট থেকে প্রায় ২ কি.মি রাস্তা পাকাকরণ হলে বর্ষা ও শুকনো মওসুমে রোগীরা কষ্ট পেতেন না। ইমাদপুর ইউপি আ’লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান আফছার মিয়া বলেন, ডাঃ অতুল দীর্ঘদিন ধরে হাজারো রোগীকে বিনামুল্যে হোমিও চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। তিনি একজন সাদামনের আলোকিত মানুষ। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

পুরোনো সংবাদ

স্বাস্থ্য-চিকিৎসা 5056813032480887854

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item