প্রধানমন্ত্রী বরাবর কিশোরগঞ্জ বাসির স্মারকলিপি

মোঃ শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ,(নীলফামারী)প্রতিনিধি

 নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁন্দখানা ইউনিয়নে চরকবন গ্রামে তিন ফসলা কৃষি জমিতে একটি পোল্ট্রি খামার স্থাপনকে কেন্দ্র করে খামার কর্তৃপক্ষ এবং  গ্রামবাসীর বিরোধ চলছে দীর্ঘ দিন থেকে । এঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে একাধিকবার। সংঘর্ষে চারজন পুলিশসহ  উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়। তবে দুপক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। গত ১৪ আগষ্ঠ সমস্যা সমাধানের জন্য  রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমšী¿বরাবর  স্মারকলিপি দিয়েছে এলাকাবাসী।
 গ্রামবাসীর অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, নর্থ পোল্ট্রি ফার্ম লিমিটেড নামে একটি ভুঁইফোর   প্রতিষ্টান গ্রামের চারমাথা বাজার সংলগ্ন এলাকার বৈশ্যপাড়ায় ১৫ একর জমি ক্রয় করে। পরবর্তীতে তারা (প্রতিষ্টান কতৃপক্ষ) ভূয়া দলিল তৈরী করে নিরিহ কৃষকদের কৃষি জমি অবৈধ দখলের উদ্দেশ্যে একশ একর জমির  সীমানা নির্ধারন করে  প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করে। সেখানে জোরপূর্বক বৈশ্যপাড়াটি উচ্ছেদের পায়তারা করছেন তারা।
অপরদিকে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন, এলাকাবাসীর অভিযোগ সঠিক নয়। নায্য মূল্যে জমি ক্রয় করে  সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি মহল নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ভুয়া তথ্য আওরীয়ে  প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে এলাকাবাসীকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ,ফার্ম কর্তপক্ষ  অবৈধভাবে জমি দখল করে ওই জমিতে  স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করে।  এতে বাধা দেওয়ায় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে তারা। সে মামলায় জমির  মালিক বেলাল হোসেন (৩৫) ও আব্দুল মজিদকে (৪৫) বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মামলা এবং গ্রেপ্তার আতঙ্ক এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে  গত ১২ জুলাই  ওই স্থানে খামারের সীমানা প্রাচীর নির্মান করতে আসে কতৃপক্ষ। সেখানে বাধা দিলে পুলিশ এসে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশ চার রাউন্ড টিআরসেল ও চার রাউন্ড শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে। এতে আবদাল হোসেন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশের হামলায় নারী পুরুষসহ অন্তত ৫০জন  গ্রামবাসী আহত হয়।  ঘটনার পর ওই রাতে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ওই ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফিজার রহমানসহ নামীয় ২০ জন, এবং অজ্ঞাত সংখ্যক  দুই শতাধিক গ্রামবাসীকে আসামী করা হয়।  কিশোরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক রায়হান আলী বাদি হয়ে  মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলাসহ পূর্বের একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামের ৪০ টি পাড়ার পুরুষ মানুষ পলাতক থাকার কথা উল্লেখ করেছে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে।
অপরদিকে পুলিশের অভিযোগ, সেদিন গ্রামবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে উস্কানিমুলকভাবে  পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় চার কনস্টেবল আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চার রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও চার রাউন্ড টিআরসেল নিক্ষেপ করে।
গত বুধবার (২৪ আগষ্ঠ ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটির সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ বন্ধ আছে। এলাকার অনেকে জানায় গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে কাজ বন্ধ রেখেছে কতৃপক্ষ। এসময় গ্রামের রজব আলী (৩৫) বলেন, নর্থ পোল্ট্রি ফার্ম এখানে  কিছু জমি কিনেছে । গ্রামের অনেক কৃষকের  জমি না কিনে তারা জোর পুর্বক  দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছিল। এতে বাধা দিতে গিয়ে গত ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ মাসে ওই খামারের লোকজনের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়েছিল ।এরপর ১২ জুলাই আবারো নির্মান কাজ শুরু করলে গ্রামবাসী এতে বাধা দেয় ।এসময় পুলিশ এসে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে পাল্টা আমাদেরকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশসহ ফার্ম কতৃপক্ষের  দায়ের করা চারটি মামলা চলমান আছে। এসব মামলায় আটক হয়ে অনেকে কারাবরন করেছিল।
একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৩২) বলেন, তারা বৈধভাবে জমি কিনে নির্মাণ কাজ করুক তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু তারা আমাদের জমি জোর করে দখল করছে। থানায় গেলে আমাদের মামলা নিচ্ছে না। বরং পুলিশ দখলদারের পক্ষ নিয়ে আমাদেরকে হয়রানী করছে। এখন বাধা দেয়াছাড়া আমাদের উপায় নেই। আমরা অনেক হয়রানীর শিকার হয়েছি । আর যেন হয়রানীর স্বীকার না হই সেজন্য  প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে স্মারকলিপি দিয়েছি। আশাকরি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন।
নর্থ পোল্ট্রি ফার্মের পক্ষে জমি কেনাসহ নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছেন চাঁন্দখানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান (দুলাল)। তিনি গ্রামবাসির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এলাকার একটি মহল  ফার্ম প্রতিষ্ঠা ও নির্মাণকাজে চক্রান্ত করছে। তারা এলাকার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা জমির ব্যাপারে আদালতে দুটি মামলা দায়ের করে রায়ে  হেরে গেছেন।প্রাচীন  বৈশ্যপাড়া উচ্ছেদের যে অভিযোগ তারা করেছে সেটিও ভিত্তিহীন। ওই পাড়ার ২৯ পরিবারের মধ্যে চার পরিবার তাদের জমি বিক্রী করে অন্যত্র চলে গেছে। বাকি ২৫ পরিবার সেখানেই রয়েছে। এরপরও সেটি নিয়ে কথা উঠলে আমরা ওই পাড়ার কেনা জমি বাদ রেখে সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করেছিলাম।
চলতি মাসের ১২ তারিখ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের কাছে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এসময় মন্ত্রী জেলা জজ আদালতের জিপি আলিমুদ্দিন বসুনিয়া এবং পিপি অক্ষয় কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, জেলা যুবলীগের সভাপতি শাহিদ মাহমুদকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রদান করেন।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের পক্ষে জেলা জজ আদালতের পিপি ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অক্ষয় কুমার রায় বলেন, মন্ত্রী দায়িত্ব দেওয়ার পর আমাদের হাতে কিছু কাগজপত্র এসে জমা হয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
অরদিকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ মাহমুদ বলেন, তারা এপর্যন্ত ১০টি ফাইল আমাদের কাছে জমা দিয়েছেন। সেগুলো পরীক্ষা নীরিক্ষার কাজ  চলছে।
মালিক পক্ষে পুলিশের অবস্থান নেয়ার এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু মারুফ হোসেন বলেন,‘এটি আসলে পক্ষ নেয়া না। সেদিনের ঘটনায় এলাকাবাসী ওই স্থানে যারা কাজ করছিল বা যারা জমি কিনেছেন তাদেরকে আক্রমন করতে যাচ্ছিল। আমাদের কাজটা হচ্ছে তাদেরকে ঠেকানো। এটা যদি মালিক পক্ষও এলাবাসীকে আক্রমন করতো শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করতে  আমরা তাদেরকেও ঠেকাতাম। এটা প্রিভেনটিভ মেজার, আমরা চেষ্টা করেছি যাতে দুই পক্ষের মধ্যে দন্দ না হয়। সেখানে বর্তমানে শৃঙ্খলা বজায় আছে।’
 এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কাজি হাসান আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি সেটি গুরত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7940168484049504139

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item