নেপালের তদন্ত প্রতিবেদন- মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বেপরোয়া ছিলেন ইউএস-বাংলার পাইলট

 নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস বাংলার বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বেপরোয়া ছিলেন। একইসঙ্গে অবতরণের সময় তিনি কন্ট্রোল টাওয়ারকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছিলেন। ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর এক ঘণ্টার যাত্রায় ককপিটে বসে অনবরত ধূমপান করছিলেন।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের একটি   প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে জানিয়েছে নেপালের ইংরেজি দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট।

চলতি বছরের গত ১২ মার্চ এ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ৫ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।

ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নেপালের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইলট আবিদ সুলতান বিমান অবতরণের সময় প্রচণ্ড ব্যক্তিগত মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন এবং তার ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অবতরণের মাত্র ছয় মিনিট আগেও আবিদ সুলতান জানিয়েছিলেন ‘গিয়ার ডাউন ও লক’ আছে। তবে সহকারী পাইলট পৃথুলা রশিদ চূড়ান্ত অবতরণের সময় জানিয়েছিলেন গিয়ার ডাউন ছিল না। এর প্রায় মিনিট খানেক পর পাইলট গিয়ার ডাউন করেন।

তদন্ত দল জানিয়েছে, ‘ককপিটের রেকর্ড করা অডিও শুনে ও বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি গুরুতর মানসিক চাপে ছিলেন। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় তিনি অবসন্ন ও ক্লান্ত ছিলেন। তার সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু তিনি যে নিয়মিত একজন ধূমপায়ী ছিলেন সেটা কখনই বিমান কর্তৃপক্ষকে জানাননি।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে নেপালে বিমান নিয়ে পাঠানো হয় বলে সে সময় ইউএস বাংলা বিমানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তবে সে সময় অভিযোগ অস্বীকার করে বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।

নেপাল এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন সারওয়ান রিজাল কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেছেন, বিমান অবতরণ বা উড়াল দেওয়ার সময়ে ককপিটে সহকর্মীদের মধ্যে যাবতীয় ব্যক্তিগত আলাপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, ‘ককপিটে এই নিয়ম কঠোরভাবে অনুনরণ করা হয় কারণ পাইলটকে পুরোপুরিভাবে বিমান চালনায় মনোযোগ রাখতে হয়।’

মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন প্রশাসনের নীতি অনুযায়ী, ফ্লাইটের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে স্বাভাবিকভাবে ১০ হাজার ফুটের নিচে উড্ডয়নের সময়ে বিমানের পাইলটদের সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে এমন পরিস্থিতিতে বিমান চালকদের অপ্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগ রাখতে দেখা যাওয়ায় ১৯৮১ সালে এই নিয়ম চালু করা হয়।

অডিও রেকর্ডারের তথ্যানুযায়ী, ফ্লাইটের একপর্যায়ে পাইলট ভেঙে পড়েন। বলেন, তিনি ওই নারী সহকর্মীর আচরণে খুবই আঘাত পেয়েছেন ও হতাশ হয়েছেন। আর ওই নারীই একমাত্র কারণ যার জন্য তিনি কোম্পানি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সুলতান দুর্ঘটনার একদিন আগে কোম্পানি থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন জানিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে। তবে তিনি কোনো লিখিত নথি জমা দেননি। সহকারী পাইলটের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে আরও তিন মাস কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও বলেছিলেন তিনি।

গত ১২ মার্চ সোমবার ৬৭ জন যাত্রী ও ৪ জন কেবিন ক্রু-সহ ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে। উড়োজাহাজটি নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়ে ৫১ জন নিহত হন৷ তাদের মধ্যে ৪ ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি৷ এ ঘটনায় ২০ জন প্রাণে বেঁচে ফেরেন। ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে।
তথ্যসূত্র : দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 8480045304723110753

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item