রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) ঘুনে ধরেছে ‘চৌধুরী পরিবারে’

মামুনুর রশিদ মেরাজুল, রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে ফিরে ঃ

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী রাজনীতির পরিমন্ডলে আবর্তিত ‘চৌধুরী পরিবারে’ ঘুনে ধরেছে। পরিবারটির কোন্দল উপজেলা আ’লীগে আছড়ে পড়ায় আ’লীগের স্থানীয় রাজনীতিতেও ভাটা পড়েছে। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি বর্তমান সাংসদ ডিউক চৌধুরী এবং সাধারন সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল চৌধুরী ওই পরিবারের সদস্য। সম্পর্কে তারা আপন চাচাতো ভাই। বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিষোদগার করে আসছেন চাচাতো ভাই টুটুল চৌধুরী। অপরদিকে ওই পরিবার থেকেই গত সংসদ নির্বাচনে চাচা সাবলু চৌধুরী (আ’লীগ ত্যাগী) জাপার প্রার্থী হয়েছিলেন।
সুত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর চৌধুরী পরিবার থেকে ৬ বার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে রংপুর-২ আসনটি আ’লীগের দখলে রাখে। মাঝে ৩ বার (১৫ বছর) জাপার দখলে ছিল। বদরগঞ্জের ‘চৌধুরী পরিবার’র আনিছুল হক চৌধুরী আ’লীগ থেকে ৫ বার সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী হন। গত সংসদ নির্বাচনে ‘চৌধুরী পরিবার’ থেকে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি একেএম আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক এবং তার আপন চাচা উপজেলা জাপার সভাপতি (আ’লীগ ত্যাগী) অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে চাচা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে ফাঁকা মাঠে ভাতিজা ডিউক চৌধুরী সাংসদ হন। সাংসদ হয়েই ধরাকে সরাজ্ঞান করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ডিউক। ফলে নানাবিধ কারণে বর্তমান সাংসদের সাথে তার আপন চাচাতো ভাই উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী টুটুলের বিরোধ শুরু হয়ে এখন তুঙ্গে। তাদের মধ্যে কথা তো দুরের কথা, কেউ কারো ছায়াও মাড়ান না। দ্বন্দ্ব মেটাতে কয়েক দফায় পারিবারিক ও দলীয়ভাবে বৈঠক হলেও সুরাহা হয়নি। এমনকি টুটুল চৌধুরী সভা সমাবেশে বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভাষায় মন্তব্য করছেন। চৌধুরী পরিবারে আ’লীগের পদ ভাগাভাগির কারণে এখানকার আ’লীগ ‘পরিবারতন্ত্রে’ পরিণত হয়েছে বলে দাবী করছেন ত্যাগী-বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। অপরদিকে এবারেও ওই পরিবার থেকে সাবলু চৌধুরী জাপার প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। চৌধুরী পরিবারের পারিবারিক বিরোধ, বর্তমান সাংসদের নেতিবাচক কর্মকান্ড এবং নেতাকর্মীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে পরিবারটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অপর সংসদ প্রার্থী খুজছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসনটির আ’লীগের নেতাকর্মী ও ভোটাররা গ্রহনযোগ্য নেতৃত্ব চাচ্ছে। এরমধ্যে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান এমপিকে প্রায় ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সরকার বিটু ওরফে বিটু সরকার বিজয়ী হন। তিনিই দিনদিন জনপ্রিয়তার মানদন্ডে শীর্ষে যাচ্ছেন। স্থানীয় আ’লীগ মনে করে, বিটু সরকার নেতাকর্মীদের সাথে পারষ্পারিক যোগাযোগ, অংশীদারের ভিত্তিতে আলোচনা এবং এলাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করায় জননন্দিত হচ্ছেন। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, উপজেলা আ’লীগের সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল চৌধুরী, বদরগঞ্জ পৌর মেয়র উত্তম সাহা, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. এম. শাহ নওয়াজ আলি। উল্লেখিত প্রার্থীরাও এলাকায় গনসংযোগ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারন ভোটাররা জানান, অনেক আশা করি এ্যাটকার এমপিক (ডিউক) ভোট দিছিনো। ত্যায় হামারগুল্যাক নিরাশ করিছে। বর্তমান এমপির বিষোদগার করে মনোনয়ন প্রত্যাশী আ’লীগ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল চৌধুরী বলেন, বর্তমান এমপির সাথে কোন নেতাকর্মী ও ভোটার নেই। তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়াসহ পাহাড়সম অভিযোগ রয়েছে। সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের কারণেই তার (ডিউক) সাথে আমার দ্বন্দ্ব। এতে আ’লীগে ক্ষোভ, অভিমান আর অপছন্দের ভোট বেড়েছে। ডিউকের কারণেই আমাদের পরিবারে ঘুন ধরেছে। তার বিরুদ্ধে আমি সভা-সমাবেশেও কথা বলছি। আ’লীগের মাঠজরিপে ডিউকের অবস্থা শোচনীয়। এমপি ডিউক চৌধুরী বলেন, দলে রাজনৈতিক কোন বিভেদ বা কোন্দল দেখি না, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগও নেই। পারিবারিক কারণে ছোট ভাই টুটুলের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মতভেদ থাকলেও দলের ওপর প্রভাব পড়বে না। কৃষিবিদ বিটু সরকার বলেন, বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জবাসীর হৃদয় ছোয়া ভালোবাসায় আমি রাজনীতিতে এতদুর আসতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী যাকে নৌকা প্রতীক দেবেন তার পক্ষেই থাকবো। তবে আমি নৌকা প্রতীকে সাংসদ নির্বাচিত হলে বিরোধ মিটিয়ে উপেক্ষিত নেতাকর্মীদেরকে পুনঃসংগঠিত করব।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 4519627230402964924

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item