আধুনিকতার ছোয়ায়, বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর ॥

মেহেদী হাসান উজ্জল ফুলবাড়ী দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় অধিকাংশ এলাকায় এক সময়কার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর ছিল একমাত্র অবলম্বন। কালের বির্বতনে সেই মাটির ঘরগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। শীত-গ্রীষ্ম সকল ঋতুতেই মাটির ঘর ছিল আরামদায়ক বাসস্থান। তা কালক্রমে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
ফুলবাড়ী পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী, গৌরীপাড়া, সুজাপুর, চাদপাড়া, চকচকা, বারকোনাসহ উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ানে চোখে পড়ার মতো ছিল মাটির ঘর।  ধনী-গরিব সকলেরই থাকতো এই ঘর। শীতকালে যেমন গরম অনুভব হতো তেমনি গ্রীষ্মকালেও মাটির ঘর থাকতো ঠান্ডা-শীতলতার অনভুতি। খুব সহজেই তৈরী করা যেতো এই ঘর। তার জন্য প্রয়োজন হতো এটেল দো-আঁশ মাটি।
ঘর তৈরী করার জন্য তেমন কোন খরচ হতো না। কৃষাণ-কৃষাণী ও তাদের ছেলে-মেয়েরা মিলেই অল্প কয়েক দিনেই এই ঘর তৈরী করা যেতো। যে মাটি দিয়ে তৈরী করা হতো সেই মাটিতে কোদাল দিয়ে ভালো করে কুপিয়ে ঝুর-ঝুর করে নেওয়া হতো। তারপর তার সাথে পরিমান মতো পানি মিশিয়ে থকথকে কাদা করে নেয়া হতো। তারঃপর সেই মাটি দিয়ে তৈরী করা হতো মাটির ঘর। অল্প-অল্প করে মাটি বসিয়ে ৬ফুট থেকে৭ফুট উচ্চতার পূণাঙ্গ ঘর তৈরী করতে সময় লাগতো মাত্র মাস খানেক।
ঘর তৈরী সম্পূর্ণ হলে তার উপর ছাউনি হিসেবে ব্যবহার হতো ধানের খড়। খড় দিয়ে এমনভাবে ছাউনি দেয়া যেন ঝড়-বৃষ্টি কোন আঘাতেই তেমন একটা ক্ষতি করতে পারতো না। দৌলতপুর ও রাজারামপুর ইউনিয়ান এলাকায় মাটির ঘরে আলাদা বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যেত।
যারা একটু প্রভাবশালী তাদের বাড়ী ছিল মাটির তৈরী  দু‘তালা বাড়ী। এখনো এই সকল এলাকায় কারো কারো শত বছরের মাটির তৈরী দু‘তলা বাড়ী লক্ষ্য করা যায়। মাটির ঘর অনুসন্ধান করতে গিয়ে খয়েরবাড়ী ইউনিয়ানের বারাইপাড়া গ্রামে মোঃ জোবালুর রহামনের বাড়ী এখনো শত বছরের পুরনো দোতালা মাটির ঘর দেখা যায়। কথা হয় তার সাথে।
ঐ বাড়ীর গৃহকত্রী জানান, এ্ই বাড়ী তাদের পর্ব-পুরুষদের আমলে তৈরী। যে আমলে এই বাড়ীটি তৈরী করা হয়েছে তখনকার সময়ে এই রকম দোতালা মাটির বাড়ী জমিদারীর একটি নমুনা ছিল। যার প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক থাকতো তরাই মাটির দোতালা বাড়ী বানাতো ।
ফুরবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আদিবাসি সাওতাল জনগোষ্ঠীদের মাঝে এখন ছোট ছোট মাটির ঘর দেখা যায়। অবশ্য এখন যাদের মাটির ঘর রয়েছে সেটা দরিদ্র্যতার ছাপ। সাওতালদের মাটির ঘরে বসবাস করাটা তাদের নিজস্ব একটি সংস্কৃতি হিসেবে মনে করা হয়। অনেক টাকা পয়সা থাকা সত্বেও কোন কোন সাওতাল আদিবাসী তাদের মাটির  ঘর পরির্বতন করেনি।
তেমনি দেখা যায় ফুলবাড়ী উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের বিমল মন্ডলে বাড়ীতে এখনো রয়েছে মাটির ঘর। একাধিক পাকা দালান থাকা সত্বেও তার পাশেই রয়েছে মাটির ঘর। মাটির ঘরকে তারা কখনো খাটোা চোখে দেখেনা। শুধু বিমল মন্ডলই নন,এখনো অনেক হিন্দু পরিবারেও রয়েছে মাটির ঘর। তবে পরিমান সেটা খুবই কম। মুসলমানদের মাটির বাড়ী খুব একটা চোখে পড়ারমতো নয়।
 তবে পরিবারিক আয় কম থাকলেও বাশের বেড়া,টিন অথবা ইট দিয়ে তৈরী ঘরে এখানকার মানুষ বসবাস করে থাকে। যাদের সাধ্য কম তারাও অন্তত চেষ্টা করে বাড়ীটি সুন্দর করে তৈরী কর্রা।   একসময় প্রায় বাড়ীতেই মাটির ঘর ছিল। তখনকার সময়ে ধনী-গরিব কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাছাড়া মাটির ঘরে আলাদা স্বস্থি ছিল । বর্তমানে মানুষের আধুনিক জীবন যাপনের ইচ্ছা ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাটির বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে ইটের বাড়ী-ঘর তৈরীতে ঝুকে পড়েছেন। 

পুরোনো সংবাদ

এক ঝলক 1973493086134522751

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item