পীরগঞ্জে ঈদ আনন্দ বঞ্চিত বন্যার্তরা এখনো ঘরে ফেরেনি অনেকেই!

মামুনুর রশিদ মেরাজুল পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকেঃ

পীরগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও এখনো অনেক গ্রামের বন্যার্তরা বাড়ী ঘরে ফিরতে পারেনি। বন্যায় সব ভেসে যাওয়ায় তাদের কাছে এবারের ঈদ আনন্দও ম্লান হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থরা চাষীরা ঘুরে দাঁড়াতে ধার-কর্জ করে পুনরায় আমন চারা ক্রয় করে জমিতে রোপন করছে। টাকার অভাবে অনেকে কোরবানীও দিতে পারবে বলে জানা গেছে। এবারের বন্যায় শুধু গরীব নয়, ধনীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় অনেকেই লাজলজ্জা ত্যাগ করে মুখ ঢেকে ত্রাণ নিয়েছে বলে স্থানীয় ত্রাণ কর্মীরা জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০ আগষ্ট থেকে ১৪ আগষ্ট বিরামহীন বৃষ্টি আর উজানের পানিতে পীরগঞ্জের করতোয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীটির বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে নদীপাড়ের টুকুরিয়া, বড়আলমপুর, চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নের প্রায় ৭০ টি গ্রামসহ অন্যান্য ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামে বন্যা দেখা দেয়। এতে আমন ধান, পাট, ভুট্টা, করলা, পটল, কলা, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে পচে যায়। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দেয়ায় অনেক গ্রামের মানুষ কম দামে গবাদি পশু বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এখনো হাট-বাজারে গবাদিপশুর মুল্য কম বলে জানা গেছে। ঈদের হাটে গবাদি পশুর আমদানি হলেও ক্রেতার চরম সংকট রয়েছে লে হাট ইজারাদারের সুত্রে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে উপজেলার চতরা ইউনিয়নে বন্যা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পানি কমলেও ঘাসিপুরের ডিপটি মিয়া, আমছার আলী, চন্ডীদুয়ার গড়পাড়ার আঃ সালাম মিয়া, ছোলায়মান মিয়া, আশরাফুল ইসলাম, কুমারপুরের জাফর মিয়া, কুমারপুর বাদশার পাড়ার লোকমান মিয়া, পারকুমারপুরের সৈয়তুন্নেছা বেওয়া বাড়ীতে ফেরেনি। কারণ তাদের সবার ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা অন্যের বাড়ীতে থেকেই তারা ঈদ করবে বলে জানায়। কুয়াতপুরের বুদু মিয়া, আজাহার, কুমারপুরের শফিকুল, মাটিয়ালপাড়ার কালাম, ঘাসিপুরের নুরুন্নবীসহ কয়েকজন জানান, হামার খাওয়াই সমস্যা, গরু-বকরির (ছাগল) কি করমো ! ঘাস-পাতার অভাবে গরু-বকরি গুলাও কম দামে বেঁচি জীবন বাঁচাওছি। এবার ঈদোত হামার আনন্দই নাই। ছাওয়ালগুলাক কাপড়ও কিনি দিবার পারোছি না। বন্যায় বেশ কয়েক একর নেপিয়ার ঘাসের ক্ষেত পানিতে পচে যাওয়ায় খামারীরা গরুর খাবারের অভাবে অনেকেই কমদামে গবাদিপশু বিক্রি করছে। তারা আরও বলেন, কৃষি সহায়তা না দিলে আবাদ করা যাবা নায়। চতরা হাটোত বেছনের (ধানের চারা) যে দাম। ট্যাকাও নাই, আবাদ করাও যাবা নায়। এক পোন (২০ গন্ডা) বেছনের দাম ৬’শ থেকে ৭’শ টাকায় কিনে জমি রোপন করতে হচ্ছে। এতে প্রতি একর জমিতে প্রায় ৬ হাজার টাকার চারা লাগছে। চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রব প্রধান বলেন, বন্যার শুরু থেকেই আমরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ত্রান সামগ্রী সংগ্রহ করে বন্যার্তদের মাঝে বিতরন করেছি। টুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, পিআইও এবং কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী আমার ইউনিয়নটি বন্যায় বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। কিন্তু এখানে সাহায্যের পরিমান অপ্রতুল। ঈদে অনেকেই কোরবানীও দিতে পারবে না। চাষীরা এবারের বন্যার ক্ষতি সারা বছরেও পুষিয়ে উঠতে পারবে না। চতরা ইউপি’র চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গত ২৮ আগষ্ট চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নে ত্রাণ ও কৃষি উপকরন বিতরন করেছেন। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে, এতে চাষীদেরকে আরও সহায়তা না করলে তারা কোমর সোজা করতে পারবে না।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 5301965009190835266

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item