ওরা এসোছিলো তীর ধনুক হাতে

রংপুরে আদিবাসী পরিষদের বিভাগীয় সমাবেশ



মামুনুর রশিদ মেরাজুল, পীরগঞ্জ, রংপুরঃ 
তীর ধনুক, বাঁশের লাঠি-সোডা, বাদ্যযন্ত্র আর লাল পতাকা হাতে প্রায় সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষ মিলিত হয়েছিলো জাতীয় অদিবাসী পরিষদের রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে। রোববার দুপুরে ১০ দফা দাবিতে রংপুর বিভাগের আট জেলার আদিবাসীরা বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে।
এসময় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাজেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকার আদিবাস সাঁওতালদের হত্যা, বাড়িঘরে লুটপাট, পুলিশ কর্তৃক অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে সকারের কাছে অপরাধীদের গ্রেফতারসহ দ্রুত বিচার দাবি করা হয়।
রোববার দুপুর ১টার দিকে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্ত্বর থেকে একটি বিশাল মিছিলটি বের হয়ে কাচারী বাজারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় মিছিলের স্লোগানকে সমর্থন করে নগরবাসী হাত তালি দিয়ে আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানায়।
শাপলা চত্ত্বরে কথা হয় গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা বৃদ্ধ গোসান মারাডির সাথে। এসময় তীর ধনুক হাতে গোসান বলেন, ‘হামার ঘরোত আগুল জ¦লিলো। হামাক ঘর ছাড়া করিলো। কিন্তু বিচার হলিলো না। পুলিশ হামাকে ফির ধরবার চায়। এটা অন্যায়। হামরা বিচারের জন্য আজ পথে পথে নামছি’।
এরকম অনেক আদিবাসীই মনের মধ্যে জমে থাকা দুঃখের কথা প্রকাশ করেন। তারা সবাই বিচার চান সাঁওতাল হত্যাসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনার জড়িতদের। শুধু তাই নয়, দাবি আদায় না হলে আবারো তীর ধনুক হাতে রাজপথে নামার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন লাল পতাকা হাতে বিক্ষোভে অংশ নেয়া তরুণ-তরুণীরা।
এদিকে কাচারী বাজারে সমাবেশে বক্তরা অভিযোগ করেন, সাজেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকার আদিবাস সাঁওতালদের হত্যা, বাড়িঘরে লুটপাট, পুলিশ কর্তৃক অগ্নিসংযোগের ঘটনার ২ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। তারা হামলার ঘটনায় নিহত, আহত, ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ ক্ষতিপুরন, মামলা প্রত্যাহার, হামলাকারীদের শাস্তি এবং পক্ষপাতের অভিযোগে গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও ও ওসির প্রত্যাহারের দাবি জানান।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেণের সভাপতিত্বে সমাবশে বক্তব্য রাখেন, গাইবান্ধা জেলা সিপিবি সাধারন সম্পাদক তাজুল ইসলাম, রংপুর জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারন সম্পাদক কাফি সরকার, জাতীয় আদিবাসি পরিষদ রংপুর জেলা সভাপতি মনিলাল দাস, দিনাজপুর সভাপতি শিতল মারাডি, পীরগঞ্জ সভাপতি রোঞ্জিনা সরেন, রাজশাহী বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্না, বাগমারা জমি উদ্ধার পরিষদের নেতা তিলিমন বাস্কে, আদিবাসি যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক নরেন পাহান, আদিবাসি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সভাপতি বিভূতি ভূষন মাহাতো, আদিবাসি গবেষণা পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা বাসদ সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, রংপুর মহানগর বাসদের সাধারন সম্পাদক গৌতম রায়, রংপুর জেলা বাসদের সমন্বয়ক আব্দুল কুদ্দুস, মানবাধিকার কর্মী সারা মারান্ডী, অনিক আসাদ প্রমুখ।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সংহতি জানিয়ে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, রংপুর জেলা ভূমিহীন কল্যাণ সমিতি, পীরগঞ্জ আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা, পীরগঞ্জ ছোট উজিরপুর উদীয়মান সংস্থা, পীরগঞ্জ আদিবাসী সাংস্কৃতিক সংঘ, রংপুর আদবিাসী হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার, রংপুর দোকান কর্মচারী ইউনিয়ন, রংপুর মহানগর নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, রংপুর জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। 
উল্লেখ্য, গত ০৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে আদিবাসী ও বাঙালি কৃষকদের উপর রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কর্তৃক হামলা, লুটপাট ও অগিসংযোগ, উচ্ছেদ করা হয়। পুলিশের গুলিতে তিনজন আদিবাসী (সাঁওতাল) মারা যায়। আহত হয়েছে অনেকে। আদিবাসীদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল, ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 5010290976722934665

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item