ডিমলার দুগ্ধ খামারীরা বিপাকে

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ২৬ জানুয়ারী॥
তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে নিঃস্ব ও ভুমিহীন পারিবারগুলো নিজেদের স্বাবলম্বী গড়ে তুলতে পরিবারভিত্তিক ছোট-বড় অসংখ্য দুগ্ধখামার গড়ে তুলেছে। প্রতিটি পরিবারই হয়ে উঠেছে যেন একেকটি দুগ্ধখামার। আর এ দুধই তাদের স্বপ্ন, জীবন। কিন্তু দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী পালনকারী পরিবারগুলো এখন চরম বিপাকে পড়েছে। প্রতিদিন ১৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হলেও তা বিক্রি এবং নায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এখানে দুগ্ধ শীতলীকরন (চিলিং পয়েন্ট) কেন্দ্র না থাকার ফলে দুগ্ধখামারীরা গাভী পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে । প্রতিদিন উৎপাদিত দুধ সময় মতো বিক্রি না হওয়ায় অনেক দুধ নস্ট হচ্ছে।
সুত্রমতে ডিমলায় ব্রাকের আড়ং চিলিং সেন্টার খামারীদের নিকট হতে দুগ্ধ সংগ্রহ করতো। কিন্তু গতকাল বুধবার (২৫ জানুয়ারী) সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রাক কর্তৃপক্ষ তাদের আড়ং চিলিং পয়েন্টটি ডিমলা হতে প্রত্যাহার করে তা কুড়িগ্রামে প্রতিস্থাপন করছে। ডিমলার খামারীরা সেই চিলিং সেন্টারটি পুনরায় স্থাপনের দাবি করেছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা তিস্তা নদী বিধৌত বাংলাদেশের একটি অন্যতম দুর্যোগ প্রবন এলাকা। উজান হতে  নেমে আসা পানিতে তিস্তা নদীতে অকাল বন্যা দেখা দেয়। বন্যার ফলে চরের পতিত জমি এবং আবাদী জমি পানির নিচে ডুবে যায় এবং ভাঙ্গনের সৃস্টি হয়। এক সময় সবুজ ঘাসের সমারহ ঘটে। যাদের তিস্তা নদী ভাঙ্গ গড়ায় এক সময় যাদের গলা ভরা ধান পুকুর ভরা মাছ ছিল তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ে।  এ পরিস্থিতিতে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে এখানকার বেশীরভাগ মানুষ গাভী পালনে উৎসাহিত হয়ে উঠেন।  ফলে উপজেলাটিতে ছোট-বড় ৯২টি বিদেশী জাতের গরুর খামার গড়ে উঠে।

 সরেজমিনে গেলে ডিমলার দুগ্ধখামারীদের মধ্যে খগাখরিবাড়ি মেম্বারপাড়ার মেরিনা বেগম  জানায় তিনি দুইটি বিদেশী গাভী পালন করছেন। প্রতিদিন তার দুধ উৎপাদন হয় ৯ হতে ১১ লিটার। বাবুরহাট এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন তার খামারে ১৯টি বিদেশী গাভী হতে প্রতিদিন ৯০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে। দক্ষিন তিতপাড়ার  আজিজুল হকের ছেলে সুমন জানান তার খামারের ১৭ টি গাভীর প্রতিদিন ১১০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এখন চিলিং সেন্টার উঠে যাওয়ায় সুমন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। শুরু সুমন হয় এখানে সকল খামারীর একই অবস্থায়। 
এ রকম আরো অনেক দুগ্ধখামারী বিভিন্ন পরিবারের হিসাবে দুগ্ধ উৎপাদনের কথা জানায়। তারা সকলে বলেন আমরা তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে এক সময় নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলাম।
বেসরকারিভাবে ঋণের মাধ্যমে গাভী পালনে পরিবারভিক্তিক ভাবে আমর সকলে খামার গড়ে তুলি। এতে অনেকখানী স্বাবলম্বী হয়ে উঠি। ফলে গাভীর দুধ বেঁচে আমরা দুধের জীবনে দাঁড়িয়ে যাই। এখন প্রচুর দুধ উৎপাদন করতে গিয়ে আমরা দুধের মরনের কবলে পড়ছি। কারন  এখন উৎপাদিত গাভীর দুধ বাজারজাত করতে পারছিনা। স্থানী হাট বাজারে হোটেল ও বাসাবাড়িতে প্রতিদিন ১৫ হাজারের উপর উৎপাদিক দুধ বিক্রি হয় না । আবার দামও কম। লিটার প্রতি ২০ হতে ২৫ টাকায় দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে গাভী পালনের খরচ উঠেনা। এ ছাড়া উৎপাদিত দুধ বিক্রি না হওয়ায় অসংখ্য দুধ নস্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা জানায় ডিমলায় সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে কোন দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্র (চিলিং পয়েন্ট) না থাকার  কারনে দুধের ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারী পর্যায়ে খামারীদের উৎসাহিত করার জন্য ঋণের ব্যবস্থা থাকলেও তা খামারীদের দোর গোড়ায় পৌছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।  

উপজেলা প্রানী সম্পদের এক হিসাব অনুসারে দেখা যায় ডিমলায় গবাদি পশুর সংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার ৩৫০টি।  দৈনিক দুধ উৎপাদন হচ্ছে পনেরো হাজার ২০০ লিটার। বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
ব্রাকের আড়ং ডেইরি চিলিং সেন্টারের ডিমলা উপজেলার ইনচার্জ মিঠুন রায় বলেন ২০০১ সাথে সেন্টারটি স্থাপন করে দীর্ঘ ১৬ বছর চালু ছিল। এখন কর্তৃপক্ষ ডিমলার চিলিং সেন্টারটি  স্থানান্তারিত করেছে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার শিংঙ্গের ডাবরী হাট সংলগ্ন এলাকায়।

এ ব্যাপারে কথা হয় ডিমলা উপজেলার পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মনের সঙ্গে। তিনি জানান বর্তমান সরকারের সহযোগীতায় পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্প ডিমলা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের খামারীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। খামারীরা যেন দুধের ন্যায্য মুল্য পায় এবং সরকারের সুযোগ সুবিধাগুলো নিতে পারে এজন্য গত বছরের ২৯ অক্টোবর মিল্ক ভিটা লিমিটেডের রংপুর চিলিং পয়েন্টের  সিনিয়র ব্যবস্থাপক ডাঃ শ্যামল কুমার রায়ের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল ডিমলা উপজেলা পরিদর্শন করেন। তারা সকলে  এখানে সরকারী উদ্যোগে একটি চিলিং পয়েন্ট স্থাপন করতে উপরে সুপারিশনামা প্রেরন করেন। কিন্তু অদ্যাবদী কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

তিনি আরো জানান বাংলাদেশে যেহেতু ৭০ভাগ শিশু খাদ্য বিশেষ করে দুধ বাহিরের দেশ থেকে আমদানী করতে হয়। সেহেতু এখানকার খামারীদের যদি উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেয়া যায় তাহলে দুধের জন্য সম্ভাবনাময় একটি এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। পাশাপাশি তিস্তার চরাঞ্চলের দুগ্ধ খামারীদের দুধের সঠিক মুল্য নিশ্চিত করলে ব্যাপকভাবে গাভী পালন করবে দরিদ্র ও হতদরিদ্র নারীরা। তিস্তার চলাঞ্চলের পরিত্যাক্ত জমিতে গাভী পালন করে অনেক হতদরিদ্র পরিবারগুলো স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।#

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3886905360556193171

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item