রংপুরাঞ্চলে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর অবিরাম সংগ্রাম

হাজী মারুফ


দিনের শেষ ভাগের রোদে হয়তো একটু বেশিই তাপ ছিল। আর সেই তাপে পুড়ে জমিতে দ্বিতীয় বারের মতো আমন ধানের চারা লাগাচ্ছিলেন চাষী রাকিব হোসেন। রোদের তাপে সাদা শরির লাল হয়ে গেছে তার।
 মাটিতে ধানের চারা লাগাতে লাগাতে তার শরীরের দিয়ে অঝোরে ঝরছিল ঘাম। মাথার ঘাম পায়ে ফেলা এই চাষীদের ধানের চালের দিকে যে পুরো বাংলাদেশ তাকিয়ে, সেই ভাবনাটাও ভুলে যান তিনি।
রংপুরাঞ্চলের  কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার কুর্শা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাকিব হোসেনের পরিশ্রমের এ দৃশ্য।
তবে শুধু এ এলাকায়ই নয়, গত ১৬দিন ধরে সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলার চাষীরা দ্বিতীয় বারের মতো আমন ধান লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
 গত মাসের শেষ দিকে অতিবৃষ্টি আর উজানের ঢলে লালমনিরহাট, গাইবান্ধা নীলফামারী কুড়িগ্রামসহ রংপুরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর জমির রোপা আমন ধান প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়। এতে কয়েকশ’ কোটি টাকার তির বোঝা বইতে হচ্ছে ধান চাষীদের।
 ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরই নামতে শুরু করে জমির পানি। তাই বড় ধরনের লোকসানের বোঝা কাঁধে নিয়েই চাষীরা দ্বিতীয় বারের মতো ধান চাষ শুরু করেছেন।
প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে রাকিব হোসেনের । দ্বিতীয় বারের মতো ধান লাগাচ্ছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধান না লাগালে আমরাই খামু কী, আর দেশের মানুষই খাবো কী!
মাঠ পর্যায়ে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধানের চারা লাগাতে ব্যস্ত চাষীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা পরিশ্রম করে ধানের চারা লাগাচ্ছেন তারা। তারা বলছেন, যতো দ্রুত ধান লাগানো যায়, ততোই ভালো।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী এলাকার চরাঞ্চলে বেশ বড় ধরনের তি হয়েছে আমন চাষীদের। বড়বাড়ী ইউনিয়নের ইউনিয়নের তিস্তা চরে প্রায় এক একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে বর্গাচাষী আমিনুলের।
 তিনি জানান, অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। দ্বিতীয়বারের মতো ধান চাষ করার খরচ যোগাতে পারবেন না বলে আর ঝুঁকি নেননি। এবার বছরের খোরাক মেটাতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হবে বলেও জানান।
 গাইবান্ধা জেলার গোদার হাট এলাকার ধান চাষী জাহাঙ্গীর কবির  প্রায় আট বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি জানান, উপায় না পেয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ধান লাগাতে হচ্ছে। কেননা এ আমন ধানই যে তাদের শেষ ভরসা।
 কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান, কৃষকরা সারা বছরই সংগ্রাম করেন এবং যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করে সোনার ফসল ফলান।
 তিনি জানান, অতিবৃষ্টি আর উজানের ঢলে যে মারাত্মক তি হয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে এ অঞ্চলের কৃষকেরা সংগ্রামী। তারা ঘুরে দাঁড়াবেন।
 তবে দ্বিতীয় বারের মতো ধান লাগাতে গিয়ে চাষীদের সবচেয়ে বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে ধানের চারা সংগ্রহ করতে গিয়ে। অতান্ত ১০০ জন কৃষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কৃষি অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন কিনা, উত্তরে ৯০ জনই বলেছেন, কোনো সহযোগিতা পাননি তারা।
 আর বাকি দশজন বলেছেন, নাম লিখে গেছে, মাঝে মধ্যে দু’য়েক কেজি সরিষা অথবা অন্য শস্যবীজ দিয়ে সহযোগিতা করেন।
 এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। চাষীরা যদি কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন, তাহলে অবশ্যই চারা পাওয়ার কথা। কেননা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি চারা মজুদ রয়েছে।
 চাষীরা জানান, এ সময়ে ধানের বয়স সাধারণত দুই মাস পার হয়ে যায়। মাঠে দেখা যায়, শুধু সবুজের জয়গান। কিন্তু এবার শুধু উঁচু জমিতেই সবুজের ধান, আর নিচু জমিতে সব হলুদ হয়ে গেছে।েএকই সঙ্গে পানিতে প্লাবিত নষ্ট হয়ে যাওয়ার জমির ধানের রঙ্ও হলুদ, নতুন করে যে চারা লাগানো হচ্ছে সেই চারার রঙও হলুদ।
 কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর অফিস সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম জেলায় মোট ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে ৫৩ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৩৭১ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণই নষ্ট হয়ে গেছে। এখান থেকে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ১৪৫মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হতো। যার বাজার মূল্য ৩২৫ কোটি ৯১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
 আর শাকসবজির তি হয়েছে ৫৩৮ হেক্টর জমির। যার আর্থিক মূল্য পাঁচ কোটি ছয় লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এ জেলায় মোট তিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দুই লাখ ৪৮ হাজার ২২৪ জন।
 এদিকে রংপুর কৃষি অঞ্চলে (রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট) মোট ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৬৪১ হেক্টর। এরমধ্যে সম্পূর্ণ তি হয়েছে ৮২ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমির ফসল। যার আর্থিক মূল্য ৭৬৫ কোটি চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
 আর তিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা ছয় লাখ সাত হাজার ৮৯৬ জন। এ পরিসংখ্যান গত মাসের। নতুন করে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান করা হচ্ছে। এতে তির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 4344158649311428066

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item