রংপুর নগরীর ফোরলেন সড়কের উদ্বোধনের ১ মাস যেতে না যেতেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে

হাজী মারুফ


গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গত ১৪ জুলাই রংপুরে ফোরলেন সড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুরের বধূমাতা উদ্বোধনের সময় ফোরলেন সড়ককে রংপুরবাসীর জন্য ঈদ উপহার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু সেই বহুল প্রত্যাশিত ১৬ কিলোমিটারব্যাপী ফোরলেন সড়কের উদ্বোধনের ১ মাস যেতে না যেতেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি করে পাথরগুলো তুলে ফেলছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ফলে গর্তের সৃষ্টি হওয়া এ ফোরলেন সড়কে যানবাহন চলাচলে বাড়ছে দুর্ভোগ ও সমস্যা। প্রধানমন্ত্রীর এ উপহারের বেহাল দেখে এখন রংপুরের সর্বত্র চলছে সমালোচনা।
এদিকে, কার্পেটিং উঠে যাওয়া ফোরলেন সড়কটি মেরামতের জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছে সওজ বিভাগ। সরেজমিন তদন্তে কাজের অনিময় ও দুর্নীতির নমুনা নিয়ে গেছেন সওজের বিশেষজ্ঞ গবেষক দল।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ৬৫ ফিট প্রশস্থের সড়ক নির্মাণে জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে চার দফা সময় পিছিয়ে রংপুর মহানগরীর ভিতর অংশে ৮ দশমিক ২৪ ও বাইপাসে ৮ মোট ১৬ দশমিক ২৪ কিলোমিটার এই চারলেন সড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এর মধ্যে মহানগরীর ভেতরের অংশের ৮ কিলোমিটার জুড়ে ড্রেন নির্মাণের কথা থাকলেও অর্ধেক কাজ এখনো শেষ করা হয়নি।
২০১০ সালের তাৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ১২৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কটির উদ্বোধন করেছিলেন। এই ফোরলেন সড়কের জন্য সরকার ভূমি হুকুম দখল করতে ভূমি মালিকদের ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা রংপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রদান করে। এছাড়াও বিদ্যুতের ও টেলিফোনের খুটি অপসারণ, ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ এবং ক্যাবল লাইন সরাতে সরকার স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে আরো প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বাকি প্রায় ৮১ কোটি টাকা ব্যয় হয় সড়ক নির্মাণ ও আনুসাঙ্গিক কাজের জন্য।
সড়ক নির্মাণ কাজে অর্থ যোগান দেন জাপান ডেড ক্যান্সেলেশন ফান্ড ৪০ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকার ৮৬ কোটি টাকা। তিনটি প্যাকেজে এই ফোরলেন সড়ক নির্মাণ করা হয়। মোট চার দফায় সময় ও অর্থ বাড়িয়ে এ সড়কটি নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ১৪০ কোটি টাকায়। এরপর তড়িঘড়ি করে গত ঈদের আগে গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফোরলেন সড়কের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি এটিকে রংপুরবাসীর জন্য ঈদের উপহার হিসেবে আখ্যা দেন।
গতকাল সরেজমিনে রাস্তটির রংপুর বাস টারমিনাল থেকে মডার্ন মোড় সরেজমিন দেখা গেছে, নিম্নমানের কাজের কারণে সড়কটির কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেগুলো পাথর তুলে ফেলছে। এতে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। চলাচলে বাড়ছে অসুবিধা। যাত্রীরা পড়ছে দুর্ভোগে।
বহুল প্রত্যাশিত এ সড়ক নির্মাণ কাজ নিম্নমানের হওয়ায় ফুঁসে উঠেছেন রংপুরের সচেতন মহলও। উদ্ভুত এ পরিস্থিতিতে গত ১১ আগস্ট তিগ্রস্থ সড়কটির পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহ করেন সওজের রোড রিসার্চ ল্যাবরেটরির নির্বাহী প্রকৌশলী সালমা আক্তার ও সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব এলাহী। এ সময় রংপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. আব্দুল্লাহ্ আল মামুনসহ সওজের কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন। তারা পরিদর্শন এবং নমুনা সংগ্রহ করে ােভ প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, বাস টারমিনাল থেকে মডার্ন পর্যন্ত ২ টি গ্রুপে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দে কাজ পান মেসার্স মাসুমা বেগম নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি গত ফেব্রুয়ারিতে কাজ সম্পন্ন করে।
২০১০ সালে রাস্তটির ওই অংশটুকু ডিএনকো নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। তারা ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত রেখে চলে যায়। ওই ঘটনায় সওজ কর্তৃপ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির জরিমানা করে।
এ ব্যাপারে সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মমিনুর রহমান জানান, রাস্তার বিভিন্ন স্থানে তিগ্রস্ত হওয়ায় পাথরগুলো তুলে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টি চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে জানানো হয়েছে।
রংপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বাংলামেইলকে জানান, ফোরলেন সড়কটি তিগ্রস্ত হওয়ার পরই ঢাকায় আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মেসার্স মাসুমা বেগম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপকে সড়কটি মেরামত করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সড়কের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড এক বছর থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাস্তাটি দেখভাল করার জন্য বিধি মোতাবেক দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি রাস্তাটির উল্লেখিত অংশে কেন এমন হলো তা জানার জন্য গবেষণা টিম এসে নমুনা নিয়ে গেছেন।
এদিকে সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে শুরু করে কারমাইকেল কলেজ গেট পর্যন্ত এখনো বিভিন্ন অংশে ড্রেনেজ কাজ শুরুই করা হয়নি। জাহাজ কোম্পানি থেকে কারমাইকেল কলেজগেট পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। এছাড়াও রংপুর মহানগরীর অন্যান্য এলাকাতেও ফোরলেন সড়কের ড্রেনের কাজ শুরু করা হয়নি। অবশ্য এ জন্য সড়ক ও জপদ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খোড়া যুক্তি দেখিয়েছেন।
এদিকে, ফোরলেন সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অল্পবৃষ্টিতেই মূল সড়কে হাঁটু পানি জমছে সামান্য বৃষ্টিতে। এতে করে নগরবাসীর দুর্ভোগ যেমন বাড়ছে তেমনি পানি জমে থাকায় রাস্তার তিও হচ্ছে।
কলেজ রোডের আব্দুস সালাম জানালেন, সড়কটি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তার অবসান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করায় আমরা খুশি। কিন্তু এটি দশা দেখে মনে হচ্ছে আমরা এ কেমন ঈদ উপহার পেলাম!
রংপুর সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রকৌশলী এ কিউ এম একরামুল্লা বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা তো শতভাগ কাজ পাই না নানা কারণে। তবুও রংপুর ফোরলেন সড়কের কাজ অনেক ভালো হয়েছে।’
ড্রেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ চলছে, এখনো রাস্তার দু’পাশে জায়গা মালিকরা জমি ছেড়ে দেয়নি সে কারণে ড্রেনের কাজ শেষ করা যায়নি। দ্রুত কাজ শেষ হবে বলেও দাবি করেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের এ শীর্ষ কর্মকর্তার।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 1167735248091241749

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item