স্বামীর অভিনয় ধরা খেলো শারমিন বিষপান করেনি-হয়েছে যৌতুকের বলি


নীলফামারী প্রতিনিধি প্রথমে স্বামীর ভাবখানা এমনি ছিল অভিমান করে তার স্ত্রী হাবিবা আক্তার শারমিন (১৯) বিষপান করেছে। তাকে বাঁচাতে নিয়েও এসেছিল নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থা  খারাপ হওয়ায় শারমিনকে জরুরী ভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  স্থানান্তরিত করার জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দেন। খবর পেয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে ছুটে আসেন শারমিনের বাবা মা ও আত্মীয়স্বজন। নীলফামারী হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে শারমিনকে উঠিয়ে স্বামী মোমিনুর সহ শারমিনের বাবাও উঠে বসেন এ্যাম্বুলেন্সে। স্ত্রীর জন্য কান্না করছে স্বামী। না জানি স্ত্রীকে কতইনা ভালবাসে। 
মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে এ্যাম্বুলেন্স। নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড এলাকা এ্যাম্বুলেন্সটি ক্রস করছিল ঠিক সে সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শারমিন। স্ত্রীর মৃত্যুতে হাউমাউ করে কেঁদেও উঠেন স্বামী। এ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা শারমিনের বাবা হাবিল শেখ কাঁদছেন। এ্যাম্বুলেন্সুটি পুনরায় সদর জেনারেল হাসপাতালের দিকে ফেরার জন্য রাস্তায় ঘোরানো হচ্ছিল, সে সময় সুযোগ বুঝে এ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমেই পালিয়ে যায় স্বামী। জামাই পালিয়ে যাওয়ায় রহস্য দানা বাধে শারমিনের বাবার মনে। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে মেয়ের লাশ ফিরে এনে তিনি নীলফামারী থানায় বিষয়টি অবগত করেন। পুলিশ ছুটে এলো। সব কিছু জানার পর পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনায় থানা পুলিশ মাঠে নেমে পড়লো। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মাথায় পুলিশের জালে আটকে পড়লো শারমিনের স্বামী দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার সীমানায়। সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হলো শারমিনের শ্বশুড় লাল মামুদকে। তার পরের কাহিনী মর্মান্তিক। যৌতুকের বকেয়া ৪০ হাজার টাকার জন্য বাবা ছেলে মিলে শারমিনের উপর প্রচন্ডভাবে শারিরিক নির্যাতন চালায়। তার অবস্থা আশংঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসে কাহিনী সাজায় স্বামীর উপর অভিমান করে শারমিন বিষপান করেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে বাবা ছেলে সব কিছু স্বীকার করে ফেলে। এরপর পুলিশ তাদের বাড়ি হতে উদ্ধার করে শারমিনকে নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত খাটের রোলার, মাথায় আঘাত করা একটি স্টিলের বড় মগ। এ ভাবে বেরিয়ে আসে শারমিন বিষপান করেনি- হয়েছে যৌতুকের বলি। 
আজ শুক্রবার(১২ জুন/২০২০) বেলা ১১টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম,পিপিএম) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, গত বুধবার(১০ জুন) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবা ও ছেলে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত  ছিলেন অতিরিক্ত সুপার(প্রশাসন) আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক পাল, নীলফামারী সদর থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মাহমুদ-উন নবী ও ডিআইও-১ লাইছুর রহমান সহ প্রমুখ। 
সুত্র মতে এ ঘটনায় শারমিনের বাবা হাবিল শেখ বাদী হয়ে ১০ জুন নীলফামারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ১১(ক)/৩০ দায়ের করেন। এদিন জেলার মর্গে শারমিনের লাশের ময়না তদন্ত করা হয়। লাশের সুরতহাল রির্পোটে শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন  রয়েছে। 
উল্লেখ যে, দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে শারমিনের বাবার বাড়ি। এক বছর আগে নীলফামারী সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের সাবুল্লিপাড়া গ্রামে মোমিনুলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের সময় যৌতুক ঠিক হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। শারমিনের বাবা নগদ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করলেও বাকী ৪০ হাজার টাকা প্রদান করতে পারেননি। দীর্ঘ দিনেও ৪০ হাজার টাকা না পাওয়ায় স্বামী ও শ্বশুড় শারমিনের উপর নির্যাতন শুরু করে। এই নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ঘটনার দিন ৯ জুন দুপুর ১২টার দিকে। সে সময় শারমিনের হাত পা বেধে ছেলে ও বাবা শারিরিক নির্যাতন চালায় শারমিনের শরীরে। তদন্তে বেরিয়ে আসে ওই নির্যাতনই শারমিনের মৃত্যুর প্রধান কারন। পুলিশ সুপার জানান মামলার তদন্ত ও স্বীকারোক্তি সব হাতে। ময়না তদন্তের রির্পোট হাতে পেলেই আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে প্রদান করা হবে

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3044505854020268884

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item