অবিশ্বাস্য! পার্বতীপুরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাতের লেখা একই!

এম এ আলম বাবলু, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
অসম্ভবকে সম্ভব করাও সম্ভব। যদি প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকে। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাতের লেখা কি একই রকম হওয়া সম্ভব? যদি সম্ভব হয়ে থাকে তবে কি ধরনে পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন? প্রবাদ আছে নিত কলমে হাত সই। সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতের লেখা একই রকম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে পেরে কৌতুহল বসতঃ ঘুরে আসা। স্বচোখে দেখলাম সেই সাথে শুনলাম তাদের অভিজ্ঞতার কথাও। এমন একটি প্রতিষ্ঠান “চেতনা বিকাশ মডেল স্কুল”। প্রতিষ্ঠানটি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর শহর থেকে ১০ কিঃমিঃ দূরে উপজেলার ৮ নং হাবড়া ইউনিয়নের ঘনেশ্যামপুর ফুলেঘাট বাজার নামক এলাকায়। মনোরম পরিবেশ দেখে হিংসে হচ্ছিল আবার ইচ্ছাও জেগে ওঠলো। যদি ফিরে পেতাম আমার শৈশব জীবন। তবে আমার হাতের লেখাও ওদের মতো একই রকমের হতো।
গত ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে মাত্র ২৮জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় বিদ্যালয়টির পথচলা। সকাল ৮টা ৩০মিনিট থেকে বেলা ১১টা এবং বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১০জন অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা ২ শিফ্টে বিদ্যালয়ের ২শ’ ২৮জন শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম সাফল্যের সাথে চালিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ইতোমধ্যে সাফল্যের সাথে ভালো ফলাফল অর্জন করে লাভ করেছে পরিচিতি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হলেও পিছিয়ে নেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশ কার্যক্রমের। গতবছর ২০১৮ খ্রিঃ বিদ্যালয়টির ১৮জন শিক্ষার্র্র্থী পিইসিই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ এ প্লাস ফলাফল অর্জন করে।
যা নবনির্মিত এ প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত প্রচার ও পরিচয় ঘটাতে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, নবাগত যে কোন ব্যক্তিকেই অবাক বনে যাওয়ার মতোমতো বেশ কিছু উদ্ভাবনও রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। এর মধ্যে অন্যতম প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঞ্চয় ব্যাংক, শিক্ষক- শিক্ষার্থী সকলের অভিন্ন হাতের লেখা, শিক্ষার্থীদের নিয়ম শৃঙ্খলাও এর বাইরে নয়। শিক্ষার্থীদের মিতব্যয়ী করে গড়ে তোলার লক্ষে ও সঞ্চয়ী মনা করতে শিশুকাল থেকেই টিফিনের টাকা বাচিয়ে জমানোর জন্য বিদ্যালয় থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্লাষ্টিকে তৈরী ব্যাংক সরবরাহ করা হয়। হাতের লেখা সুন্দর করতে প্রতি তিন মাস অন্তর বাহির থেকে প্রশিক্ষক এনে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ৭দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাই আকষ্মি¥ক একাধিক পরীক্ষার খাতা দেখলে, নাম রোল দেখা ছাড়া শিক্ষার্থী নির্ণয় প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। এর কারণ প্রত্যেকের লেখাই একই রকমের। এছাড়াও ছুটির ঘন্টা বাজলে ব্যাগ কাঁধে সাইকেল হাতে বিদ্যালয় থেকে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বের হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। ১শ’ মিটারের মধ্যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে শুধুমাত্র অবকাঠামোগত পার্থক্য থাকলেও ফলাফলের দিক থেকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে এ বিদ্যালয়টি অনেকগুনে এগিয়ে আছে বলে জানালেন স্থানীয়রা। চেতনা বিকাশ মডেল স্কুলকে একটি আদর্শ স্কুল হিসেবে চিহ্নিত করে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসব কার্যক্রম চালু করার দাবী স্থানীয়দের। তবেই প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর শতভাগ পাশের পাশাপাশি শতভাগ এ প্লাস পাওয়া সম্ভব। এজন্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তারা।
বিদ্যালয়ের পরিচালক এনামুল হক বলেন, পার্বতীপুর উপজেলায় এটি সম্পূর্ণ একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। শিশু থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত অর্থাৎ আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থী সকলেরই হাতের লেখা একই রকম। চেতনা বিকাশ মডেল স্কুল উপজেলার একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে শতভাগ শিক্ষার্থী গত বছর পিইসিই পরিক্ষায় “এ” প্লাস পেয়েছে। 
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও হাবড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান সরকার বলেন, অনেক ব্যস্ততার মাঝেও বিদ্যালয়ে সময় দেয়ার চেষ্টা করি। সম্মেলিত প্রচেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যে উত্তরাঞ্চল তথা সারাদেশে একটি ব্যতিক্রমী স্কুল হিসেবে পরিচিত করার লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিদ্যালয়টির সম্পর্কে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদের কার্যক্রম সমন্ধে জেনেছি। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। সরকারী বিধিমোতাবেক আমরা তাদের বিভিন্ন সহযোগীতা করে আসছি।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 3051776180519994158

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item