সৈয়দপুরে গণপিটুনিতে কুখ্যাত চোর নিহত

 তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাড়িতে সিঁধ কেটে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে এক কুখ্যাত চোর নিহত হয়েছে। নিহতের নাম জাবেদ আলী (৩৮)। উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলী পিয়নপাড়ায় গতকাল (মঙ্গলবার)  গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার ২ নম্বর কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের উত্তর কুমারগাড়ীর পেশায় গাছি মো. জিকরুল হক। তাঁর একমাত্র ছেলে জাবেদ আলী। সে (জাবেদ) এলাকার একজন চিহিৃত কূখ্যাত চোর। ঘটনার দিন গত সোমবার দিবাগত গভীর রাতে চোর জাবেদ তাঁর সঙ্গীয় চোরের দল নিয়ে একই উপজেলার ৪ নম্বর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলী পিয়নপাড়ায় চুরি করতে যায়। প্রথমে সে উল্লিখিত এলাকার অনীল চন্দ্র রায়ের ছেলে অমল চন্দ্র রায়ের বাড়ির ঘরে সিঁধ (গর্ত) করে। পরবর্তীতে পাশের স্বগীয় বাবু চন্দ্র রায়ের ছেলে বীরেন চন্দ্র রায় ওরফে ভোদা’র বসত ঘরে সিঁধ কাটে। এ সময় পাশের বাড়ির লোকজন চোরের উপস্থিতি টের পেয়ে চিৎকার করে এবং চোর জাবেদকে ঘটনাস্থলে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরবর্তীতে চোর আটকের ঘটনাটি অল্প সময়ে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আশপাশের  শত শত লোকজন বীরেন চন্দ্র রায়ের বাড়ি এলাকায় জড়ো হয়ে চোর জাবেদ এলোপাতাড়ি বেদম মারপিট করতে থাকেন। মারপিটের এক পর্যায়ে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় লোকজন চোর জাবেদকে মারাত্মক আহত অবস্থায় ফেলে রেখে সটকে পড়েন। পরে খবর পেয়ে বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ আলী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের দফাদার মো. সাইয়াকুল ইসলামকে ঘটনাটি জানায়। এরপর দফাদার সাইয়াকুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের  গ্রাম পুলিশ মো. রেজাউল ইসলামে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। পরে তারা মারাত্মক আহত অবস্থায় চোর জাবেদকে উদ্ধার করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যোগে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে (হাসপাতালে) জরুরী বিভাগে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে সৈয়দপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর আটক চোর জাবেদ বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। পরে সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুস্ ছোবহান  নিহতের স্বজনদের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।
এদিকে, গণপিটুনি নিহত চোরের পরিবারের লোকজন তাঁর মৃত্যু খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানায় এবং পরে হাসপাতালে ছুঁটে যান। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের সেখানকার গগণবিদারী কান্নায়  গোটা এলাকার আকাশ- বাতাস ভারি হয়ে উঠে। এ সময় তাঁর স্ত্রী মোছা. শিরিনা বেগম  সৈয়দপুর থানা চত্বরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, এখন আমার তিন ছেলে মেয়ের কি হবে ? কাকে তারা বাবা বলেন ডাকবে ? কে আমার সন্তাদের খাবাবেন ? আমার এখন কি হবে ?
 এ সময় তাদের কান্না ও আহাজারি দেখে সেখানে উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।  এ সময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ হয়।
 নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জাবেদের দুই মেয়ে এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার বড় মেয়ে মিতু কুমারগাড়ী দাখিল মাদসায়া ৯ম শ্রেণীতে, ছেলে শাকিল সিপাইগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে এবং ছোট মেয়ে সাকিবা কুমারগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তয় শ্রেণীতে পড়ে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজাহান পাশা জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, সিঁধ কেটে চুরি সময় লোকজন ধরে গণপিটুনি দেয়। আর এতে  চোর জাবেদের মৃত্যু হয়েছে।
এ রিপোর্ট পাঠানো  লেখা (বিকেল  সাড়ে ৪টা ) পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।
থানা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, জাবেদের নামে সৈয়দপুর ও নীলফামারী থানায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চুরি,বাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে।

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item