ফলোআপ-সৈয়দপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প – ২-,রাতের আধাঁরে ভাঙা খুঁটি অপসারন॥ ডিসির প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন


 তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প - ২ আওতায় ঘর তৈরিতে পোঁতা ভাঙা আরসিসি পিলারগুলো (খুঁটি) রাতে আধাঁরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গভীর পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) সভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বজলুর রশীদ নিজেই উপজেলার ৫ নম্বর খাতামধুপুর ইউনিয়নের উপস্থিত থেকে লোকজন দিয়ে সুবিধাভোগীদের বাড়িতে স্থাপন করা খুঁটিগুলো সরিয়ে ফেলেন। ভাঙা খুঁটিগুলো সরিয়ে সেখানে ভাল খুঁটি পোঁতা হয়েছে। এছাড়াও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে পিলার পরিবহনের নেয়া টাকাও গতকাল শনিবার সকালে সুবিধাভোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরত দেয়া হয়। প্রকল্পের কাজে লাগানো মিস্ত্রির লোক নিজেরা গিয়ে ওই টাকা ফেরত দেন। এদিকে, নীলফামারী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ খালেদ রহীম গতকাল শনিবার সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাস্তবায়িত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীন ‘যার জমি আছে ঘর নেই,তাঁর নিজ জমিতে ঘর নির্মার্ণ’ কাজ সরিজমিনে পরিদর্শন করেছেন। তার পরিদর্শনকালে পিআইসির  ও সভাপতি সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বজলুর রশীদ, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মোফাখখারুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী এফ এ এম রায়হানুল ইসলাম,খাতামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জুয়েল চৌধুরী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, শনিবার সরেজমিনে উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের কৈপাড়া,খামাতপাড়া,মুশরুত ধুলিয়া সরকারপাড়া ও পাইকারপাড়া যাওয়া হয়। সরকারপাড়া গিয়ে দেখা যায় সুবিধাভোগী রমজান আলীর বাড়িতে ঘর তৈরি জন্য পোঁতা ভাঙা খুঁটি (বাঁশ দিয়ে বেঁেধ রাখা  ) আর নেই। সেগুলো সরিয়ে ভাল পিলার লাগানো হয়েছে। রমজান আলী ছেলে আতিকুর রহমান বলেন, শুক্রবার রাতে  মিস্ত্রির লোকজন এসে ভাঙা খুঁটি তুলে নিয়ে গেছে। পরে সেখানে ভাল খুঁটি পুঁতে দেয় তারা। তিনি এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
একই গ্রামের পাইকারপাড়ার উপকারভোগী আজহারুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় ভাঙা খুঁটিও রাতে আধাঁরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে  দেখা যায় আজহারুল ইসলামের ঘরের পাঁচ ইঞ্চি ভিত্তির গাঁধুনি করা হয়েছে। ঘরের ভিত্তির মাটি সমান্তরালের কাজ করছিলেন সুবিধাভোগী আজহারুল ইসলামের ছেলে মো. এরশাদ। তিনি জানান, গত শুক্রবার রাতে ঘরে জন্য পোঁতা ভাঙা পিলার সরিয়ে নেয় রাজ মিস্ত্রির লোকজন। তবে তিনি মিস্ত্রীর নাম ঠিকানা বলতে পারেননি।
  একই ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কৈপাড়ায় গিয়ে কথা হয় সুবিধাভোগী নেবরু ওরফে সতীশ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ইন্দু বালার সঙ্গে। তিনি বলেন, মিস্ত্রির লোকজন সকালে এসে বালুর জন্য যে টাকা নিয়েছিলেন তা ফেরত দিয়ে গেছেন।
বেলা সোয়া ১১ টা খাতামধুপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় চেয়ারম্যান মো. জুয়েল চৌধুরী তাঁর পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে পরিষদ কার্যালয়ে বসে আছেন। এ সময় তিনি জানান, নীলফামারী জেলা প্রশাসক স্যার কাজ দেখতে এসেছিলেন। তিনি ইউনিয়নের প্রকল্পের সুবিধাভোগী কয়েকজনের বাড়িতেও গিয়েছিল। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চত্বর ঘুরে দেখা যায়, আগে পিলার ঢালাই কাজে খোঁয়া নিটিং করা না হলেও গতকাল ডিসি মহোদয় প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে আসবেন শুনে খোঁয়া নিটিং করা হচ্ছে। এ সময় খোঁয়া নিটিং করার কাজে ব্যবহৃত একটি চালুনি দেখা যায়।
এলাকার বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানা গেছে, নি¤œমানে উপকরণ দিয়ে তৈরি পিলারগুলো ইউএনও নিজেই উপস্থিত থেকে রাতেই সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হয়। এর কিছু ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা  মো. সানোয়ারের ভাড়া বাড়ির ভেতরে উঠানে রাখা হয়েছে। আর এর কিছু ভাঙা পিলার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পেছনে একটি জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়।  অবশ্য সেখানে গিয়ে তার প্রমাণ মেলে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প- ২ এর অধীনে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৩০০ ঘর নির্মাণের জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। পিআইসির সভাপতি সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বজলুর রশীদ প্রকল্পে অন্য সদস্যদের পাশ কাটিয়ে কন্ট্রাক দিয়ে নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করে ঘর নির্মাণের কাজ তড়িঘড়ি করে শেষ করার পাঁয়তারা করছে। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক সুবিধাভোগীর বাড়িকে ঘর নির্মাণের উপকরণ সামগ্রী পর্যন্তও পৌঁছেনি। আর যে সব ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে সে সব নি¤œমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি করা পিলার ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এ সব পিলার পরিবহন কিংবা পোঁতার সময় ভেঙে পড়ছে। ফলে ভাঙা পিলার (খুঁটি) রক্ষার জন্য রশি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়।
 এ দিকে, গতকাল শনিবার জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল অবলোকনে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। এর আগেও গত ২৪ জুলাই একই অললাইন নিউজপোর্টালে আরো একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 
 গতকাল বিকেলে নীলফামারীর জেলা প্রশাসকের ০১৭১৫-০৮১৪৮০ নম্বর মুঠোফোনে কল করলে তা রিসিভ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শাহীনুর আলম। তিনি জানান, ডিসি স্যার বাইরে আছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন,আপনার প্রকাশিত নিউজটি আমি পড়েছি। এ নিয়ে ডিসি স্যার আমাকে তদন্ত করার নিদের্শ দিয়েছেন। আমি অভিযোগের বিষয়ে নিজেই তদন্ত করব।        

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 2514436573050762606

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item