তালগাছ কর্তনে বিধি নিষেধ আরোপের দাবী, ঐতিহ্য ফেরাতে পীরগঞ্জে ২৭ কি:মি: সড়কে তালের বীজ রোপন

মামুনুর রশিদ মেরাজুল -

আকাশের দিকে উর্ধ্বগামী পাম গোত্রের অন্যতম লম্বা গাছের নাম- তাল গাছ। বৈজ্ঞানিক নাম ইড়ৎধংংঁং ভষধনবষষরভবৎ.এ গাছের ফলের নাম তাল। যা ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রস্মকালীন ফল। সাধারন্ত এ গাছের কোন ডাল-পালা বা শাখা-প্রশাখা হয় না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে লম্বা হয়। আর তাই বিশ্ব কবি তার রচিত‘তালগাছ’নামক কবিতায় গাছটির বর্ননা দিয়েছেন এভাবে-“তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে। মনে সাধ,কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়,একেবারে উড়ে যায়; কোথা পাবে পাখা সে?”। সেই তালগাছ গুলো সময়ের বিবর্তনে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনায় আকৃষ্ট হয়ে এর অতীত ঐতিহ্য ফিরে আনতে পীরগঞ্জে ২৭ কিঃ মিটার সড়কের দু’ধারে ১৭ হাজারের অধিক তালবীজ রোপন করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবেলায় পরিবেশ বান্ধব, বজ্রপাত নিরোধক তালগাছ এক সময় গ্রামীন সড়কের শোভা বর্ধন করত। সে সময় প্রায় বাড়িতে তাল গাছ দেখা যেতো। বিশেষ করে বন-জঙ্গল আর বাঁশ বাগানসহ পরিত্যাক্ত জায়গায় তাল গাছ বড় হ’ত অনেকটা অযতেœ ,অবহেলায়। গ্রামের অবস্থাপন্ন গৃহস্থদের বাড়ির ভিটেয় তাল গাছ থাকতো। তালগাছে বাসা করে বাচ্চা ফুটাতো কানা বগী। বাচ্চাগুলো সেখানেইে নিরাপদে বেড়ে উঠতো। পাশা-পাশি গ্রামের নিশানা ঠিক করা হতো তাল গাছে। তাইতো কবি লিখেছেন-‘ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ,ঐ খানেতে বসত করে কাঁনা বগীর ছা।’ সময়ের প্রয়োজনে গ্রামীণ বন-জঙ্গল আর বাঁশবাগান গুলো কেটে কৃষি জমিতে পরিনত করার পাশা-পাশি জনবসতি গড়ে ওঠায় পল্লীগ্রাম গুলোতে এখন আর আগের মতো তাল গাছ চোখে পড়েনা। রাস্তার পাশে তাল গাছের স্থান দখল করেছে পরিবেশের ক্ষতিকারক ইউকালিপ্টাস গাছ। অধিকাংশ গ্রামীণ সড়কে সারি-সারি ওই গাছ দেখা যায়। যা গ্রামের বেকার যুবকরা সমিতি গঠনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের সাথে শর্তসাপেক্ষ বিভিন্ন মেয়াদী চুক্তির করে রোপন করেন। তালগাছের মতো নিরাপদ আশ্রয় না থাকায় কানা বগীরাও হারিয়ে যেতে বসেছে। তাল গাছে ফল আসতে সময় লাগে বেশ ক’বছর। গাছটির কোন কিছুই ফ্যালনা নয়। মানুষের উপকারে সব অঙ্গ থেকে কোন না কোন কাজে লাগে। গাছটির কান্ড দিয়ে নৌকা, বাড়ীর কাঁচা ও আধাপাকা ঘরের ছাদ, বর্গা ইত্যাদি তৈরী করা যায়।পাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি, গরমের সময়ে হাতপাখা, চাটাই, মাদুরসহ নানান ধরনের  সামগ্রী তৈরী হয়। তালের পিঠা, আঁটি, রস, শাস এসবই মানুষের নিকট খুব মজাদার পুষ্টিকর খাবার। তালের রস দিয়ে তাল ফুলুরি,কাণ্ড থেকে খেজুর গাছের মতো রস নিয়ে পাটালি গুড়, মিছরি, ইত্যাদি খাদ্য তৈরী করা যায়। চিকিৎসক ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে-অ্যান্টি অক্সিজেন ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান ছাড়াও তালে ভিটামিন এ,বি ও সি, জিংক,পটাসিয়াম, আয়রন,ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে। তালের ঘন রসের রয়েছে বহুবিদ ঔষধী  উপকারিতা। পেটের পীড়া নিরাময়ে, এসিডিটি, সব বয়সের মানুষের অপুষ্টি প্রতিরোধে এবং ক্রিমিনাশকে তালের রস কাজ করে।এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা জানান, একটা সময় আত্মীয়েরা পরস্পর –পরস্পরের মধ্যে তালের পিঠা বিনিময়ের মাধ্যমে আতœীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করার রেওয়াজ ছিলো। কিন্তু ক্রমেই তালগাছের সাথে সাথে ওই রেওয়াজটিও উঠে যাচ্ছে। এখনও প্রত্যন্ত এলাকার তালগাছগুলো উজাড় করে ইটভাটার খোরাক হিসেবে সরবরাহ দিচ্ছে এক শ্রেণীর কাঠ ব্যবসায়ী। এদিকে তালগাছের অতীত ঐতিহ্য ফিওে আনতে গত বছরের অক্টোবর মাসে পীরগঞ্জের পৃথক ৩টি ইউনিয়নে ২৭ কি ঃ মিটার গ্রামীণ সড়কের দু’ধারে ১৭ হাজারের অধিক তাল বীজ রোপন করা হয়। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত-কর্মসুচির প্রতি আকৃষ্টু হয়ে বর্নিত ৩টি ইউিিপর চেয়ারম্যান পরিবেশ বান্ধব ও বজ্রপাত নিরোধক তাল গাছ সৃষ্টির লক্ষ্যে উল্লেখিত সংখ্যক তালের বীজ রোপন করেন। মিঠিপুর ইউপির চেয়ারম্যান এসএম ফারুক আহমেদ- চতরা ইউপির চেয়ারম্যান-এনামুল হক শাহীন ও কাবিল ইউপির চেয়ারম্যান- রবিউল ইসলাম রবি তালের বীজ রোপনের বিষয়ে  অভিন্ন কথা বলেছেন। তারা বলেন, প্রধান মন্ত্রী শেখহাসিনার ঘোষনায় আকৃষ্ট হয়ে ‘লায়ন্স ক্লাব ইউনিক গ্রীনের সহায়তায়’ আমরা ৩টি ইউনিয়নে উল্লেখিত ২৭ কিঃ মিটার সড়কের দু’পাশে ১৭ হাজার তালের বীজ রোপন করেছি। এবছর ইউনিয়নের অর্থায়নে আরও বেশী সখ্যক তালের বীজ গ্রামীন সমুহে রোপন করা হবে। তারা তালগাছ কর্তনে বিধি নিষেধ আরোপের দাবী করেন। তবে উপজেলার চতরা-ধাপেরহাট সড়কের কাবিলপুর ইউনিয়নের ৩/৪টি গ্রামে রাস্তার ধারে ও জমির আইলে সারি-সারি তালগাছের মনোরম দৃশ্য পথচারীদের আকৃষ্ট করে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 7753630955718381128

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item