সৈয়দপুরে এক পরিবারের নিখোঁজ দুই মেয়ের একজনকে ঠাকুরগাঁও থেকে উদ্ধার

বড় ভাইয়ের অত্যাচার নির্যাতন অতিষ্ঠ হয়ে নিজেরাই বাড়ি ছাড়ে তারা

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

সৈয়দপুরে এক পরিবারের নিখোঁজ দুই মেয়ের মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। ২৪ সেপ্টেম্বর (রোববার) বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের আমজন পানিশালা এলাকায় বাবা-মায়ের কাছে তাকে খুঁজে পায় সৈয়দপুর থানা পুলিশ। বড় ভাইয়ের  নানা রকম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে সৈয়দপুর শহরের বাড়ি ছাড়ে তারা দুই বোন। ছোট বোন আশা ঠাকুগাঁওয়ে গিয়ে সেখানে বাবা-মায়ের সঙ্গে অবস্থান করছিল। আর বড় মেয়ে মোছা. আরিফা (১৬) বর্তমানে ঢাকায় তাঁর এক নিকটাত্মীয় বাসায় রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরিফার সৎ মা মোছা. জোবেদা খাতুন গত রবিবার সৈয়দপুর থানায় বসে আলাপকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, সৈয়দপুর শহরের রসুলপুর সুইপাই কলোনী (মেথরপট্টি) সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমান। তাঁর প্রথম স্ত্রী দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রেখে মারা যান। প্রথম স্ত্রী’র মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন বিটিসিএল’র কর্মচারী মো. আতাউর রহমান। দ্বিতীয় স্ত্রী মোছা. জোবেদা খাতুনের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে বড় ছেলে রুবেলের সাথে বাবা আতাউরের সাংসারিক নানা বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দেয়। গত রবিবার সৈয়দপুর থানায় কথা হয় উদ্ধার হওয়ার আশা ও তাঁর মা মোছা. জোবেদা খাতুনের সঙ্গে।
মোছা. জোবেদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, বখাটে উচ্ছৃংখল ও মাদকাসক্ত রুবেল ব্যবসার নামে বাবার নিকট থেকে কয়েক দফায় অনেক টাকা পয়সা নিয়ে নষ্ট করে। এরপরও যখন তখন বাবার কাছে টাকা পয়সা দাবি করে বসতো। বাবা টাকা পয়সা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ছেলে হয়ে তার ওপর চড়াও হয়ে মারপিট করতো। এছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্নভাবে নাজেহাল করতো। এ অবস্থান মান সম্মানে ভয়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে আমার স্বামী আমাকে ( দ্বিতীয় স্ত্রী) নিয়ে সৈয়দপুর শহরের অন্যত্র ভাড়া বাড়িতে গিয়ে উঠেন। সেখানে গিয়েও ছেলে রুবেল টাকা-পয়সার জন্য অসুস্থ বাবার ওপর চড়াও হতো। এ অবস্থায় নিরূপায় হয়ে আমাকে নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে গিয়ে ছোট ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয় আমার স্বামী। বর্তমানে তিনি জটিল ঘাতক ব্যাধি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর তাদের বড় ছেলে মো. রুবেল তার দুই মেয়ে আরিফা ও আশাকে জিম্মি করে রাখে সৈয়দপুর শহরের রসুলপুরস্থ বাড়িতে।
এদিকে পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে, সৈয়দপুরে থাকাকালীন স্কুল পড়–য়া মোছা. আরিফাকে স্কুলে যাওয়া - আসার পথে উক্ত্যক্তের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশি এক পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ হয়। এ অবস্থায় পরিবারের বড় ছেলে রুবেল ওই প্রতিবেশিকে ঘায়েল করতে ছোট বোনকে চাপে ফেলে তাকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি নারী শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। পরবর্তীতে বড় ভাই রুবেল চাপের মুখে বাধ্য করে বোনকে দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সৈয়দপুর থানার এক উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আসামীর পক্ষে পক্ষপাত্বিতের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেন গত ৬ আগষ্ট। এভাবে ছোট বোনকে দিয়ে প্রতিবেশির ও পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যে, বানোয়াট অভিযোগ দেয়ার ঘটনায় বাঁধ সাধে ছোট বোন। আর এতে করে বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর নানা রকম শারীরিক অত্যাচার - নির্যাতন করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি দেখাতে থাকে বড় ভাই রুবেল।  এ অবস্থায় সদ্য এসএসসি পাশ করা আরিফা গত ২৯ আগস্ট দুপুরে তাঁর সৎ মাকে ঠাকুরগাঁও থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে ছোট বোনকে তাঁর হাতে তুলে দিয়ে নিজে ঢাকায় চলে যায়। সেই থেকে ছোট বোন আশামানি আশা তাঁর বাবা-মায়ের সাথে ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিল। আর আরিফা ঢাকা এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় রয়েছে। এদিকে, সচতুর রুবেল পূর্ব শক্রতার জের ধরে দায়েরকৃত মামলায় সুবিধা নিতে তাঁর দুই বোন নিখোঁজ মর্মে একটি মিথ্যে ঘটনা সাজায়। তাঁর দুই বোনের নিখোঁজের বিষয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি নম্বর: ৯৪/১৭) করেন। পরবর্তীতে তাদের প্রতিপক্ষরাই তাঁর ছোট দুই বোনকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ তুলে সৈয়দপুর থানায় পৃথক একটি অভিযোগ দেন। সেই সঙ্গে তাঁর দুই বোনকে উদ্ধারে পুলিশের গড়িমসি ও গা-ছাড়া ভাব এবং আসামীর পক্ষে পক্ষপাত্বিতের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রপত্রিকায় ও জনপ্রিয় অললাইন নিউজ পোর্টাল অবলোকনে খবর করে প্রকাশিত হয়। এতে করে বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরবর্তীতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিখোঁজ দুই বোনকে উদ্ধারের জন্য সৈয়দপুর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। আর সৈয়দপুর থানা পুলিশও নিখোঁজ দুই বোনকে উদ্ধারে তৎপর হয়ে উঠেন। সোর্সের দেওয়া গোপন সংবাদে ভিত্তিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর (রোববার) বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের আমজন পানিশালা এলাকা থেকে আশামনি নামের শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পালের সামনে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম নিখোঁজ শিশু আশামনি আশাকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন দুই বোনের নিখোঁজের বিষয়টি একটি সাজানো ঘটনা। আর আশামনিকে খুঁজে পাওয়ার পর তার বক্তব্যে প্রকৃত ঘটনাটি উন্মোচিত হয়েছে। মূলতঃ তারা বড় ভাই রুবেলের নানা রকম অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তার দুই বোন নিজেরাই বাড়ি ছাড়ে। আর মূলতঃ  পূর্ব শক্রতার জের ধরে একটি মামলায় সুবিধা দিতে দুই বোনের বাড়ি ছাড়ার ঘটনাটি নিখোঁজ বলে দাবি করে থানায় জিডি করেন রুবেল।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7468017033303043764

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item