নীলফামারী জেলায় ঈদের আনন্দ ম্লান দেড় লাখ মানুষের

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ১ সেপ্টেম্বর॥
“গেল বার (গত বছর) বন্যাত কষ্ট করি পশু কোরবানি দিছিনু (দিছিলাম), এবার আর যায়ছে না। এ্যালাও (এখনও) বাঁধের উপরোত (উপরে) ছোয়া-ছোট (বাচ্চা-পরিবার) নিয়া (নিয়ে) ত্রিপল টাঙ্গি আছি। বাড়ি ঘর ঠিক করির পাই না। হামরা (আমরা) গেছি ব্যাহে”।
বুকভরা কষ্ট নিয়ে এভাবেই মনের কথা বলছিলেনই তিস্তা নদী বেষ্টিত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের রবি মিয়ার ছেলে রমজান আলী (৫৫)। আজ শুক্রবার সরেজমিনে গেলে এই চিত্র দেখা যায় তিস্তা নদীর বানভাসীদের করুন অবস্থা।
গত ১৩ আগষ্ট বন্যায় বাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ায় স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে কলম্বিয়া বাঁধের উপর ত্রিপল টাঙ্গিয়ে দিনযাপন করছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। তিনি বলেন, ৫ বিঘা জমিত (জমিতে) আমন আবাদ নাগানু (লাগানো) কিন্তু ক্ষেতটাও নষ্ট হয়া গেলো। হামরা (আমরা) এ্যালা (এখন) কেংকরি (কেমন) চলি। টাকা অভাবে ভাঙ্গা ঘরটা ঠিক করিবার পাইছি না তো। তিস্তা পাড়ের খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাইশপুকুর গ্রামের দিনমজুর মফিজুল ইসলাম (৬০) বলেন, গতবার ৫ হাজার করি টাকা দিয়া ৭জনে কোরবানী দিছোনো (দিয়েছি), এইবার পারা যায়ছে না। হাতের অবস্থা খুব খারাপ। সংসারের খরচই যোগান দেয়া বড়ই কষ্টকর। কোন রকমে ছোট একটা দোকান দিয়া চলিছি।
তিস্তাপাড়ে ডিমলা উপজেলার পুর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন ঘুরে এমন কষ্টের চিত্রই পাওয়া গেছে সেখানকার মানুষদের।
সাম্প্রতিক বন্যা কেড়ে নিয়েছে তাদের স্বপ্ন। বেচেঁ থাকায় নতুন করে সংগ্রাম করছেন তারা। এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে পানি সরে গেলেও ক্ষত রেখে গেছে মানুষের হৃদয়ে। ঈদ  আনন্দ যেন মলিন হয়ে গেছে এলাকার মানুষদের। নেই কোন অনুভুতিও।
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ডালিয়া গ্রামের মরিয়ম মেগম(৪০) জানান, বাড়িত পানি নাই ঠিকই কিন্তু ঘর ভাঙ্গি গেইছে, যার কারণে ত্রিপল টাঙ্গি বাহিরোত থাকিবার নাগেছে। ছাওয়া দুইটা কলেজোত পড়ে। ম্যালা টাকার দরকার হয়। অভাবের সংসারে ফির বিপদ আসি জাপটে ধরইলে। 
হামার গরীবের মানষির কি আর ঈদ আছে প্রশ্ন করে মরিয়ম বলেন, ঠিক মতন নিন পারিবার পাইছি না, কেমন করি কোরবানী দেই।
কলম্বিয়া বাঁধে আশ্রয় নেয়া রেহানা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, খালি ২০ কেজি চাল পাইছি আর শুকনো খাবার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারসহ বিভিন্ন উদ্যোগে এলাকার জন্য শুনিছি অনেক কিছু দেয়া হয়ছে। সবাই পায়ছে না। যায় পায়, বারে বারে পায় আর যায় পায় না ওয় পায়ে না।
গরীবের জিনিসগুলো যাতে ঠিকমত বিলিবন্টন করা হয় সেজন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান রেহেনা।
ছোট সন্তানকে নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন লাভলী আক্তার(২৫)। ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় তিনিও প্লাস্টিকের ত্রিপলের নিচে স্বামী আর দুই সন্তানকে দিন যাপন করছেন বন্যার পর থেকে।
টানাটানির কারণে ঘর মেরামত করতে সময় লাগছে মন্তব্য করে লাভলী জানান, বান না হইলে এইবার কোরবানী দিনো হয়। কিন্তু আর হইল না।
এ সময়ে গরু বিক্রি কিংবা কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও পুরো চিত্রটাই আলাদা তিস্তা পাড়ের মানুষজনদের।
দুঃখ দুর্দশারকথা স্বীকার করে খালিশা চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার জানান, আমার ইউনিয়নে প্রায় ১হাজার ৫০০পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষতিগ্রস্থদের সবাইকে দিতে না পারলেও ১হাজার ৫০ পরিবারে সরকারী সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে।
ইউনিয়নের ৩২টি পরিবারের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে অসহায় হয়ে পড়েছেন তাদের পুর্নবাসনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে।
শুধু তিস্তা পাড়ের মানুষরাই নয় বন্যা ভাবিয়ে তুলেছে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেড় লাখেরও বেশি মানুষকে। জেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৪১হাজার ৫৩৫টি পরিবারের ১লাখ ৪৬হাজার ১৪০জন মানুষকে ধকল সামলাতে হচ্ছে বন্যার।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, তিস্তার বাধে আশ্রিত প্রতিটি পরিবারকে সরকারীভাবে পর্যাপ্ত ত্রান দেয়া হয়েছে।



পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6737905554908452551

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item