ডিমলায় গাছে বেঁধে শেফালীর নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর মামলার ২৪ আসামী আটক

বিশেষ প্রতিনিধি ১৯ সেপ্টেম্বর॥ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড় গ্রামে গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ শেফালী বেগমকে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেধে নির্যাতনের ঘটনার চাঞ্চল্যকর মামলার আসামীদের মধ্যে পলাতক ২৪ জন আসামী আটক হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক শিমুল ইসলাম সহ ২৪ জন পলাতক আসামী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আমলী আদালত ৩-এ আতœসর্ম্পনের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করে। আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোছাঃ কামরুন নাহার তাদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আসামী পক্ষ্যের আইনজীবী মনির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন ২৪ জন আসামীকে পুলিশ জেল হাজতে প্রেরন করেছে। আসামীদের মধ্যে ৯ জন নারী ও ১৫ জন পুরুষ রয়েছে। 

অন্যান্য আসামীরা হলো ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর ক্লোঝাড়পাড়া গ্রামের দেবারু মামুদের ছেলে অপিয়ার রহমান (২৩), অপিয়ার রহমানের মা অপিয়া বেগম (৬০) ও তাঁর স্ত্রী তুলি বেগম (২১)।
একই গ্রামের দবির উদ্দিন (৬০) , স্ত্রী খালেকুন বেগম (৫০), তার তিন ছেলে আলী হোসেন (৩৫), আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), মনোয়ার হোসেন (২৪)  ও ছেলের বউ রুপালী (২৮), তহমিনা বেগম (২৬), মনছুরা বেগম (২৪) এবং ছোট ভাই আহেদুল ইসলাম (৩৮)।
একই গ্রামের এবং খালিশাচাপানী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম (৪৫), তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪০) ও ছেলে আতাউর রহমান (১৯), একই গ্রামের মাহবুবর রহমানের স্ত্রী  সুলতানা বেগম (২৪), সফিয়ার রহমান (২৭), তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২৫), মৃত. দৈস্যা মামুদের ছেলে মহুবর রহমান (৪৫), নুরুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০), সফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (২৫), আকবর আলীর ছেলে কালু মিয়া (৪৫), ভলু মামুদের ছেলে মমিনুর রহমান (৩৫) ও সামসুল ইসলামের ছেলে মজনু (৩০)।

এদিকে ওই আদালতের জিআরও অনিল কুমার রায় জানান, উক্ত মামলায় মোট ৩১ জন আসামী রয়েছে। এর মধ্যে এই ২৪ জন সহ  ২৮ জন আসামী জেলহাজতে ও একজন আসামী জামিনে ও দুইজন আসামী পলাতক রয়েছে।
একটি সুত্র জানায়, পলাতক থাকা দুই আসামী হলো ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমান ও উক্ত ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের।

মামলার বিবরনে জানা যায়, চলতি বছরের ৪ আগষ্ট নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলন ঝাড় গ্রামে লালন মিয়ার স্ত্রী শেফালী বেগম (৩২) নামের ওই গৃহবধুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে শারিরিক নির্যাতন করা হয়। দিনদুপুরে শেফালী বেগম গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মর্মে গরুসহ গাছে বেধে ডিমলা থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনার দিন বিকালে এসে গরু চুরি ঘটনা মিথ্যে বুঝতে পেরে শেফালীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রহনের পরামর্শ দেয়।
ঘটনার পর দিন সকালে শেফালীকে তার আতœীয় স্বজনরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগষ্ট সন্তান প্রসবের সময়ের আগে ৯০০ গ্রাম ওজন নিয়ে শেফালী একটি  কন্যা সন্তান প্রসব করে। কিন্তু নবজাতক শিশুটির অবস্থা ছিল শংকটাপন্ন। নবজাতক কন্যাটিকে নিবিড় পরিচর্চ্চা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। এরপর ৯ আগষ্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবজাতকটি মারা যায়। সেখানে নবজাতকটির ময়না তদন্ত করা হয়।
কিন্তু এর আগে শেফালীর মামা ভটভটি চালক সহিদুল ইসলাম ৬ আগষ্ট রাতে ডিমলা থানায় ১৯ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে (নম্বর-০৬ ধারা-১৪৩/১৪১/৩৪২/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৫৪/৫০০/১১৪/৩৪ দঃ বিঃ)। ওই মামলায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরন করেছি। পরবর্তিতে রংপুর মেডিকেল হতে ফিরে শেফালী মোট ৩১ জন আসামী করে পূর্বের মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে ডিমলা থানায় আবেদন করে। সেটি আদালতে প্রেরন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করে। ওই মামলায় শেফালীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের হুকুমদাতা হিসাবে প্রধান আসামী করা হয় গ্রামের নুর আলম শাহকে (৫৮)। ২১ আগষ্ট প্রধান আসামী গ্রেফতার হয় র‌্যাবের হাতে। পরবর্তিতে জজ আদালতের মাধ্যমে জামিন আবেদনের শুনানীতে নুর আলম শাহ জামিন পায়। অপর আরেক আসামী ভুল্লু মাহমুদের স্ত্রী মোমেনা আটক হয়ে হেলহাজতে রয়েছে। আর গতকালমঙ্গলবার উক্ত ২৪ আসামী আদালতের মাধ্যমে আটক হয়।
শেফালী জানায় তাকে নির্যাতনকারী সহ আরো অনেকে জমিজমা সংক্রান্ত্র এক বিবাদে তার বাবা মবিয়ার রহমানকে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। মামলায় এলাকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ চার্জশীট প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রভাবশালীরা ওই মামলা মিমাংসার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। তারা পিতার হত্যা মামলা আপোষ না করায় প্রতিপক্ষরা সম্প্রতি ডিমলা থানায় শেফালীর ছোটভাই রমজানকে একটি মিথ্যা মামলায় জরিয়ে দিয়ে এলাকাছাড়া করে।
প্রসঙ্গতঃ গৃহবধু শেফালীকে নির্যাতনের ঘটনায় অবলোকনে গত ৫ আগষ্ট ডিমলায় গৃহবধুকে গাছে বেধে নির্যাতনের অভিযোগ এই শিরোনামে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অবলোকনে প্রকাশিক সংবাদগুলির লিঙ্ক নিচে দেয়া হলো। ডিমলায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুকে গাছে বেধে নির্যাতনের অভিযোগ

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6622452714497995180

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item