খড়খড়িয়া নদীর শহর রক্ষা বাঁধের দুই স্থানে ধস যে কোন মুর্হুতে সৈয়দপুর শহরের পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর(নীলফামারী)প্রতিনিধি:

গত তিন দিনের অবিরাম প্রবল ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৈয়দপুর শহর রক্ষা বাঁধ দুই স্থানে ভেঙ্গে গেছে। আজ (রবিবার) সকালে খড়খড়িয়া নদীতে পানি চাপে বসুনিয়াপাড়া সংলগ্ন ভুল্লীপাড়ায় বাঁধের ৫০ ফুট ও পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়ায় পৃথক দুইটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। আর বাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া ওই স্থান দুইটি দিয়ে খড়খড়িয়া নদীর পানি হুঁ হুঁ করে প্রচন্ড বেগে পাশের এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এতে করে সৈয়দপুর সেনাসিবাস, বিমানবন্দর, দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা হুমকি মুখে রয়েছে। বাণিজ্যিক প্রধান সৈয়দপুর শহরে নদীর পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে সৈয়দপুর শহরবাসী আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।আজ (রবিবার) দুপুরে সৈয়দপুর সেনানিবাসের কমান্ডিং অফিসার ও সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। পাটোয়ারী পাড়া এলাকায় বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে প্রবলবেগে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কখনও ভারী ও কখনও আবার ঝিরঝির অবিরাম এ বৃষ্টিপাত গতকাল (রবিবার) দুপুর পর্যন্ত অব্যাহতভাবে ঝড়েছে। বৃষ্টির কারণে সৈয়দপুর উপজেলার ৫টি ইউয়িনয়ন ও পৌরসভার নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলোর বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ে। গতকাল (রবিবার) দুপুরের পর বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে কিছু কিছু এলাকার পানি নেমে গেছে। এখনও অনেক এলাকায় মানুষের বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি থাকায় তারা অনেকটাই বন্দী জীবনযাপন করছেন। সৈয়দপুর পৌরসভার কুন্দল এলাকার বঙ্গববন্ধু স্কুল সংলগ্ন মহল্লায় বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ায় প্রায় ৩০/৩৫টি পরিবার সৈয়দপুর কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। এলাকার বাসিন্দা মুন্না দাস জানান, খড়খড়িয়া নদীতে সৈয়দপুর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে তাদের এলাকায় পানি বাড়তে থাকে। তিনি জানান, সৈয়দপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এরশাদ হোসেন পাপ্পু তাদের অন্যত্র সরিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। এতে করে তারা বাধ্য হয়ে বাসাবাড়ি ফেলে সৈয়দপুর কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন তারা  চরম আতঙ্কে রয়েছে। এছাড়াও  নতুন বাবুপাড়া পুরাতন পোষ্ট অফিস সংলগ্ন এলাকায়ও পানি বাড়তে থাকায় লোকজন বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে ছুঁটছেন বলে জানান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সমাজসেবক মো. আশরাফ আলী। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার বাসিন্দা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বুঝতে পেরে বাসা বাড়ির প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে নিরাপদে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
অপরদিকে, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে সৈয়দপুর পৌরসভার বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রিপাড়া, নুতন বাবুপাড়া, মুন্সিপাড়া রসুলপুর, গোলাহাট, হাতিখানা,নতুন বাবুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তারা রান্না কাজটি সারবেন এমন জায়গায় নেই। এ সব এলাকার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে, উপজেলার কামারপুকুর,কাশিরাম বেলপুকুর, বাঙ্গালীপুর,বোতলাগাড়ী ও খাতামধুপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার একর জমিতে লাগানো আমন ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।  উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের কাশিরাম পাড়ায় চিকলী নদীর পানিতে পাশের এলাকাগুলো ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মেমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানিতে  অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে হাজার হাজার পুকুরের মাছ পানিতে। এ সব পুকুর মালিকরা তাদের পুকুরের মাছ হারিয়ে আহাজারি করছেন। অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে মৎস্য চাষ করেছিলেন। তারা এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন সে চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস শহীদ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় সেনা মোতায়েনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পাটোয়ারী পাড়া এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধের অংশ মেরামতে সেনা সদস্যদের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ করছেন। এ জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঁধ এলাকায় সার্বক্ষণিক অবস্থান করে বাঁধ রক্ষার জন্য বলা হয়েছে।        

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1604688522685386393

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item