নীলফামারী চওড়া কলেজে নিয়োগ বানিজ্য, অধ্যক্ষ লাঞ্চিত॥ পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি
https://www.obolokon24.com/2017/08/collage.html
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ২ আগষ্ট॥
নীলফামারী জেলা সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের উত্তর চওড়া বড়গাছা স্কুল এন্ড কলেজে অফিস সহকারী পদে লোক নিয়োগকে কেন্দ্র করে নিয়োগ বানিজ্য ও শিক্ষক লাঞ্চনার অভিযোগে আজ বুধবার দুপুরে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তার অপসারণের দাবিতে সকাল ১১টার দিকে ওই কলেজের সামনের সড়কে এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাসেদ আল মামুন, ব্যবসায়ী শফিক আল ওয়াজান ও শিক্ষক নিয়ামুল বসির।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন শহিদুল ইসলাম, শিক্ষক নিয়োগের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন।
বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেয়ার নাম করে তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। অথচ তাকে চাকুরী না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানী করছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আসছেন।
অপরদিকে শিক্ষক লাঞ্চনার প্রতিবাদে বেলা সারে ১২টার দিকে ওই কলেজ চত্তরে মানববন্ধন সমাবেশ করেন শিক্ষক কর্মচারীরা। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা করেন, বিদ্যালয় শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব খোকারাম রায়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুধির রায়, সদর উপজেলা সভাপতি উত্তম কুমার রায় ও সাধারণ সম্পাদক তিমির কুমার বর্মণ প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন মঙ্গলবার বিকেলে কলেজ চত্তরে ঢুকে ওই কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামকে মারধর করেছেন। বক্তারা বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে প্রবেশ করে প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে পেটানো হলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? বক্তারা দোষি ছাত্রলীগ নেতাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে কলেজ চত্তরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সে। এসময় আমাকে এলোপাথারী কিল ঘুষি মারতে থাকে। আমার সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় হত্যার চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বুধবার সদর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, উত্তর চওড়া বড়গাছা স্কুল এ- কলেজের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে লোক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমি ওই পদে আবেদন করি। ওই পদের লিখিত পরীক্ষা চলতি বছরের ২১ জুন অনুষ্ঠিত হয়। আমাকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে আমার কাছে ১৬ লাখ টাকা চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী আমি তাকে ১৫ লাখ টাকা দেই। ৪ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে ওই পদে দিনাজপুর জেলার প্রশান্ত নামের একজনকে ২২ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকুরী দেয়ার ষড়যন্ত্র করেন। এ অবস্থায় মঙ্গলবার আমি আমার টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমাকে কলেজ চত্তর থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন অধ্যক্ষ। এসময় উভয়য়ের মধ্যে ধাক্কা ধাক্কির ঘটনা ঘটে। মারডাঙ্গের অভিযোগ সত্য না।
নিয়োগ বানিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগে ওই অধ্যক্ষের অসসারণ দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন সমাবেশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই একটি পদে ২৯জন প্রার্থী আবেদন করলে একজনের আবেদন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় ২৮ জনের আবেদন বৈধ হয়। ২১ জুন অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় ১৬জন প্রার্থী অংশ নেন। গত ৪ জুলাই সকালে ফলাফল ঘোষনা করা হলে প্রশান্ত নামের একজন প্রথম হন। বিকেলে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই ফলাফল স্থগিত ঘোষনা করেন। তার কাছে টাকা নেয়ার প্রশ্নই আসে না।
এ বিষয়ে কথা বললে নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আকতার বলেন, অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।