পঞ্চগড় এখন খাঁ খাঁ মরুভূমি, বৃষ্টি নেই

মো: তোতা মিয়া, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি:

পঞ্চগড়ে কয়েকদিন ধরে চলা ভারী বৃৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দেশের অধিকাংশ নদ নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জলমগ্ন দেশের অনেক এলাকা। এর সম্পূর্ন উল্টো চিত্র সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। পানির অভাবে এখন করতোয়া নদী সহ অন্যান্য নদীর ভাগ্যে এখনো বর্ষার জল জোটেনি। ভরা মৌসমে পূর্ন যৌবন না হয়ে নদীর স্বচ্ছ বালুতে দিনভর খেলাধুলা করছে নদী পারের কিশোর যুবকরা। আষাঢ়ের শুরুতে খাল-বিল যে পানি জমা হয়েছিল কয়েকদিনের রোদে তাও শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে কৃষকরা তাদের প্রধান ফসল আমন ধানের চারা জমিতে রোপন করতে পারছে না। পাশের দীর্ঘ খালে পানি না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে গভীর নলকূপে শ্যালো মেশিন বসিয়ে জমিতে পানি দিয়ে চারা লাগানো শুরু করছে। এতে করে উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে কৃষকরা। এভাবে চলতে থাকলে এবার আমন মৌসমে কৃষকরা বিশাল লোকসানের মুখোমুখি হবে বলে আশঙ্কা করছে খোদ কৃষি বিভাগ। পঞ্চগড় জেলায় সাধারণত মধ্য আষাঢ় থেকে শুরু করে গোটা শ্রাবন মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কোথাও কোথাও বন্যাও দেখা দেয়। অতিবৃষ্টি আর ওপার থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে নদ-নদীর পানি বৃষ্টি পেয়েও দু’কুল ছাপিয়ে উপচে পড়ে নদী পাড়ের মানুষের ঘড়বাড়িতে। অনেকে হাস-মুরগি আর গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নেয় পাশের উচুঁ বাঁধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। ভারত থেকে আশা নদীগুলোতে এখনও হাঁটু পানি। পঞ্চগড়ের বিপরীতে ভারতীয় এলাকাগুলো অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পায়নি। আবার বর্ষাকালের পানি নির্ভর নদীগুলো পুরো পানি শুন্য। এবার অনেকেই ধরে নিয়েছিল পুরো বর্ষাকালেই বৃষ্টি হবে, কিন্তু পুরো আষাঢ় মাসে কোন বৃষ্টি হয়নি। শ্রাবনের শুরুতেই বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপের কারণে কয়েকদিন আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে খুবেই সামান্য। যা কোন উপকারেই আসেনি। এই সপ্তাহের শুরু থেকে সারাদেশে কম বেশি ভারী বৃষ্টিপাত হলেও পঞ্চগড়ে তেমনটি হয়নি। মাঝে মধ্যে আকাশে মেঘ জমে সামান্য বৃষ্টি হওয়ার পরেই আকাশ পরিস্কার হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবারেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও জমে থাকার মত পানি হয়নি। এ অবস্থার মধ্যে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে পঞ্চগড়ের কৃষকরা। কারন এই জেলার প্রধান ফসল প্রকৃতি নির্ভর আমন ধান। কোন ধরনের সেচ ছাড়াই বৃষ্টি ওপর নির্ভর করে এখানে আদিকাল থেকে আমন ধান চাষ করে আসছে কৃষকরা এবার প্রকৃতির  বিরুপ আচরণে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্মুখীন। শ্রবাণের অর্ধেক মাস পেরিয়ে যেতে ধরলেও অনেক কৃষক এখনো জমিতে চারা রোপন শুরু করতে পারেনি। যাদের বীজ তলায় তৈরী চারা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে তারা বাধ্য হয়ে গভীর নলকুপের সেচ দিয়ে শুরু করছে। এ জন্য শুরুতেই তাদের বিঘা প্রতি অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে, ৭ শত থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। এ বিষয়ে পঞ্চগড় হাড়িভাসা গ্রামের কৃষক মো: খাদেমুল জানান বীজ তলার চারা নষ্ট হতে শুরু করায় আমি কয়েকদিন আগে চার বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে আমন চারা রোপন করেছি। সেচ দিয়ে চারা লাগানোর তিনদিনের মাথায় আবারও জমিতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত তিনবার সেচ দিতে হয়েছে। এ জন্য এখন পর্যন্ত আমার প্রায় ছয় হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। এ ব্যাপারে পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক শামসুল হক বলেন, গত মৌসুমে আমরা লক্ষমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করতে পেরেছিলাম। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে কৃষকরা তাদের জমিতে আমন চারা লাগানোর কাজ শেষ করতে পারবে।

পুরোনো সংবাদ

পঞ্চগড় 1082867503718298732

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item