কিশোরীগঞ্জের নিতাই ইউনিয়ন ভুমি অফিসটি দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়/শামীম হোসেন বাবু, নীলফামারী ৩ জুলাই॥
নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়ন ভুমি অফিসটি অনিয়ম ও দুনীর্তির আখরায় পরিণত হয়েছে। উপজেলা  সহকারী ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রিপন কুমার ও নিতাই ইউনিয়নের ইউনিয়ন (ভুমি) উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল ওহাবের  কাছে জি¤িœ হয়ে পড়েছে জমির মালিকগন। ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজস্ব (ভুমি উন্নয়ন কর) পরিশোধের নাম করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে নীলফামারী জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী জমির মালিকগণ।
সরেজমিন ও লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, গত ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর সহকারী ভুমি অফিসে যোগদান করেন সার্ভেয়ার রিপন কুমার । যোগদানের পর থেকে তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভুমি উপ সহকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে ভুমি উন্নয়ন কর, জমির খারিজের আবেদনের তদন্ত, খাস জমির তদারকি,হাট বাজারের তদারকি, রেকর্ড সংশোধন সহ বিভিন্ন অজুহাতে জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও সার্ভেয়ার রিপন কুমারের বিরুদ্ধে  বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন  সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগসহ পত্র পত্রিকায় রির্পোট প্রকাশিত হলেও তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এদিকে এমএলএসএস পদ থেকে সম্প্রতি পদন্নতি পেয়ে ইউনিয়ন ভুমি উপ সহকারী কর্মকতা আব্দুল ওহাব মাগুড়া ইউনিয়ন থেকে বদলী হয়ে  নিতাই ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন। নিতাই ইউনিয়নে যোগদানের পর থেকে তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে দালাল নিযুক্ত করে জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করছেন। যারা তার চাহিদামত টাকা দিতে পারছেননা তাদের দিনের পর দিন হয়রানি করেন।
বাহাগিলি ইউনিয়নের পাগলাটারী গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন জানান, আমার বাবা  ১৯৭৬ সালে জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যাক্তির কাছ থেকে রেকর্ড ও দলিল মুলে বাড়ি মধুপুর মৌজায় ১ একর জমি ক্রয় করে। যাহার দাগ নম্বর- ১২৬১, খতিয়ান নম্বর-৬৩২, জেএল নম্বর-১৭। আমার বাবার মূত্যুর পর উক্ত জমি সহ মোট ১ একর ৮৩ শতক জমির ভুমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার জন্য কয়েক মাস আগে নিতাই ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তার কাছে যাই। তিনি জমির কাগজপত্র দেখে জানান, যে আপনার জমির কয়েক বছরের ভুমি উন্নয়ন কর বাবদ ২০ হাজার টাকা লাগবে। আমি তার কথামতো তাঁকে ২০ হাজার টাকা দিলে সে গত ৮/৩/১৭ ইং তারিখে আমার হাতে এক হাজার ত্রিশ টাকার ভুমি উন্নয়ন করের রশিদ ধরিয়ে দেয়। যাহার রশিদ নম্বর-০৭১৭৮৪৫। রশিদ দেখে বাকি টাকা ফেরৎ চাইলে তিনি বিভিন্ন ভাবে সময় ক্ষেপন করে তালবাহানা করতে থাকেন। সর্বশেষ গত রবিবার টাকা ফেরৎ নেওয়ার জন্য তার অফিসে গেলে তিনি আমাকে ধাক্কা মেরে অফিস থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় বিচারের জন্য আমি জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি।
নিতাই ইউনিয়নের মৃত ছমর উদ্দিনের পুত্র  মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার মা ১৯৭৫ সালে  হেবাবিল এওয়াজ দলিল মুলে আমাকে ২ একর ২০ শতক জমি লিখে দিয়ে যান। ওই জমি থেকে আমি ৩০ শতক জমি বিক্রি করি।  জমির বিক্রির সময় ভুমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার জন্য নিতাই ইউনিয়নের উপ সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আব্দুল ওহাব আমার কাছে ৩৫ হাজার টাকা গ্রহন করেন। পরে বিভিন্ন কাগজ পত্রের সমস্যা দেখিয়ে আমাকে সহকারী  ভুমি অফিসের  সার্ভেয়ার রিপন কুমারের সাথে যোগাযোগ করতে বললে আমি অফিসে গেলে  সার্ভেয়ার আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন। পরে গত ২০/৪/১৭ ইং তারিখে আমার হাতে ১২ হাজার ৮৭৫ টাকার ভুমি উন্নয়ন করের রশিদ ধরিয়ে দেন। যাহার রশিদ নম্বর ০৭৩৯৯৮৯।
নিতাই গ্রামের আব্দুল মজিদের পুত্র আব্দুর রউফ বলেন, আমি ৪১ শতক জমির খাজনা পরিশোধের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি । ভুমি কর্মকর্তা আব্দুল ওহাব চাচাকে ১ হাজার টাকা খরচ বাবদ দিয়েছি জমির কাগজপত্র বের করার জন্য।
উপজেলা সহকারী ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার রিপন কুমারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন , আপনারা সাংবাদিকরা পয়সা নেওয়ার জন্য ভুয়া খবর নিয়ে আসেন। সামনে ঈদ আপনার জন্য কি করতে পারি বলেন।  আর লেখালেখি করে কি  করবেন। এর আগে কত লেখালেখি হইল ।
নিতাই ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভুমি উপ সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল ওহাবের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা সহকারী ভুমি কর্মকর্তা উত্তম কুমার স্যার আমাকে ডেকেছিলেন আপনারা তার সাথে কথা বলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মেহেদী হাসানের সাথে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে  লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির মালিকগণ নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে তার অনুলিপি আমাকে দিয়েছে। ডিসি স্যার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসক খালেদ রহীমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, জমির মালিকদের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভুমি) উত্তম কুমার রায়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা সহকারী ভুমি কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়ের সাথে কথা বললে তিনি জানান, নীলফামারী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে তদন্ত চলমান রয়েছে। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1017154170961436166

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item