বিশাল জয়ে ভারতকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান


ডেস্ক-
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। আগে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান ৩৩৮ রানের পাহাড় গড়ার পর আলোচনায় চলে আসে ২০০৩ বিশ্বকাপের স্মৃতি। সেবার দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে আসা ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৫৯ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপরই  ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে অজিদের সামনে। ১৪ বছর পর আইসিসির ইভেন্টের আরেকটি ফাইনালে একই পরিণতি বরণ করতে হলো টিম ইন্ডিয়াকে। এবার প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া নয়; পাকিস্তান।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর আগে যে পাকিস্তানকে কেউ গোনায় ধরেনি, সেই দলই হলো টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন! আজ রবিবার লন্ডনের ওভালে হাইভোল্টেজ ফাইনালে ভারতকে ১৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয় করে পাকিস্তান; যেটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে কোনো দলের সবচেয়ে বড় জয়।

এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বের সেই ম্যাচে ভারতের কাছে নাকানি চুবানি খেয়েছিল পাকিস্তান। ২৮৯ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান অলআউট হয়েছিল মাত্র ১৬৪ রানে। ফাইনালে ভারতকে তার চেয়েও ৬ রান কমে অলআউট করে মধুর প্রতিশোধই নিল সরফরাজের দল। ভারতের ইনিংস গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৫৮ রানে!

ভারতের জন্য ম্যাচটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হওয়ার পরই। ফখর জামানের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তান গড়েছিল ৩৩৮ রানের বড় সংগ্রহ। জিততে হলে ভারতকে রেকর্ডই গড়তে হতো। ওভালে সর্বোচ্চ ৩২২ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড শ্রীলঙ্কার, এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এই ভারতের বিপক্ষেই। যেটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসেও সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। শিরোপা ধরে রাখতে ভারতকে গড়তে হতো নতুন রেকর্ড। কিন্তু জয় দূরে থাক, ন্যূনতম লড়াইটাও করতে পারল না কোহলির দল।

ভারতের ইনিংসের শুরুতেই মোহাম্মদ আমিরের বিধ্বংসী বোলিংয়ে চাপের মুখে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনের কোমড় ভেঙে যায়।
মাত্র ৩৩ রানে প্রথম তিন উইকেট পতন হয়।

ভারতের হয়ে যা একটু লড়াই করেন হার্দিক পান্ডিয়া।  পাকিস্তানের বোলারদের উপর চড়াও হন তিনি।  সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৩ বলে ৪টি চার ও ৬টি ছক্কায় সাহায্যে (৭৬) রানের দর্শনীয় ইনিংস খেলেন এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান।
তার টি-২০ মেজাজে ব্যাটিং-এ বিনোদনের রসদ পায় স্টেডিয়ামে উপস্থিত র্দর্শকরা।  অন্যদিকে, শিখর ধাওয়ান (২১) এবং যুবরাজ সিং (২২) রান করে আউট হন।  রোহিত শর্মা (০), বিরাট কোহলি (৫), এমএস ধোনি (৪), কেদার যাদবরাও (৯) ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ হন।

পাকিস্তানের হয়ে আমির সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া হাসান আলি ও শাদাব খান নেন ২টি করে উইকেট।

এর আগে, ফিল্ডিংয়ে নেমে বল হাতে শুরুটা ভালোই করেন এবারে আসরে ভারতের সেরা বোলার পেসার ভুবেনশ্বর কুমার। প্রথম ওভারেই মেডেন নেন তিনি। ভুবির বোলিং-এ উজ্জীবিত হয়ে উঠেন অন্য প্রান্তে আক্রমনে আসা পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। তাই নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই পাকিস্তানের ওপেনার ফকর জামানকে তুলে নেন বুমরাহ। কিন্তু থার্ড আম্পায়ারের সহায়তা নিয়ে বুমরাহ’র ডেলিভারিটি ‘নো’ ডাকেন অনফিল্ড আম্পায়ার।
তাই ব্যক্তিগত ৩ রানেই নিশ্চিতভাবে জীবন পেয়ে যান জামান।  এরপর জীবন পাওয়া ফখর জামান ও আজহার আলির মধ্যকার সেঞ্চুরি জুটির ওপর ভর করে মজবুত ভিত পায় সরফরাজের দল। জীবন পেয়ে আরেক ওপেনার আজহার আলীকে নিয়ে ভারতীয় বোলারদের উপর চড়ে বসেন জামান। মারমুখী মেজাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে কিছুটা সর্তক ছিলেন জামান। তবে রানের চাকা দ্রুত গতিতে ছুটিয়েছেন আজহার। তাই ১৮তম ওভার শেষে ১০০ রানে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।

এরপর দলীয় ১২৮ রানে ভেঙ্গে যায় এই জুটি। রান আউটের ফাঁদে পড়ে আউট হন আজহার। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭১ বলে ৫৯ রান করে বিদায় নেন আজহার। আউট হবার আগে জামানকে নিয়ে আইসিসির ইভেন্টে ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন আজহার। এই জুটি হতো না, ঐ নো-বলের পরও রান আউটের অনেক সুযোগ মিস করেছে ভারতের ফিল্ডাররা। সেই সুযোগটি ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার।

দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটি পেয়েছে পাকিস্তান। জামানের সাথে ৬১ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন বাবর আজম। এরমাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান এবারের আসরের গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া জামান। ভারতের মিডিয়াম পেসার হার্ডিক পান্ডের বলে আউট হবার আগে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০৬ বলে ১১৪ রান করেন জামান।

জামানকে ফিরিয়ে দেয়ার পর পাকিস্তানের রানের লাগাম টেনে আনার পরিকল্পনা করে ভারতের বোলাররা। তাতে সাফল্য পাবার পথ দেখান ভুবেনশ্বর। চার নম্বরে নামা শোয়েব মালিককে ১২ রানের বেশি করতে দেননি ভুবি। ১৬ বলে ১২ রান করেন মালিক। ৪০তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ২৪৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এ অবস্থায় রানের চূড়ায় উঠার স্বপ্ন দেখছিলো পাকিস্তান।

পাকিস্তানের সেই স্বপ্নে ধাক্কা দেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে আক্রমনে এনে ইনিংসের চিত্র পাল্টে দেয়া ভারতের অকেশনাল অফ-স্পিনার কেদার যাদব। ৫২ বলে ৪৬ রান করা বাবরকে শিকার করেন তিনি। এতে ৩শ’র মধ্যে পাকিস্তানকে আটকে রাখার অসম্ভব চিন্তা করে ভারত। কিন্তু সেটি হতে দেননি মোহাম্মদ হাফিজ ও ইমাদ ওয়াসিম।

পঞ্চম উইকেটে ৪৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭১ রান যোগ করেন হাফিজ-ওয়াসিম। ফলে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের বড় সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন হাফিজ। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিলো। অন্যপ্রান্তে ১টি করে চার ও ছক্কায় ২১ বলে অপরাজিত ২৫ রান করেন ওয়াসিম। ভারতের ভুবেনশ্বর, পান্ডে ও কেদার ১টি করে উইকেট নেন।

ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে এটাই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।  এর আগে শুরুতে ব্যাট করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় রান ছিল ৩২৯।

অনেক জল্পনা-কল্পনা. আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের আগে আলোচনায় ছিল ভারতের টপ-অর্ডার বনাম পাকিস্তান পেস বোলিং। কেননা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ভারতের টপ-অর্ডার ব্যাটিং এবং পাকিস্তানের পেস বোলিং অ্যাটাক সেরা পারফরমেন্সই প্রদর্শনই করেছে। ভারতের টপ-অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি রানের ফুলঝুড়ি ফুটিয়েছেন।

কিন্তু সব হিসেব নিকেশ ভুল প্রমাণ করে আজ যেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ‘ভুতে’ পেয়েছিল! আর এই ভুতই ছিল পাকিস্তানের বোলিং লাইন-আপ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ইনিংস: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৪ (আজহার ৫৯, জামান ১১৪, বাবর ৪৬, মালিক ১২, হাফিজ ৫৭*, ওয়াসিম ২৫*; ভুবনেশ্বর ১/৪৪, বুমরাহ ০/৬৮, অশ্বিন ০/৭০, পান্ডিয়া ১/৫৩, জাদেজা ০/৬৭, কেদার ১/২৭)

ভারত ইনিংস: ৩০.৩ ওভারে ১৫৮ (রোহিত ০, ধাওয়ান ২১, কোহলি ৫, যুবরাজ ২২, ধোনি ৪, কেদার ৯, পান্ডিয়া ৭৬, জাদেজা ১৫, অশ্বিন ১, ভুবনেশ্বর ১*, বুমরাহ ১; আমির ৩/১৬, জুনায়েদ ১/২০, হাফিজ ০/১৩, হাসান ৩/১৯, শাদাব ২/৬০, ওয়াসিম ০/৩, জামান ০/২৫)

ফলাফল : পাকিস্তান ১৮০ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: ফখর জামান(পাকিস্তান)।

সর্বোচ্চ রান : শিখর ধাওয়ান (ইন্ডিয়া)

সর্বোচ্চ উইকেট শিকার : হাসান আলী (পাকিস্তান)।

ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, কেদার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার ও জাসপ্রিত বুমরাহ।

পাকিস্তান একাদশ: আজহার আলি, ফখর জামান, বাবর আযম, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, সরফরাজ আহমেদ, ইমাদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ আমির, শাদাব খান, হাসান আলি ও জুনায়েদ খান।

পুরোনো সংবাদ

খেলাধুলা 2767586638751684362

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item