সৌম্যর ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটের বিশাল জয় টাইগারদের

ডেস্কঃ
ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের দৃঢ়তায় ৮ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে টাইগারার। দারুণ খেলতে থাকা তামিম হাফসেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থাকলে ফিরে গেলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

আজকের ম্যাচে সৌম্য সরকার চাইলে আফসোস করতেই পারেন। আয়ারল্যান্ডের রানটা আরেকটু বেশি হলে সেঞ্চুরিটা হয়তো পেয়েই যেতেন এই বাংলাদেশি ওপেনার। তবে দুর্দান্ত জয়ের দিনে আক্ষেপ ছুঁয়ে যাওয়ার কথা নয় সৌম্যকে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয় মাশরাফিদের। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার। টানা দুই ম্যাচের হতাশা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দুর্দান্ত জয় দরকার ছিল বাংলাদেশের। বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের পর সৌম্য, তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানের দৃঢ়তায় আয়ারল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে স্বস্তি ও ছন্দ ফিরে পেয়েছে টাইগাররা।

ডাবলিনের ম্যালাহাইডে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারের ২১ বল বাকি থাকতেই ১৮১ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ১৩৭ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন ব্যাক টু ব্যাক হাফসেঞ্চুরি করা সৌম্য।
৬৮ বলে ১১টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে হার না মানা এই ইনিংস খেলেন তিনি। এছাড়া তামিম ৫৪ বলে ৪৭ সাব্বির করেন ৩৪ বলে ৩৫ রান। মুশফিক ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে একটি করে উইকেট নেন কেভিন ও'ব্রায়েন ও ব্যারি ম্যাকার্থি। ইনিংসের ১৫ ওভারের মধ্যেই ৬ জন বোলার ব্যবহার করে ফেলেন আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড। কিন্তু সৌম্য-তামিমদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন হতাশাই সঙ্গী হয়েছে স্বাগতিকদের।

১৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে স্বাচ্ছন্দে খেলতে থাকেন তামিম ও সৌম্য। তামিম শুরু থেকেই সাবলীল থাকলেও সৌম্য ছিলেন কিছুটা ধীর। টিম মুরতাগের করা অষ্টম ওভারের তৃতীয় বল মিড-উইকেটের ওপর দিয়ে সীমানাছাড়া করে পুরোপুরি ছন্দ ফিরে পান সৌম্যও।

৮ ওভার শেষে তামিম ২৪ ও সৌম্য ১৩ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন। এরপরই যেন তামিমকে ছাড়িয়ে যাওয়া মিশন শুরু করেন সৌম্য। ব্যারি ম্যাকার্থির করা নবম ওভারে একটি ছক্কা ও দুটি চার হাঁকিয়ে তামিমকে ছাড়িয়ে যান এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। আর বাংলাদেশের রানও বেড়ে যায় ‘হু হু’ করে।

১৩ ও ১৪তম ওভারে দুটি চার হাঁকিয়ে সৌম্যকে ছাড়িয়ে যান তামিম। তবে ১৪তম ওভারেই সাজঘরে ফিরতে হয় টাইগার ওপেনারকে। কেভিন ও'ব্রায়েনের করা ওভারের পঞ্চম বল তামিমের ব্যাটের কানায় লেগে নেইল ও'ব্রায়েনের হাতে আশ্রয় নিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।

দলীয় ৯৫ রানের মাথায় তামিম ফিরে গেলেও সেটি ম্যাচে কোনো প্রভাব ফেলেনি। দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির ও সৌম্য ৭৬ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরের কাছাকাছি নিয়ে যান। দলীয় ১৭১ রানের মাথায় সাব্বির স্কয়ার লেগ বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে ১১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন সৌম্য।

এর আগে ডাবলিনের ম্যালাহাইড স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠান মাশরাফি। শুরুর দিকে বাংলাদেশি বোলারদের আক্রমণের মুখে চাপে পড়লেও মাঝপথে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে স্বাগতিকরা। কিন্তু মোস্তাফিজ, সানজামুল ও মাশরাফির দারুণ বোলিংয়ে ৪৬.৩ ওভারে ১৮১ রানেই গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। ফলে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ১৮২ রান। ৯ ওভার বল করে মাত্র ২৩ রানের বিনিময়ে একাই গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট পকেটে পুরেছেন কাটার মাষ্টার মোস্তাফিজ।
এছাড়া মাশরাফি ও অভিষিক্ত সানজামুল দুটি এবং সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন নেন একটি করে উইকেট।

ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরুতেই সফলতা পায় বাংলাদেশ। ওপেনার পল স্টারলিংয়ে হারিয়ে শুরুতেই হোঁচট খায় আয়ারল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ও এড জয়সে মিলে দারুণ জুটি গড়ে স্বাগতিকদের বিপদমুক্ত করেন। তবে মোসাদ্দেক হোসেন বোলিংয়ে এসেই পোর্টারফিল্ডকে আউট করে বাংলাদেশকে শিবিরকে ফের আনন্দে ভাসান।
এরপর বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই অ্যান্ড্র ব্যালব্রিনকে আউট করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে এনে দেন সাকিব। তবে ভড়কে যায়নি আয়ারল্যান্ডও। জয়সে ও নেইল ও'ব্রায়েনের মধ্যকার দারুণ জুটিতে বিপদ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে স্বাগতিকরা। তবে মোস্তাফিজ আক্রমণে এসে এই বিপজ্জনক জুটি ভাঙলে স্বস্তি ফেরে টাইগার শিবিরে। পরের ওভারে অভিষিক্ত সানজামুলের আঘাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় টাইগাররা।


বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমান তুলে নেন স্টারলিংয়ের উইকেট।  দ্বিতীয় স্পেলেও তিনি ফেরান আয়ারল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান নিল ও’ব্রায়েনকে (৩০)। থার্ড ম্যানে তামিম ইকবালের সহজ ক্যাচ হন আইরিশ ব্যাটসম্যান। পরের বলে কেভিন ও’ব্রায়েনের উইকেটটি পেতে পারতেন মোস্তাফিজ। কয়েক ইঞ্চির জন্যে সাব্বির রহমান ক্যাচটি লুফে নিতে পারেননি। বাংলাদেশ আউটের আবেদন করলে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বল মাটিতে লেগে সাব্বিরের হাতে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ৩১.৪ ওভারে আর ব্যর্থ হননি।  কেভিনকে তালুবন্দি করেন মোসাদ্দেক হোসেন।  কেভিন বিদায় নেন ১০ রানে।   এক ওভার বিরতি দিয়ে ফের উইকেট নেন মোস্তাফিজুর।  বিতর্কিত ভাবে দেওয়া এই আউটে ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম।  ৪১ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান আয়ারল্যান্ডের।

এই সিরিজে বাকিরা সাফল্য পেলেও নিষ্প্রভ ছিলেন সাকিব। কিন্ত এই ম্যাচ দিয়ে ফিরে পেয়েছেন নিজেকে।  ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম উইকেট পান সাকিব আল হাসান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে অ্যান্ডি ব্যালবার্নিকে (১২) বোল্ড করেন তিনি। মোসাদ্দেক হোসেন তার আগে নেন আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট। আগের ওভারেই উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডকে শর্ট এক্সট্রা কভারে জীবন দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে মাশরাফি মুর্তজাকে উইকেটবঞ্চিত করার পর নিজেই সেই আক্ষেপ কাটান তিনি। ক্রিজে শক্তিশালী হয়ে ওঠা আয়ারল্যান্ড অধিনায়ককে ফিরতি ক্যাচ বানিয়েছেন মোসাদ্দেক। ২৫ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২২ রানে আউট হন পোর্টারফিল্ড।

আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন এড জয়সে। এছাড়া নেইল ও'ব্রায়েন ৩০, জর্জ ডকরিল ২৫ ও উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড করেন ২২ রান।

এ ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ পড়লেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার জায়গায় অভিষেক হয়েছে আরেক অলরাউন্ডার সানজামুল ইসলামের। ১৭ বছর বয়সী সানজামুল বাঁহাতি স্পিনার। পাশাপাশি ভালো ব্যাটও করেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সানজামুলের ব্যাটিং গড় ২৩.৩৬। আর ২৮.৫৪ গড়ে উইকেট নেন ২১২টি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ১৬.৮৬। আর ২৭.৪৬ গড়ে ৬৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৮০টি।

উল্লেখ্য, ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টির কারণে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার। আগামী রবিবার ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে আয়ারল্যান্ড। বুধবার নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

প্রসঙ্গত, ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষ করে ২৫ মে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নিতে ইংল্যান্ডের বিমান ধরবে বাংলাদেশ। ১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ইংলিশরা ছাড়া গ্রুপে বাংলাদেশের অপর দুই প্রতিপক্ষ হলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মোসাদ্দেক হোসেন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটকিপার), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সানজামুল ইসলাম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।

আয়ারল্যান্ড একাদশ: উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড (অধিনায়ক), পল স্টারলিং, নিল ও’ব্রায়েন (উইকেট রক্ষক), অ্যান্ড্রি বালবির্নি, কেভিন ও’ব্রায়েন, গ্যারি উইলসন, এড জয়েস, জর্জ ডকরেল, ব্যারি ম্যাকার্থি, টিম মুরতাঘ ও পিটার চেজ।

পুরোনো সংবাদ

খেলাধুলা 7058589608189154636

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item