পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ :ডিমলা থেকে উদ্ধার হলো সিলেটের কিশোরী

জাহাঙ্গীর আলম রেজা,ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ :
সিলেট জেলার বিয়ানী বাজার থেকে অপহরন হওয়া এক কিশোরীকে উদ্ধার করে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।আজ মঙ্গলবার নীলফামারীর ডিমলা থানার মাধ্যমে কিশোরীকে তার বাবার হাতে তুলে দেন ডিমলার থানার হাট বিজিবি কোম্পানী।অপহৃত কিশোরী ঘটনার বিবরন তুলে ধরে জানান,দুই বছর পূর্বে ৭ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে আর করতে পারেনি সে। কিশোরী রুমানা সিলেট জেলার বিয়ানী বাজার উপজেলার ৩ নং দুবাগ ইউনিয়নের খাড়াপাড়া গ্রামের  আছদ্দর আলীর কন্যা।

অভাব আর অনটনের মধ্যে বাবা-মায়ের সংসারে বড় হতে থাকে সে। এরই মধ্যে একই জেলার জাকিগঞ্জ উপজেলার ফরচুয়া গ্রামের সফিক উদ্দিনের পুত্র পাচার কারী দলের সদস্য লায়েক আলী (২৮)’র চোখ পড়ে এই কিশোরীর দিকে। লায়েক আলী ঘোরা ফেরা করতে থাকে রুমানাদের বাড়ীর আশে পাশে। এক পর্যায় সে রুমানার বাবার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিতে থাকে ঐ কিশোরীকে। মোবাইলে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে কথা অল্প কিছুদিন।

এরপর কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুঁসলিয়ে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে পাচারকারীর সদস্য লায়েক তাকে নিয়ে গত ১১ এপ্রিল সন্ধায় বাড়ী থেকে গোপনে অপহরণ করে এনে তার খালাতো ভাই সুমনকে সাথে নিয়ে পাড়ি জমায় উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের আঙ্গোরপোতা সরদারপাড়া গ্রামে। লায়েক ও সুমন দুজন মিলেই ঐ কিশোরীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রাত্রী যাপন করে। কিশোরীটিকে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করে তাদের দুজনের সাথেই শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ দিয়ে প্রায় ৫দিন ধরে জোর পূর্বক ধর্ষন করতে থাকে পাচারকারী দলের সদস্যরা।

 এসময় ভূল বুঝিয়ে কিশোরীকে বিয়ে করবে করবে বলে আশ্বাস দিয়ে সময় কাটাতে থাকে তারা। এদিকে কিশোরীর বাবা আছদ্দর আলী মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে বিয়ানী বাজার থানায় নিখোঁজের বিবরণ দিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নম্বর-৬৭১ তাং ১৬ এপ্রিল/১৭। গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সীমান্তে কিশোরীর গলায় ও মুখে ওড়না পেঁচিয়ে ভারতের অভ্যান্তরে পাচারের সময় টের পায় সে। তাকে পাচার করা হচ্ছে অন্যের হাতে বিষয়টি টের পেয়ে জীবনের শেষ চেষ্টা করে তাদের হাত থেকে ছুটে পালিয়ে আসে।

এ সময়  ভারত সীমান্তে পাশেই দহগ্রাম সরদারপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিনের পুত্র জাহিদুল ইসলামের বাড়ীতে এসে মাটিতে লুটিয়ে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। হটাৎ মুখ ওড়না বাঁধা অবস্থায় একটি ছোট্ট মেয়েকে বাড়ীতে দেখে বাড়ীর মালিক ও এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পড়ে। কিছু সময় পর কিশোরীর জ্ঞান ফিরে আসলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার সিলেট অঞ্চলের ভাষা কেহই বুঝতে পারছিলো না। ফলে পরের দিন ১৬ এপ্রিল জাহিদুল তার ভগ্নিপতির বাড়ী নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ের দ: খড়িবাড়ী গ্রামে মৃত জবেদ আলীর পুত্র শাহিন ইসলামের বাড়ীতে নিয়ে আসে অপহৃত মেয়েটিকে। কিশোরী মেয়েটিকে নিয়ে উক্ত গ্রামে এসে আশ্রয় নেওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। শুরু আালোচনা সমালোচনার ঝড়।

এ ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল বিকেলে সরজমিনে দ: খড়িবাড়ী গ্রামে গিয়ে কথা হয় অপহৃতার সাথে। সে সংবাদকর্মীদের কাছে কান্নাজড়িত কন্ঠে উল্লেখিত ঘটনার বিবরণ তুলে বলে, আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে যেতে চাই। এ ব্যাপারে টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়াররম্যান রবিউল ইসলাম শাহিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মেয়েটির সাথে কথা বলে তার বাবার ঠিকানায় যোগাযোগ করা হয়েছে। খবর পেয়ে কিশোরী মেয়েটির বাবা, মামা ও আত্বীয় স্বজনেরা  গত ১৭ এপ্রিল দিন গত গভীর রাতে এসে পৌছান। আজ  ১৮ এপ্রিল সকালে স্থানীয় সাধারণ ও বার্নিরহাট ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতিতে মেয়েটি তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি আরো জানান,মেয়েটিকে তার বাবা কাছে জিম্মায় হস্তান্তর করা হলেও আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই মেয়েটিকে নিয়ে যেতে পারবে তার বাবা।

 এ ঘটনায় কিশোরী মেয়েটিকে নিয়ে থানার হাট কোম্পানী কমান্ডার মোঃ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সঙ্গীয় বিজিবি সদস্যরা  ডিমলা থানায় হস্তান্তর করেন। এ ব্যাপারে ডিমলা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিজিবি’র পক্ষ থেকে মেয়েটিকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু মেয়েটির মিসিং ডায়েরী সিলেটের বিয়ানী বাজার থানায় করা হয়েছে সেহেতু মেয়েটিকে সেখানেই পাঠানো হচ্ছে। এ ঘটনায়  বিয়ানীবাজার থানায় মামলা করতে পারবেন মেয়েটি পরিবার।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6145823825464447752

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item