বিজ্ঞান শূন্য হতে পারে চিলাহাটীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ প্
রাথমিক বিদ্যালয়েই শিশুদের ভালো করে গড়ে তোলা হয়না। একটি শিশুর যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেজ বা ভিত গড়ানো না হয় তবে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করার কথা নয়।করতে পারবে না। আমরা তো শিশুদেরকে গড়াতে পারবো না। শুধু পূর্বের মেধাটাকে ঘঁষামাজা করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
কথাগুলো বলছিলেন, ডোমার উপজেলাধীন চিলাহাটি গাল্স স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ আইয়ূব আলী। এভাবে চলতে থাকলে চিলাহাটি একদিন বিজ্ঞান শূন্য বিদ্যালয়ে পরিনত হবে মন্তব্য করে অধ্যক্ষ বলেন, ছাত্ররা এখন বিজ্ঞানে পড়াশুনা করতে ভয় পায়।  ভয়ে কেউ বিজ্ঞান নিতে চায় না। বিদ্যালয়ের অনেক ভালো ভালো শিক্ষার্থী বলে, স্যার বিজ্ঞানে পড়বো না; অনেক টাকা খরচ; বাবা-মা ব্যয় করতে পারবেনা; ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই ভীতিটা ব্যয়ের নয়; এটা ভিত্তির। ছাত্রদের প্রাথমিকে লেখাপড়ার মূলভিত্তি যত মজবুত হবে তত ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে আতœপ্রকাশ করবে।
চিলাহাটির নিকটবর্তী  ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি মহাবিদ্যালয় জরিপ করে দেখা যায়, নবম শ্রেণীতে প্রায় ১হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১২০-১৩০জন ছাত্রছাত্রী বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এতে দেখা যায়, ১২-১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান পড়তে ইচ্ছুক। তবে নবম শ্রেণীর নিবন্ধন করার সময় দেখা যায় এই সংখ্যা কমে আসে। জুনে নিবন্ধন শুরু হয়। এই ৬মাসের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ছাত্র কমে যায়। আবার শিক্ষকগণ নিজেরাই কিছু কিছু ছাত্রকে নিরুৎসাহিত করেন বিজ্ঞান পড়তে। কারণ হিসেবে তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার মূলভিত্তিকে দায়ী করেন। 
জরিপে দেখা গেছে, বিজ্ঞানে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানাগার পর্যাপ্ত নেই। একটি ল্যাবরেটরীতেই সব বিষয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। আবার এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার আগে করানো হয় না। পরীক্ষার প্রয়োজনে পরীক্ষার কয়েকদিন পূর্বে করানো হয়। আবার অনেক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষকের অপ্রতুলতাও রয়েছে। ১/২জন বিএসসি-কেই পদার্থ-রসায়ন-জীববিদ্যা পাঠ নিতে হয়। মাধ্যমিকে প্রশিক্ষক নাথাকায় তাঁদেরকেই বিজ্ঞানাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। 
তবে ঐতিহ্যবাহী চিলাহাটি মার্চেন্টস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, পূর্বের তুলনায় অত্র বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানে পড়ূয়া ছাত্রছাত্রী বেশি। এবারে নবম শ্রেণীতে প্রায় ১’শ ৮০জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রায় ৮০জন বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। যা আগের তুলনায় অনেক। কিন্তু উক্ত বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মাত্র ৩৫-৪০জন শিক্ষার্থী বিজ্ঞানে পড়তে ইচ্ছা পোষণ করে।
এদিকে চিলাহাটি সরকারী মহাবিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬-’১৭ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে মাত্র ১৪জন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। মহাবিদ্যালয়টির একাদশ শ্রেণীতে মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১’শ ৬৬ জন। তবে বিজ্ঞান বিভাগে ১৪জন ছাত্রছাত্রীর বিপরীতে মাত্র ১জন শিক্ষক রয়েছেন। তিনি আবার রসায়ন বিভাগের। মহাবিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ৯জন।
মহাবিদ্যালয়টির একাদশ শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগে পড়ূয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, গ্রামের বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানে পড়ে যাহোক ভালো ফলাফল না করলেও বিজ্ঞানে পড়ার খুবই ইচ্ছা আছে। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নেই। অদূর ভবিষ্যতে চিলাহাটিতে আর কোন ছাত্রছাত্রী বিজ্ঞান বিভাগে এভাবে পড়তে চাইবে না।
সচেতন মহল বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার মূল ভিত্তি গড়ানো, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক প্রতুলতা এবং প্রত্যেক বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক বিজ্ঞানাগার, আলাদা বিজ্ঞান ভবন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান ভীতি দূর করতে পারলেই বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে। নয়তো বিজ্ঞানের ভিত্তি শূণ্য হয়ে যাবে।।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 358867628296096663

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item