সৈয়দপুরের কৃষক আহসান-উল-হক বাবুর চমক, বিশেষ পদ্ধতিতে ঐতিহ্যবাহী কালিজিরা ধানের চাষ

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর থেকে:

 সৈয়দপুরে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে কৃষক আহসান-উল-হক বাবু প্রচলিত নিয়মের বাইরে ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক বিশেষ পদ্ধতিতে উত্তরাঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ, কালিজিরা ও বালাম জাতের ধানের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করেন। এর আগে বালাম  ও কাটারিভোট জাতের ধান উঠে গেছে।  সে সব ধান কর্তন করে রেকর্ড পরিমাণ ফলন পাওয়া গেছে। আর ১৫ শতক জমিতে আবাদকৃত কালিজিরা ধানের শস্য কর্তন করা হয়। আজ রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে  উপজেলার  ১ নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ করা ঐতিহ্যবাহী কালিজিরা ধানের কর্তন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে দেখা যায় এতে ফলন মিলেছে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৯ দশমিক ৮৪ মন, যা হেক্টরে ২ দশমিক ৯ টন। এ মাঠ দিবসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহ্ আলম, নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ গোলাম মো. ইদ্রিস, সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হোমায়রা মন্ডল,উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব দাস, আসাদুজ্জামান আশাসহ এলাকার শতাধিক চাষি উপস্থিত ছিলেন।  
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ-পরিচালক গোলাম মো. ইদ্রিস বলেন, চাষি আহসান-উল-হক বাবু এ অঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী কালিজিরা ধান পরীক্ষামূলক বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ করে  প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। ধান চাষের পাশাপাশি তিনি জমির উর্বরা শক্তি রক্ষার জন্য রাসায়নিক সারের বদলে পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। এতে রেকর্ড পরিমাণ ফলনও পাওয়া গেছে। এতে করে কালিজিরা ধান আবাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।                                                           
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময়ে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ, কালিজিরা ও বালাম জাতের ধান চাষের ব্যাপক প্রচলন ছিল। এ ধানের জাতগুলো চাষাবাদ করে কৃষকরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলন এবং ভাল দাম পেতেন। কিন্তু কালের বির্বতনে উল্লিখিত জাতের ধানগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের ফলে বর্তমানে পুরাতন জাতের ধান চাষাবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামের বাসিন্দা আহসান-উল-হক বাবু বিলুপ্তপ্রায় জাতের ধানের চাষাবাদ ফিরিয়ে আনতে এবং ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহন করেন। সজীব সীড্স নামের তাঁর একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তাঁর। এক বিশেষ পদ্ধতিতে তিনি চলতি রোপা আমন মৌসুমে বিলুপ্তপ্রায় কাটারিভোগ ১৫ শতক, কালিজিরা ১৫ শতক ও ২৫ শতক জমিতে বালাম জাতের ধানের পরীক্ষামুলক প্রদর্শনী প্লট করেন।
আহসান-উল-হক বাবু জানান, ইন্টারনেটে কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে ‘রেইজ্ড বেড এন্ড ফারো’ পদ্ধতি খুঁজে পান তিনি। সেটি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি সে অনুযায়ী দেশের ঐতিহ্যবাহী ওই তিন জাতের ধান চাষাবাদের মনস্থির করেন। সিলেটের এ বি কৃষি প্রকল্প নামের একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিলুপ্ত জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করেন।
বিশেষ পদ্ধতিতে ধান চাষের গল্প বলতে গিয়ে চাষী জানান, সচরাচর ধান চাষ পদ্ধতিতে চারা রোপনের সময় জমি সমতল এবং ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পানি জমিয়ে রাখা হয়। কিন্তু কাটারিভোগ ধানের চাষে মূল জমিতে ‘রেইজ্ড বেড এন্ড ফারো’ পদ্ধতিতে অর্থাৎ আলু চাষের সময় দুই পাশ থেকে যেমন মাটি তুলে উঁচু বেড তৈরি করা হয় তেমনি কালিজিরা ধান চারা রোপনের আগে উঁচু বেড তৈরি করে নেওয়া হয়। ওই বেডের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরে মাত্র একটি করে ধানের চারা রোপন করা হয়েছিল। একটি চারা থেকে ক্রমান্বয়ে সর্বোচ্চ ১৫০টি কুঁশি পাওয়া যায়। তার মধ্যে কার্যকরী শীষের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯০টি এবং সর্বনি¤œ ৪৫টি। আর একেকটি ধানের শীষে সর্বোচ্চ ৩১০টি এবং কমপক্ষে ১৭৫টি ধানের দানা পাওয়া যায়। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পূর্ণ জৈব সার প্রয়োগ করা হয়। জৈব সারের মধ্যে রয়েছে ভার্মি কম্পোষ্ট, বায়োগ্যাস  স্লারি, খৈল, হাঁড়ের গুঁড়া প্রভূতি।
তিনি জানান, সংগৃহিত বীজ বীজতলায় বপনের ১৪ দিনের মধ্যে তা জমিতে লাগানো হয়। গত ২২ জুন বীজতলা থেকে তুলে জমিতে ওই চারা লাগানো হয়। তিন ফুট প্রস্থের একটি বেডে সারিবদ্ধভাবে চারা লাগানো হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১ দশমিক ৮ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ১ দশমিক ৩ ফুট। রোপনের সময় একটি করে চারা লাগানো হলেও কাটারিভোগ ও কালিজিরা ধানে সর্বোচ্চ ১৫২টি কুশি এবং বালাম জাতে ১২২টি কুশি বের হয়। চারা রোপনের ১৪০দিন থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলা যায় এবং ফলনও মিলছে আশাতীত।
চাষি আহসান-উল-হক বাবু বলেন, ‘বিলুপ্ত জাতের ধান চাষাবাদ ফিরিয়ে আনাই আমার মূল উদ্দেশ্য। তাছাড়াও আধুনিক এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে বেশি ফলনের পাশাপাশি বীজ সংরক্ষণ করে তা সাধারণ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।’ এতে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং আবারও কালিজিরা ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলে জানান তিনি।          

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4544802759370985061

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item