হরিপুর সীমান্ত এলাকা আলোকিত করছে বিজিবি

জসিমউদ্দিন (ইতি) হরিপুর, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ

বিদ্যুতের আলোকি সেটা আমরা কখনো দেখেনি। বিকেল হলেই আমাদের সীমান্ত এলাকায় অন্ধকার নেমে আসে। মা সারাদিন ক্ষেতে কাজ করার পর সন্ধ্যায় কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে আমিও ঘুমিয়ে পড়তাম। এখন আমাদের এলাকায় রাতের বেলায় অন্ধকার হয় না। সবার বাড়ী এখন মিট মিট করে আলো জ্বলছে। সেই আলোতে আমি এখন পড়ালেখা করি। নিয়মিত স্কুলে যায়। কথা গুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার বেতনা সীমান্তের চন্ডীপুর মানিক খাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী রীপা আক্তার। রীপার মতো অনেক শিশু এখন নিয়মিত বিদ্যুতের আলোতে পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে সীমান্ত এলাকা। সীমান্ত এলাকা এই গ্রামে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুত পৌছে দিয়েছে। ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন। সরে জমিনে দেখা গেছে, হরিপুর সীমান্ত এলাকায় তেমন কোন কর্মস্থানের ব্যবস্থা নেই। এসব এলাকার মানুষ নানা রকম সীমান্তে চোরাচালানের সাথে জড়িত। সীমান্ত এলাকায় বিদ্যুতের সুযোগ না থাকায় বিকেল হতে অন্ধকার নেমে আসে। সেই অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় চোরাচালানি। তারা রাতের বেলায় সীমান্তের ঐ পাড়ে চলে যায়। ভোর বেলায় গরু, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য চোরায় পথে এই দেশে নিয়ে আসে। অনেক সময় ভারতী রক্ষী বাহিনীর হাতে হতাহতির ঘটনা ঘটেছে অনেক। এই এলাকায় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সহজে। তাই ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সীমান্ত এলাকায় মানুষকে সচেতনতা ও অপরাধ দমনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়। যাতে সহজে মানুষ সব অপকর্ম ছেড়ে ভাল পথে উপার্জন করে। শিশুরা যেন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে সেই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিজিবি। সেই লক্ষ্যে হরিপুর উপজেলার বেতনা সীমান্তে মানিক খাড়ি গ্রামে সীমান্ত অপরাধ থেকে সরিয়ে ভাল পথে উপার্জন করার জন্য ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেমন সীমান্ত এলাকা গুলিতে সোলারপ্ল্যান প্রকল্প, নদীতে মাছের পোনা চাষ, গরুর খামার, মধু চাষ ও সবজি চাষ ইত্যাদি। সিরাজুল ইসলাম জানান আমি আগে সীমান্তের ঐ পাড়ে চোরায় পথে গরু আনতাম। এখন ঐ পাড়ে গ্রামের কেউ যায় না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা রাতে বিদ্যুতের আলোয় করে। পরের দিন স্কুলে যায়। আমি নদীতে মাছের পোনার চাষ করি। এখন আর বিএসএফ এর গুলি খাওয়া ভয় নেই। অনেক ভাল আছি পরিবার নিয়ে। জয়নুল নামে এক ব্যক্তি জানান আমার পরিবারের অনেকে চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিল। ১০ বছর আগে চোরাচালানের সময় আমার বড় ভাই মারা যায়। উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। বিজিবি’র উদ্যোগে আমরা পরিবারের সবাই চোরাচালান বন্ধ করে সৎভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করছি। এখন নিজ জমিতে সবজি চাষ, গরু পালন ও মাছ চাষ করছি। ভারতের চোরাচালানে কেউ যায় না এখন। উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, আগে চোরাচালানে অনেকের প্রাণ গেছে । কিন্তু এখন আর কেউ চোরাচালান করে না । সীমান্ত এলাকায় কর্মস্থান না থাকায় চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছিল। ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন এর সহযোগিতায় সীমান্তে কর্মস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলাদেশ বিজিবি এ এলাকার মানুষকে ভাল পথে উপার্জন করার পথ দেখিয়েছে। তাই জেলার প্রতিটি সীমান্তে যদি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাহলে চোরাচালান নির্মুলে গুরুত্বপূর্ণভাবে ভূমিকা পালন করবে। ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন এর পরিচালক তুশার বিন ইউনুস জানান, আমি যোগদানের পর এই এলাকার এক ব্যক্তি চোরাচালান করতে গিয়ে বিএসএফ এর গুলিতে মারা যান। দেখলাম এদের কর্মের কোন ব্যবস্থা না থাকায় এরা চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে তাই তাদের কর্মস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। এখন আর চোরা চালানি হয় না।

পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 755465812614584257

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item