দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে বন, ফসলি জমি ও বসতি ঘেঁষে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা ॥

 মোঃ মেহেদী হাসান ফুলবাড়ী দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সংরক্ষিত বন, ফসলি জমি আর বসতি ঘেঁষে অবৈধ ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে বেশ কিছু ইটভাটা। বন বিভাগের বাধা এবং প্রশাসনকে জানিয়েও বন্ধ হয়নি ইট ভাটা নির্মান। বনবিভাগের আওতায় উজাড় হচ্ছে গাছ। পরিবেশের ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
দিনাজপুর বন বিভাগের চরকাই রেঞ্জের হরিপুর বিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার  জানান,  হরিপুর বিট কার্যালয়ের ৫’শ গজের মধ্যে বনের ধারে হরিপুর মৌজার ২১৭ এবং ২১৮ নং দাগের মধ্যে সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম, ইসলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি মোঃ সামছুল ইসলাম, মোঃ ওয়াজেদ আলী এবং মোঃ মোস্তাফিজার রহমান ইটভাটা নির্মাণ করছেন। হরিপুর বিটের অধিনে বন বিভাগের  ১ হাজার ৭৬৭ দশমিক ৪৪ একর বন রয়েছে।   ইটভাটা নির্মাণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায়  বন বিভাগের পক্ষ থেকে  বারবার বাঁধা দিয়েও কোন কাজ হয়নি।  মোঃ সামছুলের নামে বন বিভাগের গাছ কাটার মামলাও রয়েছে আদালতে। বিষয়টি লিখিতভাবে গত ১৮ অক্টোবর নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ বজলুর রশীদ সহ বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বন সম্পদ রক্ষার জন্য অবহিত করা হয়েছে।
বিট কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার  জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী বনের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা নির্মাণ করা যাবেনা। নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে না”
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হরিপুর বিট কার্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে ফসলি জমির মাঝে ইটভাটা নির্মানের কাজ করছে।  ইটভাটাটির প্রায় ৫০ হাত উচ্চতার চিমনি তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে। কোন প্রকার বেষ্টনি বা নিরাপত্তা ছাড়াই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে তিনজন শ্রমিক পঞ্চাশহাত চিমনির উপরে কাজ করছে।  ট্রাকটরে করে বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে মাটি। নির্মিত ইটভাটাটির চারপাশেই রয়েছে বসতি ঘর বাড়ি।
ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকরা জানায়, গত ১২দিন আগে তাঁরা ইটভাটা নির্মানের জন্য আসে। ১৫জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছে। হরিপুর গ্রামের মোঃ রফিক মেম্বর তাঁদের কাজে নিযুক্ত করেছেন।
হরিপুর গ্রামের মুদি দোকানদার মোঃ সাইদুর রহমান বলেন বলেন, চোখের সামনে ইটভাটা হলে ধুমা আর ছাইতো গাঁওয়োতে কেঙ্কেরে থাকবি। চেয়ারম্যানোক (ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান)  কনো বন্ধ করবা, কোটে বন্ধ হলো। দিন দিন তো জোরছে কাজ চলোছে।” হরিপুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যুবক জানান, ইটভাটা যারা নির্মাণ করছে, তাঁরা পয়সাওয়ালা ও প্রভাবশালী।  টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে রেখেছে।
জানতে চাইলে মুঠোফোনে গোলাপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রাশেদুল কবির জানান, হরিপুরে বন, ফসলি জমি ও গ্রামের পার্শ্বে অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণের খবর তিনি লোকমুখে শুনেছেন। সেটি হলে অবশ্যই বনসহ পরিবেশের ব্যপক ক্ষতি হবে। তবে গ্রামবাসী বা বনবিভাগের কেউ তাঁকে মৌখিক বা লিখিত ভাবে কিছু জানায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সরেজমিনে রফিকুল ইসলাম ও জয়নালের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে ইসলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি সামছুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি যৌথ ভাবে ইটভাটা নির্মানের কথা স্বীকার করেন। ইটভাটা নির্মানে পরিবেশ ছাড়পত্র বা জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি মোঃ রফিকুল ইসলামের মুঠোফোন নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।মোঃ রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ  জানান, তিনি প্রশিক্ষণে রংপুর  রয়েছেন। প্রশিক্ষণ থেকে এসে ওই ইটভাটা উচ্ছেদে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানান, পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কেউ কোন ইটভাটা নির্মাণ করতে পারবে না। পরিবেশ আইন অমান্য করে কাউকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হবেনা। আইন লংঘন করে কেউ ইটভাটা করলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 7228682842626233164

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item