লক্ষীর অলক্ষী সংসারে! আলেদো এডি রেংগে আদি কষ্ট

মামুনুর রশিদ মেরাজুল পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে ঃ

অভাবের কষাঘাতে জর্জরিত আদিবাসী শ্রীমতি লক্ষী সরেন অলক্ষী পিছু লেগেছে। তার পরিবারের অভাবের কথা তুলে ধরে লক্ষী সান্তাল ভাষায় বলেন- “আলেদো এডি রেংগে আদি কষ্ট, উপবৃত্তিকো এমালেখায় গিদিরো পাড়হা ওচো দাড়ে আকোয়া”। অর্থাৎ ‘হামার খুব অভাব আছে, উপবৃত্তি দিলে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারতাম’। ভুমিহীন লক্ষী সরেন তার ৩ সন্তানকে স্কুল, কলেজ পর্যায়ে পড়াচ্ছেন। কিন্তু তাদের ভাগ্যে উপবৃত্তি জোটেনি। পীরগঞ্জের আদিবাসী পল্লী বিরামপুরে লক্ষীর বসবাস।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চতরা ইউনিয়নের আদিবাসী মৌজা কাঙ্গুরপাড়ার অন্তর্ভূক্ত বিরামপুর গ্রাম। বিরামপুরে শতাধিক আদিবাসীর বাস। তাদের অনেকেই আজ নিজ ভুমে পরবাসী হয়েছেন। নিজের জমি বিক্রি করায় এখন সেই জমিতেই মজুরী দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। অনেকেই ভুমিহীন হয়েছে বা ভুমিহীন হয়ে আছেন। ওই গ্রামেই লক্ষী সরেনের বসবাস। লক্ষীর স্বামী রবিন কিসকু (৪২) রিক্সা চালক। তিনি কখনো মাছ ধরা, অন্যের জমিতে কামলা দেয়ার কাজও করেন। রবিন-লক্ষীর সংসারেই ২ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। ভুমিহীন এই পরিবারটি খাসজমিতে বসবাস। তাদের বড় মেয়ে শিউলী কিসকু কলেজে ১ম বর্ষ পর্যন্ত পড়েই পড়ালেখা শেষ হয়েছে। অর্থাভাবে তার পড়া এগোয়নি, স্কুল-কলেজে উপবৃত্তিও জোটেনি। এখন সে ঢাকায় গার্মেন্টস কর্মী। মেজ মেয়ে শাপলা কিসকু চতরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রনীতে। সেও উপবৃত্তির তালিকাভুক্ত হয়নি। ছোট ছেলে ফিলিপ কিসকু বিরামপুর আদিবাসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেনীতে, রোল- ৩। লক্ষী সরেন তার পরিবারকে এগিয়ে নিতে তার স্বামী রবিনকে সহায়তা করছেন বলে জানান। গত ১৪ আগষ্ট দুপুরে বিরামপুরে লক্ষীর সাথে কথা হওয়ার সময় গ্রামটির বেশ কয়েকজন মহিলা-শিশু গ্রামের প্রবেশদ্বারে কাঠাল গাছের নীচে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। সেখানেই লক্ষীর সাথে কথা হলে সে তার অর্থ, কাজের অভাব আর পারিবারিক সমস্যার কথা জানান। অন্য মহিলারাও তার সাথে সমস্বরে তাদের কথাও বলেন। লক্ষীর মতো অনেক আদিবাস্ ীসন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। কিন্তু উপবৃত্তি জুটছে কম। আর্থিক নিরাপত্তা কিংবা কাজ না থাকায় অনেকেই পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ছে। ৬ষ্ঠ শ্রেনী পড়–য়া ঝর্না মর্মুর মা বিউটি কিসকু জানায়, বছরের ২ মাস অন্যের জমি ও বাড়ীতে মজুরী দিয়ে ধান লাগানো ও কর্তন-মাড়াই করি। হামরা স্বামীর পাশাপাশি সংসারের ঘানি টানছি। খাবারও কম জোটে। এবারে প্রতিদিন ধান রোপনে মজুরী বাবদ আদিবাসী মহিলা শ্রমিকরা ২’শ টাকা করে পেয়েছেন বলে জানায়। এভাবে তারা ১৫/২০ দিন কাজ করেছেন। এখন তাদের হাতে কাজ নেই, অলস বসে আছেন। এ ব্যাপারে চতরা ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন বলেন- চতরা ইউনিয়নে কয়েক হাজার আদিবাসী রয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। সেই সাথে আদিবাসী সন্তানদের পড়ালেখায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং আর্থিক সুবিধা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান- বর্তমান সরকার আদিবাসীদের উন্নয়নে বেশকিছু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচী হাতে নিয়েছে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 7812402972905036545

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item