জঙ্গিবাদ নির্মূলে জেগে উঠছে বাংলাদেশ- স্বরাষ্টমন্ত্রী
https://www.obolokon24.com/2016/08/rangpur_70.html
হাজী মারুফ
স্বরাষ্ট মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন জঙ্গিবাদ নির্মূলে জেগে উঠছে বাংলাদেশ। সারাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ১৯৭৫ সালে জাতীরজনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর জামায়াত শিবির রগকাটার মাধ্যেমে এদেশে জঙ্গিবাদের সূচনা করেন। একাত্তুরের পরাজিত শক্তিরাই এদেশে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। যখন বিশ্বের রোলমডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করছিল তখন তারাই ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে। গতকাল শনিবার রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সর্বধর্মীয় প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশকে ঘিরে রংপুর বিভাগের সকল ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন পেশার প্রায় ২০ হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করে। সকলের কন্ঠে উচ্চারিত হয়। যে কোন মুল্যে হউক জঙ্গিবাদ নির্মুল করতে হবে।
সমাবেশে স্বরাষ্ট মন্ত্রী আরো বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্ট করা হয়। এ পর্যন্ত ১৯ বার প্রধান মন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। একবারো তারা সফল হয়নি। আগামীতে হবেনা। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরো বলেন সারা দেশে এক থেকে দেড়’শ জঙ্গি রয়েছে। এরা জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল্লাহ জেহাদসহ বিভিন্ন নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এদের অধিকাংশকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরাও অচিরে গ্রেপ্তার হবে। এরা ধর্মের নামে,ইসলামের নামে আমাদের দেশকে কালিমা লেপন করতে চাচ্ছে। ইসলামসহ কোন ধর্মেই হতাকাণ্ড সর্মথন করে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এদেশে শান্তি সম্প্রতি অটুট থাকবে। তা কোন শক্তিই নষ্ট করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, কোন হত্যাকাণ্ড হলেই দশ মিনিটের মধ্যে ওয়েব সাইটে চলে যায় এটা আই এস করেছে । দেশে আইএসএর কোন অস্থিত্ব নেই। ইসলাম নিয়ে যারা খেলা করছে তাদের স্থান বাংলাদেশে নেই।
তিনি কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে বলেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে। কেউ কেউ এটিকে ভালো চোখে দেখছে না। তিনি কওমি মাদ্রাসার প্রধানদের শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে এটিকে যুগোপযুগি করে গড়ে তোলার আহবান জানান।
গুলশান ও শোলাকিয়া আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিজেদের জীবন দিয়ে জঙ্গিবাদ প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জঙ্গিনিমূলে জনগণের সহায়তা দরকার।
তিনি আরো বলেন, রংপুর দিনাজপুরে যেসব জেএমবি কমান্ডার এখনো পলাতক রয়েছে তাদেরকে অচিরেই গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান। জাপানি নাগরিক কুনিও হোসিও হত্যার বিচার শুরু হয়েছে। কুনিও এদেশকে ভালোবেসে মুসলামান হয়েছিল। তাকে হত্যা করেছে পাষণ্ডরা। সব হত্যার বিচারই দেশের প্রচলিত আইনে হবে।
তিনি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, রংপুর মেট্রোপলিটন গঠনের যাবতীয় ড্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সংসদে এলেই এটি পাশ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান ইন্সপেক্টর জেনারেল(আইজিপি) একেএম শহিদুল হক বলেন , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে জঙ্গি দমনের যাক দিয়েছেন। তার ডাকে সারা দিয়ে দেশবাসি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ । এই সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের জঙ্গিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের মধ্যে বগুড়া ও গাইবান্ধায় জঙ্গি সবচেয়ে বেশি। তাদের অচিরেই আইনের আওতায় আনা হবে।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন রংপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, আবুল কালাম এমপি, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এমপি। বিশেষ বক্তা ছিলেন জমিয়াতুল উলামা ইসলামের সভাপতি ও শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রাম কৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ, দিনাজপুর ধর্ম প্রদেশের বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু, বাংলাদেশ ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ইবরাহিম খলিল রেজভি।
পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি রংপুর রেঞ্জের উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে মত বিনিময় করেন।