সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতালের কর্মচারীরা ঈদের বেতন বোনাস হতে বঞ্চিত

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয় নীলফামারী ০৩ জুলাই॥
নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি। আয় রোজকার কমে যাওয়ায় এখানকার ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবারের বেতন ও ঈদের বোনাস পাচ্ছেনা। এতে ওইসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবার বিপাকে পড়েছে।
সূত্র মতে, দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে অভ্যান্তরিন নানান সমস্যার কারনে বিদেশী দাতা সংস্থা ও সরকারী  অনুদান বন্ধ হয়ে গেছে।  ফলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স, ফার্মেসী ও রোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কোনোরকমে হাসপাতালটি চলছে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনেশিয়ান, গাড়ী চালক, আয়া, ওয়ার্ডবয়, দারোয়ান, নৈশ প্রহরী সহ মোট ১৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।
রবিবার সকালে তারা জানায়  আসন্ন ঈদের জন্য এখনও তারা বেতন-বোনাস পাননি।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতালের পরিচালক ডা. সুরত আলী জানান, সরকারী অনুদান ছাড়া এত বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এছাড়া রমজান মাসে রোগীর সংখ্যা শুন্যের কোঠায় নেমে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ১৯৯৫ সালে ফাইলেরিয়া বিশেষজ্ঞ ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের উদ্যোগে জাপান সরকারের অর্থায়নে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ধলাগাছে ২০০২ সালে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট একটি ফাইলেরিয়া হাসপাতাল চালু করা হয়। যা বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। পরে ২০১২ সালে অভ্যান্তরিন কোন্দলে  ডা. মোয়াজ্জেম এ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে প্রতিদিনের টিকিট বিক্রি এবং হাসপাতালটির অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়ে মাসে যে আয় হয় সেই টাকা দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতালের সব কার্যক্রম।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানান হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোয়াজ্জেম হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিদেশী দাতা সংস্থারাও এই হাসপাতালে অর্থ যোগান থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেন।  সাহায্য আনার মতো এ হাসপাতালে তেমন কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তি না থাকায় অর্থের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি।
প্রসঙ্গতঃ ফাইলেরিয়া বা গোদ বাংলাদেশের একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন ধরনের
ফাইলেরিয়াল প্যারাসাইট বা পরজীবী শরীরে প্রবেশ করলে এ রোগের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের পরজীবী একজন রোগী থেকে আরেকজন সুস্থ লোকের শরীরে কয়েক প্রজাতির মশার কামড়ে সংক্রমিত হয়। এ রোগের লক্ষণগুলো হল তীব্র এবং ঘন ঘন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর যা আপনি আপনি সেরে যায়। আক্রান্ত লসিকা গ্রন্থির প্রদাহের কারণে লসিকা গ্রন্থিতে ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া এবং লসিকা নালী ফুলে যাওয়া।
গোদ হলে সাধারণত শরীরের হাত-পা বা যৌনাঙ্গ অর্থাৎ সাম্ভাব্য আক্রান্ত স্থানগুলো (হাতির পায়ের
মতো) মোটা হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বে ১২ কোটি ফাইলেরিয়া (গোদ রোগ) আক্রান্ত
রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতেই রয়েছে ৫ কোটি। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, শ্রীলংকা, জাপান, ব্রাজিল, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাতে ফাইলেরিয়াসিস রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
বাংলাদেশে ষাটের দশকের আগে থেকেই এ রোগ বিদ্যমান। ফাইলেরিয়া হাসপাতাল সূত্র হতে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, ফেনী প্রভৃতি জেলায় এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে নীলফামারীর জলঢাকা এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ফাইলেরিয়া আক্রান্ত  রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানান বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সুরত আলী। তিনি সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করে বলেন, সরকারের পক্ষে হাসপাতালটির হালধরা জরুরী হয়ে পড়েছে।

পুরোনো সংবাদ

স্বাস্থ্য-চিকিৎসা 4261861150641007941

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item