কারমাইকেল কলেজে আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে শিবির
https://www.obolokon24.com/2016/04/cermicel.html
ছাত্রলীগসহ স্বাধীনতা স্বপক্ষের ছাত্র সংগঠনগুলো ঝিমিয়ে
হাজী মারুফ ঃ
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজে ছাত্রলীগসহ স্বাধীনতার স্বপক্ষের ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। এই সুযোগে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামায়াতে ইসলামীর সহযোগি ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির মাথাচাড়া দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে বিভিন্ন অনুসন্ধানে।
কোনো এক সময় সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি বা মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিল কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাসে শিবিরের আধিপত্যয় মুখ থুবড়ে পড়েছিল অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। শিবিরের সেই দাপুটে আধিপত্য চলেছে ভিন্ন কায়দায় চলছে । ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে ২০১০ সালে ক্যাম্পাস ছাড়ে ছাত্রশিবির। সেই সাথে গত ৬ বছর তাদের ব্যারাক হিসেবে ব্যবহৃত কলেজ হোস্টেলগুলো বন্ধ থাকলেও তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আশে-পাশের মেসগুলো ব্যবহার করছে। কিন্তু যাদের তাড়িয়ে দিয়ে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে এনেছিলো আজ সেই ছাত্রলীগই ছত্রভঙ্গ ছাত্রলীগে পরিণত হয়েছে। সময় মতো কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বের অভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন হতোদ্যম। আর এ সুযোগে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।
শতবর্ষে পদার্পণ করতে যাওয়া উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ এখন নানাবিধ কারণে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাসে এক সময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকা নেতাদের অনেকেই এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খুবই পরিচিত মুখ। কিন্তু বর্তমানে কোনো কমিটি না থাকায় কলেজে কোনো জাতীয় প্রোগ্রামে ও দলীয় তৎপরতায় ছাত্রলীগ নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হিসেবে উত্তরবঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ ইউনিট। সেখানে কমিটি না থাকায় সেই গুরুত্ব থেকে ছিটকে পড়ে হতোদ্যম হয়ে পড়েছে নেতা-কর্মীসহ ছাত্রলীগ অনুরাগী সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে তাদের তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে।দলীয় সূত্রমতে, ২০১২ সালের ২৪ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের উপস্থিতিতে ও রংপুর জেলা ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে রাফিউর রহমান রাফিকে সভাপতি ও রাকিবুল হাসান কাননকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। গেল বছর কলেজ সভাপতি রাফি রংপুর সিটি করপোরেশনে চাকরিতে যোগদান করায় এবং সাধারণ সম্পাদক কানন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় কারমাইকেল কলেজে নতুন কোনো কমিটি না দিয়েই ২০ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ কারণে দিন দিন ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকায় কলেজের ১০০ বছর উদ্যাপনকে কার্যকর করতে বিভিন্ন দলের ছাত্রনেতাদের বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও ছাত্রলীগের কাউকে রাখা হচ্ছে না। এছাড়া কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ না থাকায় এখন দিনদিন ছাত্রশিবিরের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।ওই শিক্ষক আরো জানান, শিবিরের ঘাঁটি বা ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে অপবাদ প্রাপ্ত ছাত্র হোস্টেলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগের কোনো তৎপরতা না থাকায় ঐসব হোস্টেলে আবারো স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পক্ষে থাকা ছাত্ররাই অবস্থান নিতে পারে।এ ব্যাপারে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শাফিউর রহমান স্বাধীন বলেন, ‘চলতি মাসেই মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরই সম্মেলনের মাধ্যমে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন করা হবে’।রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণসম্পাদকরাকিবুলহাসান কানন বলেন, ‘কমিটি গঠন করা মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই।’অন্যদিকে, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি শাফিউর রহমান শফির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ একটি ঐহিত্যবাহী ইউনিট। ছাত্রলীগের এই ইউনিট সব সময়ই দলীয় কার্যক্রম ও দেশনেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে নির্ভীক সৈনিক হয়ে রাজপথে ছিলো।’ তিনি আরো বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পরপরই কারমাইকেল কলেজ ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের করে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ ইউনিট ঘোষণা করা হবে।
২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেবর কারমাইকেল কলেজে ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত হয় । একই সালের ৭ জুলাই রংপুর মহানগর ছাত্রলীগ কমিটি গঠন হয়। কিন্তু পুর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি মহানগর ছাত্রলীগের । দীর্ঘ দিনের অচলয়ায়তনের সুযোগে শিবিরের কর্মীরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, শিবির ক্যাডাররা খেলার মাঠে, কেবি হোস্টেলের পিছনে, কলেজ ক্যান্টিন এলাকায় এবং কারমাইকেল মসজিদের পিছনে গোপন বৈঠক করছে বলে জানা গেছে । গত কয়েক মাস ধরে কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের কার্যক্রম নেই। তাই দলীয় ও জাতীয় কোন প্রোগাম করেনি কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নৈশ্যপ্রহরী জানান রাত্রীকালীন শিবির ক্যাডাররা ক্যাপাসে ঢুকে গোপন বৈঠক করে। আরো একটি সূত্র জানায়, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিবিরের আরও একটি অংশ ছাত্রলীগের সাথে মিশে যাচ্ছে।