সৈয়দপুরে যৌতুকের কারনে গৃহবধুকে নির্যাতন

বিশেষ প্রতিনিধি॥
নীলফামারীর সৈয়দপুরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে আর অত্যাচার-নির্যাতন করবে না মর্মে আদালতে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে এসেও যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্র্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক পাষন্ড স্বামীর বিরুদ্ধে। শহরের নতুন বাবুপাড়া হাজী কলোনী মহল্লায় এ নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে। গত শনিবার (১৯ মার্চ) রাতে স্বামীর বাড়ি থেকে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে থানা পুলিশ। স্বামী, ভাসুর, ননদসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে  সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বেডে শুয়ে কাতারাচ্ছেন গত তিন দিন ধরে।
অভিযোগে জানা গেছে, শহরের নতুন বাবুপাড়া হাজী কলোনী’র মৃত. শেখ আমানতের ছেলে মাসুদ রানা মুকুলের সঙ্গে গত ২০১২ সালের ২৫ মে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ফাহমিদা মল্লিকের(২০)। তিনি (ফাহমিদা মল্লিক) সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ার মৃত. আসগার মল্লিকের মেয়ে। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে জামাতাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা,স্বর্ণালংকারসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকা দেন ফাহমিদার বাবা। কিন্তু যৌতুকলোভী মুকুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতে আবারও বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের ২ লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয় তাকে। আর এজন্য তাঁর ওপর কারণে অকারণে চালানো হয় শারীরিক-অত্যাচার নিযৃাতন। কিন্তু তাদের শত অত্যাচার নির্যাতন চোখ বুঝে সহ্য করে স্বামীর বাড়িতে পড়ে থাকেন তিনি। পরবর্তীতে তাঁর ওপর অত্যাচার-নির্যতানের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এতে গৃহবধূর বাবা তাঁর আদরের মেয়ের সুখের কথা ভেবে ঋণ গ্রহণ করে জামাতার হাতে নগদে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। কিন্তু এতেও যৌতুকলোভী মুকুলের মন ভরে না। সে তাঁর দাবিকৃত যৌতুকের বাকি ৭৫ হাজার টাকার জন্য আবারও অমানসিক নির্যাতন করতে থাকে গৃহবধূ ফাহমিদার ওপর। এ অবস্থায় গত বছরের ৮ জানুয়ারী পাষন্ড মুকুল ৭৫ হাজার টাকাসহ আরো এক লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য প্রচন্ড চাপ দেয়। কিন্তু বাবার আর্থিক অনটনের কারণে তা আনতে অপরাগতা প্রকাশ করেন ফাহমিদা। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী মুকুল ও তাঁর পরিবারের সদস্য মিলে গৃহবধূ ফাহমিদাকে বেদম মারপিট করে। এর এ পর্যায়ে তাকে জোরপূর্বক স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এতে অনেকটাই নিরূপায় হয়ে গৃহবধূ তাঁর বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে যৌতুকলোভী মুকুল আর তাঁর স্ত্রী’র কোন খোঁজ-খবর করেননি। এরপর স্থানীয়ভাবে একাধিকবার দেনদরবার করেও আর আপষ-মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ফাহমিদা বেগম বাদী হয়ে যৌতুক আইনে আদালতে একটি মামলা করেন। গত বছরের ১৯ অক্টোবর দায়েরকৃত ওই মামলায় গৃহবধূর স্বামী মাসুদ রানা মুকুল (৩৪), ভাসুর মাসুদ আখতার বকুল (৩৬),ননদ মোছা. লতা বেগম (৪০) ও ননদের এক মেয়ে জেসমিন আবেদীন রুমী (২৪) সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা দায়ের করা হয়। গত ১৬ মার্চ  ছিল মামলার ধার্যদিন। ওই দিন জেলে যাওয়ার ভয়ে সচতুর মুকুল আর যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার-নির্যাতন করবে না, স্ত্রীকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে ঘর সংসার করবে মর্মে আদালতে একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা দেয় এবং স্ত্রীকে গ্রহন করে। এ দিন আদালত চত্বর থেকে বের হয়ে স্ত্রী ফাহমিদা মল্লিককে একটি ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সায় নিয়ে বাড়ি উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন স্বামী মুকুল। কিন্তু নীলফামারী থেকে সৈয়দপুর আসার পথিমধ্যে স্ত্রীকে অটোরিক্সায় বসিয়ে রেখে সুকৌশলে সেখান থেকে সটকে পড়েন মুকুল। পথে অটোরিক্সায় স্বামীর অপেক্ষায় বেশকিছু সময় থেকে অনেকটা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন ফাহমিদা। এরপর গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় গৃহবধূ ফাহমিদা স্বামীর নতুন বাবুপাড়ার বাড়িতে যান। এ সময় তিনি বাড়িতে ঢুকে সরাসরি নিজ ঘরে ঢুকেন। আর তাকে বাড়িতে দেখে স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন। তারা সবাই মিলে ওই গৃহবধূর ওপর এক সঙ্গে চড়াও হন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুসি মারতে থাকেন। এর এক পর্যায়ে চুলের মুঠি ধরে ঘর থেকে বাইরে বের করে আনেন। এ সময় তারা তাকে আগুনে পুঁড়িয়ে মারা পরিকল্পনা নেয়। এ সময় গৃহবধূর আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন সৈয়দপুর থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গিয়ে গৃহবধূকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে ফাহমিদা হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের ৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখনও তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের চিহৃ রয়েছে।                                                               
গত রবিবার রাতে ওই হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে বসে তাঁর কথা কথা হয় এ প্রতিনিধি’র সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওরা যে এতো বর্বর, পাষাণ - তা বুঝেনি আগে। ওরা সবাই মিলে আমাকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার না করলে আমাকে মেরেই ফেলতো তারা। মানুষ কি এতো নিষ্ঠুর, নির্দয় হতে পারে ? আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’সেদিনের অত্যাচার-নির্যতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
ফাহমিদা মল্লিকের বড় ভাই আসলাম মল্লিক জানান, বোনের সুখের জন্য আমরা সাধ্যমতো করেছি। কিন্তু অর্থলোভী বোন জামাই মুকুল ও তার পরিবার আবারও যৌতুকের জন্য আমার বোনের নির্যাতন শুরু করে। যৌতুকের জন্য মানুষ হয়ে মানুষ এ রকম নির্মম নির্যাতন করতে পারে !
 আর এ ঘটনায় মামলা না করার জন্য মুকুল বিভিন্নধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগে করেন।
  এ বিষয়টি নিয়ে গৃহবধূ ফাহমিদার স্বামী মাসুদ রানা মুকুলের ০১৭৩৭৭১৮৯০৮ নম্বর মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।    
  সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম স্বামীর বাড়ি থেকে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি  বলেন, এ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন। তারপরও ওই ঘটনার বিষয়ে গৃহবধূ’র পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7452708584294396358

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item