সৈয়দপুরে নকল পণ্য ও যন্ত্রাংশ তৈরীর শহর ভারত ও চায়নার মোড়কে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি


মো. জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে



নকল পণ্য ও যন্ত্রাংশ তৈরির শহরে পরিণত হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর। ঢাকার জিঞ্জিরার পরই সৈয়দপুরের অবস্থান বলে বিজ্ঞ মহলের অভিমত। মশার কয়েল, মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ, খাদ্য সামগ্রী, সাবান, কসমেটিক্স, পলিথিনসহ সাইকেল যন্ত্রাংশ থেকে অনেক কিছুই নকল হচ্ছে এ শহরে। নামাদামি কোম্পানির মোড়কে নকল বা নিম্নমানের পণ্য বাজারজাত করে গ্রাহকদের প্রতারনা করা হলেও প্রশাসন নিরব।
জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শাসন আমলে সৈয়দপুরের নকল সার কারখানা, সাবান তৈরির কারখানা, নকল চিপস ও চানাচুর তৈরির কারখানা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, পলিথিন ও সাইকেল তৈরির কারখানায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে নকল পণ্য তৈরির অপরাধে উৎপাদককে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছিল। ওই সময় অনেকেই জানতে না সৈয়দপুর শহর নকলের শহর।
২০০৯ সালে পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখার শহরের টিআর সড়কের একটি গোডাউনে নকল সার কারখানা, বিসিক শিল্প নগরী সংলগ্ন এলাকায় নকল রোলার তৈরির কারখানাসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় হুবহু চায়না ফনিক্স ও ভারতীয় হিরো সাইকেলের যন্ত্রাংশ। ওই সময় অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্ক না থাকায় ফকরুদ্দিন সরকার অবৈধ ব্যবসায়ীদের গোডাউনে লাগিয়েছিল তালা। প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল নকল পণ্য ও যন্ত্র উৎপাদন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে যায় পূর্বের অবস্থা। পাল্লা দিয়ে তৈরি হতে থাকে নকল পণ্য ও যন্ত্রাংশ। এতে করে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হয়ে অবৈধ উৎপাদকরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
একটি সূত্র জানায়, সৈয়দপুরের এক আমদানিকারক ভারত ও চায়না থেকে সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানি করে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশেই সরবরাহ করে থাকেন। দেশে সাইকেলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অসাধু কয়েকজন ব্যবসায়ী সৈয়দপুর শহরের অলিগলিতে প্রায় ৩০/৩৫টির মত নকল সাইকেল তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন। তারা ওইসব কারখানায় উৎপাদিত সাইকেল যন্ত্রাংশ বাংলাদেশী বলে তৈরির পর সাইকেলে মোড়ক লাগিয়ে দিচ্ছেন মেড ইন ইন্ডিয়া অথবা মেড ইন চায়না। অনেক দক্ষরাও দেখলে বুঝতেই পারবেন না কোনটা আসল বা কোনটা নকল।
সম্প্রতি সৈয়দপুর থানার বেতার অপারেটর আব্দুল হালিম শহরের ভাসানী সাইকেল স্টোরে যান ফনিক্স অথবা হিরো সাইকেল কেনার জন্য। সেখানে প্রতিষ্ঠানের মালিক ভাসানী তাকে ১নং হিরো সাইকেল বলে দিলেও সেটি ৩ মাসেই নষ্ট হয়ে যায়। ওই সাইকেলের সামনের চাকার হাবস কেনার জন্য পুনরায় ওই দোকানে গেলে তাকে মেড ইন ইন্ডিয়ার মোড়কে দেয়া হয় একেবারে নিম্নমানের হাবস এবং দামও নেয়া হয় দ্বিগুন। পরবর্তীতে সেটি নিম্নমানের হাবস ও ভারতীয় মোড়কে কেন বিক্রি করা হচ্ছে জানতে চাইলে ভাসানী নামের ওই ব্যক্তি বলেন, বিউটি সাইকেল স্টোরের মালিক আলতাফ হোসেনের কাছে তিনি পাইকারীভাবে ক্রয় করে বিক্রি করছেন।
থানার বেতার অপারেটর আব্দুল হালিম বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি নেই বলেই সৈয়দপুর শহর নকলের শহরে পরিণত হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশও ছাড় পাচ্ছেন না। আর অল্প দিনেই নকল পণ্য তৈরি কারকরা বনে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকার মালিক আর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার। এসব বন্ধে উপর মহলের নির্দেশনার পর অভিযান চালালে এ শহর থেকে শত কোটি টাকারও বেশি নকল ও ভেজাল পণ্যের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সৈয়দপুর বাইসাইকেল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, নকল পণ্য তৈরি বা ইন্ডিয়া ও ফনিক্স এর মোড়কে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি না করার জন্য সকল ব্যবসায়ীকে নিষেধ করা হয়েছিল। যারা এ নির্দেশনা মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে প্রতারণার হাত থেকে জনসাধারণের বাঁচানোর দাবি জানান তিনি। 

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3285791256847570957

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item