সাহসী প্রেমের ছবি ‘অনন্ত প্রেম’
https://www.obolokon24.com/2015/02/-post_4.html
ডেস্ক রিপোর্ট- বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নির্মিত প্রেমের ছবির মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম রাজ্জাক-ববিতা জুটির ‘অনন্ত প্রেম’।
‘অনন্ত প্রেম’
মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে। সেই সময়ের তুলনায় ছবিটি ছিল দারুণ সাহসী। ছবির শেষ দৃশ্যে নায়ক নায়িকার গভীর চুম্বনের দৃশ্য ছিল যা সেই সময়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু চুম্বনের দৃশ্য বাদ দিয়েই ছবিটি মুক্তি পায়।
সিনেমাটির গল্পকাঠামোতেও ছিল নতুনত্ব। সিনেমায় দেখা যায় রাজ্জাক এবং তার তিন বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ববিতা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। রাজ্জাকের এক বন্ধু ববিতাকে পছন্দ করে। কিন্তু ববিতা কোনোভাবেই তার প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেয় না।
বন্ধুকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে রাজ্জাক ও তার অন্য দুই বন্ধু ব্ল্যাক আনোয়ার ও এটিএম শামসুজ্জামান। বন্ধুর পরামর্শ মতো তারা তিনজন একটি নির্জন স্থানে ববিতাকে আক্রমণ করে। ববিতার সাহায্যে এগিয়ে আসে সেই বন্ধু। সাজানো মারপিটের মাধ্যমে সবাইকে হারিয়ে সে ববিতার চোখে ‘হিরো’ বনে যায়। পরে বাড়ি পৌছে দেওয়ার নাম করে ববিতাকে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করতে উদ্যত হয়। সে সময় চিৎকার শুনে রাজ্জাক এবং বন্ধুরা এগিয়ে যায়।
এবার সত্যিকারের মারামারির এক পর্যায়ে রাজ্জাকের হাতে ওই বন্ধু খুন হয়ে যায়। বন্ধুর লাশ গাড়ির লাগেজ ক্যারিয়ারে নিয়ে শহরে ফেরে বন্ধুরা। ববিতাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে রাজ্জাক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এ ঘটনার সঙ্গে একজন নারীর নাম জড়িত হলে তার বদনাম হবে সে কারণে পুলিশের কাছে পুরো ঘটনা খুলে না বলে রাজ্জাক বলেন টাকা নিয়ে ঝগড়ার কারণে বন্ধুকে খুন করেছেন তিনি একাই। পরে পুলিশ হেফাজত থেকে পালান তিনি।
অন্যদিকে শৈশবে মাতৃহীন ববিতা সৎ মায়ের অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য আসছিলেন। কিন্তু এক লম্পট ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে দিতে চাইলে বিয়ের আসর থেকে তিনিও পালান। ট্রেনে রাজ্জাক ও ববিতার আবার দেখা হয়ে যায়। দুজনেই পালিয়ে চলে যান পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অরণ্যে। সেখানে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে যান।
ব্ল্যাক আনোয়ার ও এটি এম শামসুজ্জামান পুলিশের হেফাজত থেকে পালাতে গিয়ে গুলি খেয়ে মারা যান। ফলে প্রকৃত ঘটনার সাক্ষী দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। রাজ্জাকের নামে পুলিশের হুলিয়া জারি হয়।
পুলিশ এক পর্যায়ে তাদের সন্ধান পায়। অরণ্যের মধ্যে তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। পালিয়ে বাঁচার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিতে যায় তারা। একটি ঝর্ণা পার হওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় দুজনের। মৃত্যুর সময় পরস্পরকে চুম্বন করেন তারা। শেষ পর্যন্ত ঝর্ণার তীরে পড়ে থাকে প্রেমিক প্রেমিকার আলিঙ্গনাবদ্ধ প্রাণহীন দেহ।
‘অনন্ত প্রেম’
রাজ্জাক পরিচালিত প্রথম ছবি। প্রযোজকও ছিলেন তিনি। রাজলক্ষী প্রোডাকশনসের ব্যানারে নির্মিত সিনেমাটি ছিল সুপার-ডুপার হিট।
এ ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন আজাদ রহমান। এ ছবির একটি গান সময়ের স্পর্শ বাঁচিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ল্যাসিক গানে পরিণত হয়েছে। গানটি হলো খুরশিদ আলম ও সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া “ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি”। কাপ্তাইয়ের অসাধারণ সুন্দর লোকেশনে শুটিং হয়েছিল। শেষ দৃশ্যটি ছাড়াও ববিতা-রাজ্জাকের প্রেমের বেশ কিছু সাহসী দৃশ্য ছিল এতে।