কত আর শুনবো হত্যাকান্ডের কাহিনী?
https://www.obolokon24.com/2014/11/blog-post_20.html
বিনোদন ডেস্ক-
১৯৭২ সালের ১১ ডিসেম্বর অভিনেতা রাজু আহমেদকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো তাদের বিচার জাতি সেদিন দেখতে পায়নি। আজও যে হত্যাকান্ড চলছে এর ক’টিরই বা বিচার হচ্ছে (?) এ প্রশ্ন থেকেই যায়। এ সময় একের পর এক ঘটছে হত্যাকান্ড। এজন্য মনে হয় বড় নির্মম পৃথিবীর কতিপয় মানুষ। একজন আরেকজনকে যারা খুন করে ওরা মানবজাতির কলঙ্ক। শুধু তাই নয়, ওরা নর পিশাচ। এ সময়ের হত্যাকান্ডের কাহিনী আমাদেরকে ফিরেয়ে নিয়ে যায় ১৯৭২ সালের এক মর্মান্তিক ঘটনায়। ওই বছরই ‘দস্যুরাণী’ ছবির শ্যুটিং চলাকালে অভিনেতা রাজু আহমেদ আততায়ীর গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। এর কিছুদিন পরেই অভিনেত্রী শিউলী আহমেদও নরপিশাচ বর্বরদের গুলিতে মারা যান।রাজু আহমেদ ও শিউলি আহমেদ ১৯৭২ সালে ছিলেন রোমান্টিক জুটি, এরা একত্রে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এর মধ্যে ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবিটির কথা আজও যে স্মরণে জাগে। পর্দায় রাজু আহমেদ ও শিউলি আহমেদ একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। দু’জনেই নাইটক্লাবে যেতেন নিয়মিত। আনন্দ ফুর্তি করে জীবনকে উপভোগ করে দু’জনেই ছিলেন সুখী। হঠাৎ রাজু আহমেদ প্যারালাইসড হয়ে হুইলচেয়ারে বসে দিনপার করেন। ওদিকে শিউলি আহমেদ পর-পুরুষের সাথে মেলামেশা শুরু করে দেয়। অতপর শুরু হলো দু’জনার মধ্যে দ্বন্দ্ব। এরা দু’জনে ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবিতে স্মরণীয় অভিনয় করে গেছেন।
রাজু আহমেদের জন্ম ২৮ বৈশাখ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে কুষ্টিয়ার আমলা পাড়ায়। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি ‘বাল্যবন্ধু’ ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ‘মিশর কুমারী’ ‘কাঁচ কাটা হীরে’ ‘স্মৃতিটুকু থাক’ ‘আমার জন্মভূমি’ ‘কাঁচের স্বর্গ’ ‘অশান্ত ঢেউ’ ‘দুটি মন দুটি আশা’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নাটক‘জল্লাদের দরবার’ এ অভিনয় করে স্মরণীয় হয়ে আছেন রাজু আহমেদ। অপরদিকে শিউলি আহমেদের মৃত্যু হয় আততায়ীর গুলিতে ১৯৭৩ সালের ১মে। রাজু আহমেদ। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হলো- ‘আমার জন্মভূমি’ ‘বাঘা বাঙালি’ ’দুই পর্ব’ ‘কাঁচের স্বর্গ’। রাজু আহমেদ শুধু অভিনেতাই ছিলেন না, ছিলেন একজন শিল্পীও। তিনি ছবি আঁকতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে করাচিতে অনুষ্ঠিত চিত্রকলা প্রদর্শণীতে তার আঁকা একটি ছবি পুরস্কৃত হয়। রাজু আহমেদ অদ্ভূত ধরণের জুতো ও স্যান্ডেল পরতেন। তিনি নিহিত হওয়ার পরে তার কণ্ঠের অসমাপ্ত ডাবিংগুলোতে দারাশিকোর কণ্ঠদ্বারা পূরণ করা হয়েছিল।
১৯৭২ সালের ১১ ডিসেম্বর রাজু আহমেদকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো তাদের বিচার জাতি সেদিন দেখতে পায়নি। আজও যে হত্যা কান্ড চলছে এর ক’টিরই বা বিচার হচেছ(?) এ প্রশ্ন থেকেই যায়। দস্যুরাণীর ছবির শ্যুটিং চলাকালিন সময়ে বর্বর খুনিরা গুলি ছুড়ে রাজু আহমেদের দিকে। গুলি খেয়ে রাজু মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। তারপর সে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লো। শিউলি আহমেদেরও ওই একই অবস্থা হয়েছিল। শ্যুটিং থেকে ফেরার পথে তাকেও বর্বর হত্যাকারীরা গুলি করে মেরে ছিল। এ রকম হত্যাকান্ড এরপরে আমাদেরদেশে অসংখ্য ঘটেছে। আমাদেরকে আর কতকাল এরকম হত্যাকান্ড দেখতে হবে? হত্যাকান্ড ঘটার এক মাসের ভিতরে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার কী করা যায় না? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?