সৈয়দপুরে রেলওয়ের রেডিওটারের মালামাল নিলামের নামে প্রতারণা আটক - ৪


তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

 নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানার রেডিওটারের মালামাল নিলামের নামে প্রতারণার মাধ্যমে বগুড়ার এক ব্যবসায়ীর সাড়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। আর এ ঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সৈয়দপুর থানা পুলিশ। তবে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া উল্লিখিত পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়নি অদ্যাবধি। গ্রেপ্তারৃকরা হচ্ছে, সৈয়দপুর শহরের কয়াগোলাহাট দক্ষিণপাড়ার মৃত. সাখাতউল্লাহ্’র ছেলে মোহাম্মদ আলম (৫৯) ও সাহেবপাড়া রেলওয়ে হাসপাতালের পাশের এলাকার মৃত. আলী আহম্মদের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৬০) এবং লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার চর চামিতা মিন্ত্রিপাড়ার মৃত. জালাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গফুর (৬৪) ও একই উপজেলার আলাদাতপুর হাসমত উল্ল্যা দরবেশ বাড়ীর মো. দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে হামিদুর রহমান (৬৯)। এদের মধ্যে প্রথমে উল্লিখিত দুই ব্যক্তিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা এবং শেষের দুই ব্যক্তিকে গত ১৬ মার্চ  বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার উল্লিখিত এলাকার নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 মামলা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের আটাপাড়ার মোস্তফা খন্দকারের ছেলে মো. তামজীদ খন্দকার (৩২)।   বগুড়া শহরের চারমাথা নামক এলাকায় তাঁর হাবিব রেডিওটার ওয়ার্কসপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেল পৌণে ছয়টার সময় (তামজীদ খন্দকার) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করছিলেন। এ সময়  এক অজ্ঞাত ব্যক্তি তাঁর দোকানে আসেন। এ সময় ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি মালিক তামজীদ খন্দকারকে বলেন নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় রেডিওটার মালামাল ওয়ার্কশনে (নিলামে) মাধ্যমে বিক্রির জন্য টেন্ডার পেয়েছেন  তিনি। এ সময় দোকান মালিক তামজীদ ওই ওয়ার্কশনের রেডিওটারের মালামাল  কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে মালামাল দেখতে সৈয়দপুরে আসতে বলেন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি। তাঁর কথামতো  ব্যবসায়ী তামজীদ খন্দকার গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রেডিওটারের মালামাল দেখার জন্য তাঁর সঙ্গীয় জনৈক হাসান আলীকে নিয়ে বগুড়া থেকে সৈয়দপুরে রওয়ানা দেন। এরপর  তিনি সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে  পৌঁছলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি তাদের রিসিভ করে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার এক নম্বর গেটে নিয়ে আসেন। সেখানে তাদের সঙ্গে জনৈক আলম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে এবং তিনিই তাদের সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ভেতরে নিয়ে গিয়ে রেডিওটারের মালামালগুলো দেখান। পরবর্তীতে মালামালের দর দাম ঠিক করার জন্য অন্য এক অজ্ঞাত ব্যক্তি কাছে নিয়ে যায়  মো. আলম। সেখানে মালামালের ওজন ৫ টন এবং মূল্য সাড়ে ৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর মালামালের অগ্রিম বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি। এ অবস্থায় বগুড়া থেকে রেডিওটারের মালামাল কিনতে আসা ব্যবসায়ী তামজীদ সেখানে তৎক্ষণাৎ নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে। আর অবশিষ্ট ৪০ হাজার টাকা  কয়েকটি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে প্রদান করেন। এরপর বগুড়ার ব্যবসায়ী তামজীদকে মোবাইল করে  পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারী  অবশিষ্ট টাকা নিয়ে  সৈয়দপুরে আসতে বলেন অজ্ঞাত ব্যক্তি। তার  কথা মতো ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী তামজীদ সৈয়দপুরে আসে। এ সময় তাঁরা সৈয়দপুরে রেলওয়ে এক কর্মকর্তার বাসভবনের সামনে মিলিত হন। সেখানে তাদের একটি সাদা মাইক্রোবাস তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে  মাইক্রোবাসে বসে ব্যবসায়ীর কাছে আরো পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এ সময় তাদের অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ব্যাংকড্রাফ্ট ও গেট পাশ করার কথা বলে কৌশলে ব্যবসায়ী তামজীদ ও তার সঙ্গীকে  মাইক্রোবাস  থেকে পথে নামিয়ে দিয়ে তাদের সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ষ্টোর গেটে সামনে যেতে বলে। পরবর্তীতে তারা ব্যবসায়ী তামজীদের পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে সটকে পড়েন। এরপর থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের সকল মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে ব্যবসায়ীর সঙ্গে সকল যোগযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। 

এ অবস্থায় প্রতারণা শিকার বগুড়ার ব্যবসায়ী নিরূপায় হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের কোন খোঁজ খবর  করতে না পেয়ে থানা পুলিশের শরনাপ্ন্ন হন।  এ ঘটনায় বগুড়ার ব্যবসায়ী নিজে বাদী হয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সৈয়দপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। আর এ অভিযোগ পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামেন। এরপর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সনাক্ত করে প্রথমে এ ঘটনায় জড়িত সন্দিদগ্ধ  আসামী মোহাম্মদ আলম (৫৯) ও মনিরুল ইসলামকে (৬০) গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে তাদের ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত গ্রেপ্তারকৃতদের এক দিনের  রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর তাদের থানায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার চর চামিতা মিন্ত্রিপাড়ার মৃত. জালাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গফুর (৬৪) ও একই উপজেলার আলাদাতপুর হাসমতউল্ল্যা দরবেশবাড়ীর দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে হামিদুর রহমানের (৬৯) জড়িত থাকার কথা জানায় পুলিশকে।  পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সৈয়দপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনছার আলীর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা লক্ষ¥ীপুর জেলা পুুলিশের সহযোগিতায় উল্লিখিত দুই ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) লক্ষ্মীপুর থেকে সৈয়দপুর থানায় এনে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করে করা হয়েছে। 

 সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের মামলার চার আসামীকে দুই দফায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আর মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে  বলে জানান তিনি।           


পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3034477122958154166

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item