১৬ ডিসেম্বর উন্মুক্ত হবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ-রেলপথমন্ত্রী এ্যাড. সুজন


ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি জিরো পয়েন্ট থেকে॥ 

রেলপথমন্ত্রী মো. এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারতের হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের চিলাহাটি পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর অথবা কাছাকাছি সময়ে এই পথটি (চিলাহাটি-হলদিবাড়ি) উম্মুক্ত হবে। প্রাথমিক অবস্থায় মালবাহি ট্রেন চলাচলের মাধ্যমেই উম্মুক্ত হবে। ঢাকা থেকে যেমন কলকাতা পর্যন্ত মৈত্রী একপ্রেস এবং খুলনা থেকে কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে, ঢাকা থেকে আরেকটি ট্রেন ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথ ধরে চলাচল করতে পারে সেটি আমাদের পরিকল্পনায় আছে। ভারতীয় সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এটি আমরা আশা করছি আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে অথবা কাছাকাছি কোন সময় যাত্রিবাহি আরেকটি ট্রেন চলাচল উম্মুক্ত করার। 

শনিবার(১৪ নভেম্বর/২০২০) দুপুর ১২টায় নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটিতে ভারত-বাংলাদেশ রেল লাইন সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিদর্শণ শেষে রেলমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 


রেলপথমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর তিনশ মিটার উত্তরে যমুনা নদীর ওপর দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু তৈরী করা হবে। ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২৯ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সেটির নির্মান কাজ সমাপ্ত হবে ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে। দেশের দ্বিতীয় ওই রেল সেতু হবে ডুয়েল গেজ ও ডাবল লাইন। যেটি দিয়ে একশ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ আরও সহজ হবে এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার আরও উন্নয়ন ঘটবে।তিনি জানান, বর্তমানে যমুনা নদীর ওপর যে সেতুটি রয়েছে সেটি সিঙ্গেল লাইনের। তাতে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালানো যায় না। ফলে অনেক সময় নষ্ট হয়। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়। নতুন রেল সেতুতে ডাবল লাইন রাখা হয়েছে। একসঙ্গে দুই দিক থেকে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে রেলের উন্নয়নে কাজ করছেন। আগামী ২০৪৫ সালের মধ্যে বৈদ্যতিক রেল ইঞ্জিন দিয়ে রেল চলবে। পৃথিবীর উন্নতমানের আধুনিক ট্রেন চালু করা হবে। 


রেলমন্ত্রী সুজন জানান, বাংলাদেশের পর্যটক বর্তমানে স্থলপথের বাংলাবান্ধা-হিলি কিংবা বুড়িমারী দিয়ে ভারত নেপাল-ভুটানে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) বাস ভারতের কলকাতা ও আগরতলা, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা পর্যন্ত স্থলপথে  সংযোগ চালু করেছে। আকাশপথে ভারতের কলকাতা মুম্বাই-চেন্নাই-ব্যাঙ্গালুর ফ্লাইট চালু আছে। যাত্রীরা সাধারনত রেলভ্রমনে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। রেলপথে ঢাকা ও খুলনা থেকে কলকাতার সরাসরি সংযোগ আছে রেলের। তিনি বলেন, চিলাহাটি-হলদীবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ লিংক চালু হলে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের দুয়ার আরও একধাপ খুলে যাবে। এতে লাভবান হবে উভয় দেশ। প্রজন্মের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। চিলাহাটি দিয়ে ট্রেন ভারতে ঢুকে প্রথমেই হলদিবাড়ি স্টেশন। তার পরে জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন হয়ে শিলিগুড়ি (এনজেপি) যাবে ওই ট্রেন। মন্ত্রী জানান,অবিভক্ত ভারতের রেল যোগাযোগের এটিই প্রধান পথ ছিল। সেই রেল যোগাযোগটি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করেছে তারই ফলশ্রুতিতে এই রেলপথ পূণরায় চালু হতে যাচ্ছে। 


এর আগে রেলমন্ত্রী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিলাহাটি রেল স্টেশন এলাকায় চিলাহাটি আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন নির্মান কাজের ভিত্তি স্থাপন শেষে রেলের গ্যাং কার যোগে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্তের জিরো রেখা পর্যন্ত যান। সেখানে তিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর দুই দেশের সীমান্তের জিরো রেখায় দীপাবলী উপলক্ষে ফুলেল তোরা ও মিষ্টি দিয়ে মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পক্ষে এসি সিদ্ধার্থ। তারপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি সেখান থেকে চিলাহাটি স্টেশনে ফিরে আসেন। 

এদিকে উচ্ছেদ হওয়া রেলের জায়গায় বসবাসকারী ৭৮টি পরিবার তাদের পূর্ণবাসনের দাবিতে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। মন্ত্রী তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বস দেন।  


এসময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন, নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, ৫৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মামুনুল হক, পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সহিদুল ইসলাম, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন, রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহীম, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাসট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান সিহাব প্রমুখ।


সংশ্লিষ্ঠ সূত্র মতে, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চিলাহাটি রেল স্টেশন চত্তরে ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী মো. এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয় ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। বাংলাদেশ অংশে রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষে গত ২৭ অক্টোবর ওই পথের জিরো রেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলের একটি ইঞ্জিন সফলভাবে পরীক্ষামূলক চলাচল করে। বাংলাদেশ অংশে রেল লাইন স্থাপনের কাজটি করছেন ম্যাক্স ইনফ্রাসট্রাকচার লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। 

অপর দিকে হলদিবাড়ি থেকে ভারতীয় সীমান্তের ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ করে গত ৮ অক্টোবর ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের অংশে শূণ্য রেখা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক রেলের একটি ইঞ্জিন চালায়।

অবিভক্ত ভারতের রেল যোগাযোগের এটিই প্রধান পথ ছিল। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এটি চালু ছিল। পাক-ভারত যুদ্ধের পর সেটি বন্ধ হয়। সেই রেল যোগাযোগটি ৫৫ বছর পর চালু করতে উদ্যোগ নেয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।


ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাসট্রাকচার লিমিটেড সূত্র মতে, চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণে সরকারের পক্ষে বরাদ্দ দেয়া হয় ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। রেলপথ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ৬৪ কোটি টাকার মতো। অবশিষ্ট প্রায় ১৬ কোটি টাকা দিয়ে চিলাহাটি আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন নির্মান, ট্রেনের ওয়াশার রুম, ১০টি লাইন, দুইটি প্লাটফর্ম ও দুইটি ওভার ব্রিজ নির্মান করা হবে। #


পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 6286927802051402501

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item