নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কৌশলে প্রেমিকাকে হত্যা প্রেমিকের স্বীকারোক্তি
https://www.obolokon24.com/2020/07/kisaargang.html
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিকা মুশফিরাত জাহান নিঝুমকে (১৯) কৌশলে ডেকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ পুকুরে ফেলে রেখেছিল প্রেমিক জুয়েল রানা(২১)। আজ শুক্রবার দুপরে নীলফামারী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আমলি আদালত ৪ এ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবাববন্দী দিয়েছে প্রেমিক জুয়েল। এরপর আদালত তাকে জেলা কারাগারে প্রেরন করেন। এদিন বিকালে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ওসি হারুন অর রশিদ ও মামলার তদন্ত কর্মকতার্ এসআই আব্দুল আজিজ প্রেস ব্রিফিং করেন।
মুশফিরাত জাহান নিঝুম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মধ্য রাজীব ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের গোলাম মর্তুজার মেয়ে। সে নীলফামারী সরকারী মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিল। অপর দিকে হত্যাকারী সোহেল রানা একই উপজেলার মধ্যরাজিব গ্রামের চ্যাংমারী গ্রামের আনছার আলীর ছেলে।
প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়, গত সোমবার (২৭ জুলাই) বেলা ৩টার দিকে খবর পাওয়া যায় মুশফিরাত জাহান নিঝুমের মৃত দেহ তার বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে আছে। কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ মেয়েটির বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুরতহাল প্রস্তুত পূর্বক মৃতদেহ উদ্ধার করে জেলার মর্গে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। পরের দিন মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের পক্ষে দাফন করা হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম পিপিএম) জানান, শুরুতেই সন্দেহ ছিল মেয়েটি পুকুরে ডুবে মারা যায়নি। মৃত্যুর রহস্যের গন্ধের ঘটনাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল (পিপিএম), কিশোরগঞ্জ থানার ওসি হারুন অর রশিদ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আব্দুল আজিজকে একটি গাইড লাইন দিয়ে নিবিরভাবে অনুসন্ধান পূর্বক বিভিন্ন প্রন্থা অবলম্বন করার করার জন্য দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। মেয়ের বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের আসামী করে ৩১ জুলাই রাত ১২টা ৫ মিনিটে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিঝুমের প্রাক্তন কথিত প্রেমিক জুয়েল রানাকে রাত দেড়টার দিকে তার নিজবাড়ি হতে আটক করে থানায় নেয়া হয়।
থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা নিঝুমকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে জানায় ২০১৭/২০১৮ সালে মুশফিরাত জাহান নিঝুমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় নিঝুম তৌফিক নামে তার এক বন্ধুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি জুয়েল জানতে পারলে নিঝুম জুয়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। নিঝুম মোবাইল সিম পরিবর্তন করে নতুন সিম দ্বারা চলতি বছরের জুন মাসের দিকে পুনরায় জুয়েলের সাথে কথা বলতে শুরু করে। জুয়েল নিঝুমকে বলে যে, সে তাকে ভুলতে পারতেছে না। নিঝুমকে জুয়েল বলে যে, কবিরাজের মাধ্যমে তুকতাকের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন না করলে সে তাকে ভুলতে পারবে না। নিঝুম জুয়েলের কথায় সরল মনে সায় দেয়। জুয়েল সাত মসজিদের পানি এবং তিনটি মন্দিরের মাটি জোগাড় করে নিঝুমকে দেয়। মাটিগুলো তাদের সুপারি বাগানের চারপাশে এবং পানি নিঝুমের শয়ন ঘরের চার ওয়ালে ছিটিয়ে দিতে বলে। নিঝুম জুয়েলের কথামতো তাই করে। এরপর জুয়েল তাকে দেখা করার পায়তারা করে ফন্দি করে কৌশল নিয়ে কবিরাজকে নিয়ে তার (নিঝুম) সাথে দেখা করতে হবে। তাদের দুজনের পরামর্শে গত ২৬ জুলাই রাতে দেখা করার কথা হয়। কিন্তু নিঝুমের বাবা মা জেগে থাকলে তাদের দেখা হবেনা বলে নিঝুম জুয়েলকে জানালে জুয়েল ২৬ জুলাই বিকালে নিঝুমের বাড়ীর ধারে গিয়ে ৬টি ঘুমের ট্যাবলেট নিঝুমকে দিয়ে আসে এবং সেগুলো তার বাড়ীর লোকদের খাওয়াতে বলে। যেন রাতে তাদের দেখা হওয়া সহজ হয়। নিঝুম জুয়েলের কথামতো ঘুমের ট্যাবলেট গুলো পরিবারের সদস্যদের খাইয়ে দেয়। এরপর রাত দেড়টার দিকে নিঝুম তাদের বসতবাড়ীর পূর্ব পার্শ্বের সুপারি বাগানে জুয়েলের সাথে দেখা করতে যায়। নিঝুম কবিরাজের কথা জিজ্ঞেস করতেই জুয়েল তৌফিকের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করে এবং তৌফিকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে নিঝুমকে চাপ দেয়। নিঝুম তার কথায় রাজি না হয়ে জুয়েলের গালে চড় মারে। এতে জুয়েল ক্ষিপ্ত হয়ে নিঝুমের গলা চেপে ধরে হত্যা করে সুপারি বাগান সংলগ্ন পুকুরে ফেলে নিঃশব্দে চলে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল (পিপিএম) জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল রানা তার প্রেমিকা মুশফিরাত জাহান নিঝুমকে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে। এরপর তাকে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-০৪ এ নেয়া হয়। সেখানে সে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। #