ঠাকুরগাঁওয়ের সরকারি গণগ্রন্থাগারে বই থাকলেও নেই পাঠক

মো: আব্দুল আউয়াল, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : 

ঠাকুরগাঁওয়ের সরকারি গণগ্রন্থাগারে বই আছে, নেই শুধু নিয়মিত পাঠক। পাঠক স্বল্পতার কারণে বইগুলোও পড়ে রয়েছে অবহেলায় ও অপাঠ্য অবস্থায়।
কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও গণগ্রন্থাগার বিমূখ পাঠকরা। কারণ পাঠকরা মূহুর্তের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে পেয়ে যাচ্ছেন সকল প্রকারের তথ্য। এতে করে ছাপা হরফের বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন পাঠকরা।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের পূর্ব গোয়ালপাড়া এলাকায় অবস্থিত সরকারি গণগ্রন্থাগার গেলে এ চিত্র চোখে পড়ে।

সরকারি গণগ্রন্থাগারের জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান আম্বিয়া বেগম বলেন, ১৯৮২ সালে গ্রন্থাগারটি সরকারি করণ হয়। এর আগে গ্রন্থাগারটি ছিল শহরের হাজীপাড়া, তারপর নরেশ চৌহান সড়কে ভাড়া বাসায়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে শহরের পূর্ব গোয়ালপাড়া এলাকায় ২৭ শতাংশ জমির ওপর একতলা নিজস্ব ভবনে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

এই গ্রন্থাগারে পাঠকদের জন্য রয়েছে ২৬ হাজার ৮৯১টি বই। এরমধ্যে রয়েছে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ধর্মীয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই। অভিধানসহ ইংরেজি ভাষারও বেশ কিছু বইও রয়েছে এখানে।

গ্রন্থাগারে প্রতিদিন ১০টি দৈনিক বাংলা, ১টি ইংরেজি, সাপ্তাহিক ১টি, ১টি মাসিক ও ১০টি ম্যাগাজিন পত্রিকা রাখা হয়। সপ্তাহের শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গ্রন্থাগারটি খোলা থাকে এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বন্ধ থাকে। এছাড়াও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে গ্রন্থাগারটি বন্ধ থাকে।


গ্রন্থাগারটি একজন জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান, লাইব্রেরি এসিসটেন্ট ও অফিস সহায়ক দিয়ে  চলছে। এখানে পদশূণ্য রয়েছে লাইব্রেরিয়ান, ক্যাটালগার, ডাটা এন্ট্রি অপারেট ও বুক সোটার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষে ৭০ জন পাঠকের নিরিবিলি পরিবেশে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ পাঠক রয়েছে মাত্র ১০জন। কেউ পড়ছেন বই, কেউ পেপার, কেউ আবার সাহিত্য, কেউবা পড়ছেন গল্প-কবিতা-উপন্যাস। এই গ্রন্থাগারে বেশিরভাগ পাঠক আসেন পত্রিকা পাঠের জন্য। এখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও জবস কর্ণার ও শিশু কর্ণার । দৈনিক এ গ্রন্থাগারে ২৫-৩০ জন পাঠক আসেন।

সরকারি গণগ্রন্থাগার থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দুরত্ব দেড় কিলোমিটার; সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ২ কিলোমিটার; সরকারি মহিলা কলেজ ৫০০ গজের এবং সরকারি কলেজের দুরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার।

গ্রন্থাগারে আসা সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করা বিলাশ রায় বলেন, লেখাপড়া শেষ করেছি প্রায়; এখন ছুঁটছি চাকরির সন্ধানে। সরকারি গণগ্রন্থাগারে আসা হয় শুধুমাত্র চাকরির পত্রিকা পড়ার জন্য।

গ্রন্থাগারে আসা ঠাকুরগাঁও কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে নিয়মিত আসি, এখানে বই পড়ি, পত্রিকা পড়ি। এখানে দৈনিক পত্রিকাগুলো ১২টার পরে আসে। তবে এখানে বিজ্ঞানভীত্তিক কোন পত্রিকা পাওয়া যায় না।

মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি মূলত ঢাকার শাহাবাগ এলাকার গ্রন্থাগারের একজন নিয়মিত পাঠক। ঠাকুরগাঁও এসেছি সপ্তাহখানেক আগে। শাহবাগের গ্রন্থাগারে সিট পাওয়ার জন্য ভোরে যেতে হত, তারপরও সিট পাওয়া যেত না। আর এখানে দেখছি পাঠকের সিট থাকার পরও পাঠক নেই।

শহরের হাজীপাড়া এলাকার ফারজানা আক্তার বলেন, সময় পেলেই ছুঁটে আসি এই গ্রন্থাগারে গল্প-উপন্যাসের বই পড়ার জন্য। তবে এই গ্রন্থাগারটি সেই পুরনো বই দিয়েই চলছে। আমরা চাই  প্রত্যেক বছর গ্রন্থাগারটিতে নতুন নতুন বই সংগ্রহ করা হোক।

প্রচার-প্রচারণার অভাবের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে পাঠকের উপস্থিতি কম বলে মনে করেন পাঠকরা।

শিক্ষাবিদ প্রফেসর মনতোষ কুমার দেন বলেন, একজন শিক্ষিত মানুষের কাছে বইয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। বই চিন্তার খোরাক যোগায়। তাই বই পড়ার কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমানে স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সকলের হাতের মুঠোয় থাকায় গ্রন্থাগারে পাঠকের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।

গণগ্রন্থাগারের জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান আম্বিয়া বেগম বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে গ্রন্থাগারটি একটু দুরে হয়ে গেছে; তাই এখানে পাঠক কম। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ছাড়া আমরা তেমন প্রচার-প্রচারণা করতে পারিনা। এ কারণে এখানে প্রচারের বেশ অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে জাতীয় দিবস ও বই পাঠ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়াও বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত পত্র পাঠানো হয় শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারমূখী করার জন্য। এই গ্রন্থাগারে পাঠক বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করি সামনে দিনগুলোতে পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি হবে।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 2458501905612987453

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item