ছিপছিপে বৃষ্টি উত্তুরী ঠান্ডা বাতাসে শীত জেঁকে বসছে

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ॥ বর্ষা বিদায় নিলেও ঋতু পরিক্রমায় হেমন্তে দেখা দিয়েছে বৃষ্টি!  শুক্রবার(২৫ অক্টোবর) নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চল জুড়ে ভোররাত থেকে ঝমঝম বোল দিনভর ছিপছিপে বৃস্টি অব্যাহত ছিল। এ রির্পোট লিখার সময়ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা বৃস্টি চলছিল।
আগামীকাল শনিবারও দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে।

বাংলার ঋতু এবার শীতের পথে এগোচ্ছে। হালকা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কম থাকায় কিছুটা শীত অনুভূত হচ্ছে। নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চল জুড়ে ছিপছিপে বৃষ্টির জেড়ে জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে।
ঋতু এমন বৃস্টি শীতের জানান দিচ্ছে। বৃষ্টির সাথেই উত্তুরী ঠান্ডা হাওয়ার জেড়ে কাবু আবালবৃদ্ধবনিতা। বৃষ্টির জন্য রাস্তায় পানি জমেছে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ তৈরি হয়েছে কর্দমাক্ত । দিনভর সূর্য্য পাটে ছিল। দেখা মেলেনি তার। এই বৃষ্টির দরুন জনজীবন যেমন বিপর্যন্ত, তেমনি বৃষ্টি হওয়াতে সকলের মাথায় ছাতা ও  গায়ে উঠেছে ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য গরম পোশাক। আবার গরম পোশাক পড়েই শুক্রবারের জুম্মার নামাজ আদায়ে মসজিদে উপস্থিত হন মুসল্লিারা। আকাশতলে ঘনঘোর মেঘ। সূর্য গেছে পাটে। ঝিরি ঝিরি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। হিমেল হাওয়া বইছে।
সকাল দুপুর বিকেল ও সন্ধ্যা বোঝাই ছিল ভার। তবে ঘড়ির কাটা বলে দিচ্ছিল সময়। হেমন্তের দিনগুলোতে এমনিতেই বিকেলগুলো স্বল্পায়ু। চারটার পর থেকেই ছায়া ঘনিয়ে আসে। পাঁচটায় সন্ধ্যা।  দিন আরও ছোট হয়ে আসছে ক্রমেই।
অপরদিকে বৃষ্টির জেরে চাষের জমি সহ শাকসবজির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। তারা জানান শীতের যে ফলন গুলো অর্থাৎ সর্ষেফুল থেকে শুরু করে ধান ও আলু এই বৃষ্টির জেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে।সকাল থেকে সূর্যের দেখা নেই।
এই বৃস্টিত ভিজি ভিজি ক্ষেতত কাজ কাম করা যাইবেনা বাহে। এ্যালাকার (এখনকার) বৃস্টি ভালা না। ভিজিলে নির্ঘাত জ্বর আইবে। বিছানাত পরি গেইলে ৭দিন উঠা যাইবেনা। তার উপর আকাশত মেঘ। অন্ধকার করি বৃষ্টি নামছে । হঠাৎ হঠাৎ বিজলিও চমকাচ্ছে। এমন করি কাম করিবার গেইলে মরন হইবো বাহে। না খায়া থাকমো, তাও ক্ষেতত নামিবোনা। আজ শুক্রবার সকালে  কৃষক আছকর আলী(৪৮) বলছিল কথা গুলো। তার বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় গ্রামে।
এ দিন সকাল হতে সোনারায় ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয় পরিচয়পত্র, নতুন ভোটারদের ছবি, আইরিশ(চোখের মনি) ও দশ আঙুলেরছাপ নিয়ে হাল নাগাদ ভোটার তালিকার কাজ চলছিল। যারা নতুন ভোটার হচ্ছিল তাদের এই দৃশ্য দেখতে তিনি ছাতা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানেই তার সঙ্গে কথা। তিনি বললে ধান পেকে হলুদ হয়ে উঠছে। এমন আবহাওয়ায় নিয়ে তিনি ফসল তুলতে পারছেন না ঘরে। পাঁচ বিঘা জমির ধান কাটতে দৈনিক হিসেবে চারজন শ্রমিক নিয়েছিলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার ধান কাটার কাজ শুরু করলেও সকাল ১০টার দিকে মেঘ দেখে কাজ ফেলে বাড়িতে চলে যান শ্রমিকরা। মেঘ গর্জন করলে কোন শ্রমিক মাঠে থাকতে চায়না। বৃস্টি আর  ঘন ঘন বজ্রপাত আতঙ্কে মাঠে যেতে চাইছেন না শ্রমিক। কারন ওই এলাকায় এর আগে বৃস্টি আর বজ্রপাতের সময় ফসলের মাঠে কাজ করতে গিয়ে অনেকে জরে পড়েছিল আর বজ্রপাতে দুই কামলার মৃত্যু ও ১৬ জন আহত হয়েছিল। তাই সকলের মনে ভয় ঢুকেছে।
এদিকে সেখানে দেখা যায় নতুন ভোটার হবার জন্য উপচে পড়া ভিড়। ছাতা নিয়ে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাড়িয়ে রয়েছে নতুন ভোটার হবার অপেক্ষা। বৃস্টির জেরে যে ঠান্ডা পড়েছে তা উপেক্ষা করেই নতুন প্রজন্ম ভোটার তালিকায়নাম তুলতে ছুটে এসেছে। ১৮ বছর পেরিয়ে ১৯ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে এমন কয়েকজন আদিল, রহমান, বকুল,নিতাই জানালেন নতুন ভোটার হচ্ছি। জাতীয় পরিচয় পত্র পাবো। এই আনন্দে বৃস্টিবাদলেই ছেিট এসেছি। এমন আনন্দ উচ্ছাদ আমাদের জীবনে ইতিহাস হয়ে থাকবে।
শুক্রবারে পথঘাটে দোকানে জনসমাগম কম বলে অধিকাংশ দোকানই বন্ধ। যে কয়েকটি খুলেছে, সেগুলোতে দিনের বেলায়ও কাজ-কর্ম চলছে বাতি জ্বালিয়ে। এ যেন দিনের বেলায়  প্রকৃতিতে গভীর রাতের চিহ্ন।  বরাবর এ সময়টায় বৃষ্টি থাকে না। কিন্তু এবার বাজ-বিজলি-বৃষ্টি হানা দিচ্ছে প্রায়ই। বর্ষায় বৃষ্টি ছিল কম। সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিতেই যেন প্রকৃতি শরৎকে ভরিয়ে দিয়েছিল ঘন ঘন বৃষ্টিতে। হেমন্তেও সেই বৃষ্টির রেশ। পাশাপাশি বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত দোর গোড়ায়।
এই বৃস্টির কয়েকদিন আগে দেখা গিয়েছিল ধানের শিষের উপরে  শিশিরবিন্দু'।শিশির-কুয়াশা নিয়ে হাজির হয়েছে হেমন্ত। ঠান্ডা বাতাসে ভর করে হাজির হয় শিরশিরানিও। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোকেই হালকা-পাতলা চলাচল করতে দেখা যায়।  রিক্সাওয়ালা ও ইজিবাইক চালকরা জানান,  ছিপছিপে বৃষ্টির কারণে যাত্রীও নেই। এ ছাড়া গাড়ি চালাতে বেশ কষ্ট হয়। তাই সব বন্ধ করে এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। ফলে শুধু অকাল বৃষ্টির কারণে তাদের বা তাদেরমত নি¤œ আয়ের পেশার মানুষদেরকে ভোগান্তিতে ফেলেছে।
বৃষ্টি বেশি দিন হইলে খবর আছে জানালেন বড় বাজারের কাচা তরি-তরকারির দোকানি মোখলেছ মিয়া। বেশি দিন বৃষ্টি হলে মাঠের ফসলের ক্ষতি হবে। জলাবদ্ধতায় ধান,ও অন্যান্য শাক-সবজিতে পচন ধরতে পারে। গ্রামের দিকে মাঠে মাঠে এখন যে ফসলের সমারোহ, অতিবৃষ্টি ক্ষতি করতে পারে সেগুলোরও।
তার মতে পিয়াজের দাম উঠেছে ১০০ টাকা কেজি। আড়তদারগন বলেছে দাম আরো বাড়বে। এমন বৃস্টি হলে পিয়াজের কেজি দেড়শত টাকা হতে পারে এমন কথাই বললেন আড়তদার কায়সার মিয়া।
হেমন্তের সমৃদ্ধি আর তার রোদ-কুয়াশার দ্বন্দ্ব ভরা নিসর্গের সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে হলে ওই সংযমটুকুও খুব দরকার।স্বস্তি ও শঙ্কার মাঝ দিয়ে এভাবেই কাটছে ঘোরতর বৃষ্টিø¯œাত দিন।
অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে এ অঞ্চলের শ্রমজীবি মানুষেরা কাজের সন্ধানে বের হতে পারেনি। বেচাকেনায় মন্দা হয়েছে দোকানপাটে। শীতের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় গরম কাপড় পড়ছে মানুষজন।
হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান জানান, আগাম শীতে শীতার্ত মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র মজুত রয়েছে। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 2286178497047453250

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item