লম্পট কর্তৃক গোসলের দৃশ্য দেখায় সৈয়দপুরে নবম শ্রেণির ছাত্রীর আত্নহত্যা ॥ থানায় মামলা দায়ের

তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: 
নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক লম্পট কর্তৃক গোসল করার দৃশ্য দেখায় লোকলজ্জায় সুমি রাণী রায় (১৪) নামের নবম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রী আত্নহত্যা করেছে। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার বাঙ্গলীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষণপুর ভুজারীপাড়ার ওই আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে। এ আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অভিযোগে একই এলাকার বখাটে লম্পট সূর্য্য চন্দ্র রায় ওরফে মটুরু’র বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন আত্মহননকারী স্কুল ছাত্রীর মা  ময়না রানী রায়। গত শনিবার রাতে সৈয়দপুর থানায় ওই মামলা হয়।  এক লম্পটের কারণে স্কুল ছাত্রীর  আত্মহত্যার ঘটনাটি এখন  গোটা উপজেলায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
 মামলায় উল্লেখ করা হয়, সৈয়দপুর উপজেলার তিন  নম্বর বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষণপুর ভুজারীপাড়ার দিনমজুর হরেন চন্দ্র রায় ও গৃহিনী ময়না রাণী রায় দম্পতির তৃতীয় সন্তান সুমি রাণী রায়। সে তাদের বাড়ির পাশের বাঙ্গালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক শাখার মেধাবী ছাত্রী। তাঁর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে একই এলাকার  দিজেন চন্দ্র রায়ের ছেলে  দুই সন্তানের জনক লম্পট ও দুশ্চরিত্র সূর্য্য চন্দ্র রায়ের।
 সে (সূর্য্য) দীর্ঘদিন ধরে সুমিকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ঘটনাটি স্কুল ছাত্রী সুমির বাবা-মা একাধিকবার সূর্য্যরে পরিবারকে অবহিত করেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। বরং সে সুমিকে তাঁর খপ্পরে ফেলতে সুযোগ খুঁজতে থাকে।
 ঘটনার দিন  শনিবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ৩ টার দিকে সুমি তাদের বাড়ির গোসলখানায়  গোসল করছিল। এ সময় তাঁর বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। আর সুমির এক বড় বোন  ববিতা রায় কাজে সৈয়দপুর শহরে এবং ছোট বোন ভরসা রায় বাড়ির বাইরে খেলছিল। আর এ সুযোগেই লম্পট সূর্য্য  সুমিদের বাড়িতে ঢুকে গোপনে সুমির গোসলের দৃশ্য দেখছিল। এর এক পর্যায়ে সে গোসলখানায় গিয়ে স্কুল ছাত্রী সুমিকে জাপটে ধরে। এ সময় তাঁর চিৎকারে সম্পর্কের ভাই বকুল চন্দ্র রায় সুমিদের বাড়িতে আসা মাত্রই লম্পট সূর্য্য রায় ওরফে মটুরু  দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর অল্প সময়েই ঘটনাটি চাউর হয়ে পড়ে। এ সময় প্রতিবেশিরা এসে সুমিদের বাড়িতে ভিড় জমান। পরবর্তীতে সবার অজান্তে নিজের ও পরিবারের আত্মসম্মান এবং লোকলজ্জায় বাড়ির একটি ঘরে তীরের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করে। পরে বাড়ির লোকজন ঘটনাটি টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।  পরে খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ  রাতেই হাসপাতালে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে  সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদার রহমান। তিনি জানান, স্কুল ছাত্রীর গলায় ফাঁস লাগানোর চিহ্ন রয়েছে।  রবিবার  ময়না তদন্তের জন্য সুমির লাশ নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।   
 বাঙ্গালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজমুল হক জানান, মেয়েটি ক্লাসের মধ্যে খুব শান্ত, শিষ্ট এবং মোটামুটি মেধাবী ছিল। তবে ঘটনার দিন পারিবারিক কাজ থাকায় সে স্কুলে আসেনি।
  এ ঘটনায় আজ রবিবার সকালে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি সুমির বাবা-মা ও গ্রামবাসীর সঙ্গে ঘটনা বিষয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, এ ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
 সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) মো. নুরুজ্জামান বেগ জানান,  নিহত সুমির মা ময়না রাণী রায় বাদী হয়ে সূর্য্যকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে তাকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হবে পুলিশ।
এদিকে, গতকাল রবিবার সকালে সরেজমিনে স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মানুষের ভীড়। বাড়ির উঠানে বসে সুমির মা ময়না রাণী রায়,বড় বোন নীলা রাণী রায় ও ববিতা বাণী রায় এবং ছোট বোন ভরসা রাণী রায় আহাজারি করছিলেন। আর সুমির বাবা হরেন চন্দ্র রায় মেয়ের এ ঘটনায়  একেবাওে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এ সময় তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না। তিনি বাড়িতে আগত মানুষের মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে শুধু দেখছিলেন।
এদিকে, সুমির আত্মহত্যার ঘটনায় তার বিদ্যালয়ের সহপাঠিরাও গতকাল তাদের বাড়িতে ছুঁটে আসেন। এ সময় তারা সুমির কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ফাতেমাতুজ্জোহরা নামের তার একটি সহপাঠি বলেন, সুমি তাদেও একজন ভাল বন্ধু ছিল। আজ আমরা তাকে হারালাম। সে সুমির আত্মহননের ঘটনায় প্ররোচনাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে।
 ওই হিন্দু পল্লীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সূর্য্য একজন দুশ্চরিত্র প্রকৃতির ছেলে। তাঁর স্ত্রী- দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তারপরও সে বিভিন্ন সময়ে এলাকার মেয়েদের প্রতি কুদৃষ্টি দেয়। এর আগে নারীঘটিত বিষয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ হয়েছে। এবার তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।                                        

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 8004066225318488801

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item