ঠাকুরগাঁও-১ আসন : বিএনপিতে ফখরুল, আ. লীগে একাধিক প্রার্থী

আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এলাকা হলেও ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আ. লীগের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। ১৯৯৬ সাল থেকে দলের প্রার্থী হয়ে চারটি নির্বাচনের মধ্যে ৩ টিতেই আ. লীগকে জয় এনে দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আ.লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চান। তবে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ‘মূল্যায়ন’ না করার অভিযোগ এনে মাঠে নেমেছেন দলটির আরও ছয় নেতা।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আসন থেকে নির্বাচন করায় বিএনপিতে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে আ.লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও যে কোনো একজন প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে দলটিকে। সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন বঞ্চিতদের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন দলীয় প্রার্থী। এ আসনে বর্তমান মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৬২। তবে এক লাখেরও বেশি রয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট।

নৌকা চান সাত নেতা

১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য হন আ. লীগের খাদেমুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন রমেশ চন্দ্র সেন। ২০০১ সালে তিনি মির্জা ফখরুলের কাছে হারলেও ২০০৮ সালে আসনটি পুনরুদ্ধার উদ্ধার করেন। সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইমরান হোসেন চৌধুরীকে হারিয়ে আবারও নির্বাচিত হন তিনি। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদি রমেশ চন্দ্র সেন।

রমেশ চন্দ্র সেন এলাকায় দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন। তবে সংসদ সদস্যকে নিয়ে অসন্তোষ আছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলে সৃষ্টি হয়েছে বিভক্তিও। এ কারণে নৌকার মাঝি হতে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপরতা শুরু করেছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ে।

আ. লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কোনো প্রয়োজনে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে গেলে তিনি গ্রাহ্য করেন না। এ কারণে অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে রমেশ চন্দ্র সেনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ দূরত্ব ঘোচাতে তিনি প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সভা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।

ছাত্রলীগ, যুবলীগের রাজনীতি করে উঠে আসা জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মু. সাদেক কুরাইশী এই আসন থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ২০০৫ সাল থেকে তিনি জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালে জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। আর ২০১৬ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।

সাদেক কুরাইশী বলেন, ‘কর্মী সমর্থকেরা সংসদ নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী হতে অনুরোধ করছেন। আমিও এটা অনুভব করে এ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। তবে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা মেনে নেব।’

রমেশ চন্দ্র সেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান জেলা আ. লীগের সহসভাপতি মো. মকবুল হোসেন। তিনিও এবার মনোনয়ন চাইবেন জানা যায়। মনোনয়ন প্রত্যাশী মকবুল হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশের অনেক বয়স হয়ে গেছে। তিনি এখন জাতীয় পর্যায়ের বড় পদে থাকায় এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাকে নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে চাইছেন বলে আমি প্রার্থী হতে চাচ্ছি।’

২০১৪ সালের সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ. লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন সাবেক জেলা যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা আ. লীগের সভাপতি অরুণাংশু দত্ত। নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ১৯ হাজার ভোট পেয়েও হেরে যান। তিনিও এবার সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

অরুণাংশু দত্ত বলেন, দলের তৃণমূল কর্মীসভায় বর্তমান সংসদ সদস্য কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার দুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করে বলেন, তাকে প্রার্থী করা হলে তিনি যে কোনো প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পাবেন। তবে মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাবেন জানান তিনি।


বিএনপিতে শুধুই ফখরুল:

পুরোপুরি রাজনীতি শুরুর আগে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন বর্তমান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি ক্রিড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তার বেশ সুনাম ছিল। ফলে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে তাঁর অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে।

১৯৮৯ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ফখরুল। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তবে ২০০১ সালে জয়ী হওয়ার পর বিএনপি সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ফখরুল। পাঁচ বছর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের পর ভারমুক্ত হন মির্জা ফখরুল। এবারের নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ার উপলক্ষে এলাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ফখরুল। তবে মামলা ও পুলিশি হয়রানির কারণে সেভাবে মাঠে নামতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।

জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব আমাদের অভিভাবক। এ আসনে তার কোনো বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ও নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। তবে মামলার কারণে তাকে যখন নির্বাচনে অযোগ্য করা হবে, তখন বিকল্প প্রার্থী নিয়ে ভাবা যাবে।’

অন্য দলগুলোও তৎপর

ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াতের বেশ কিছু সমর্থক রয়েছে। জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনের কারণে তারা বরাবরই বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন হলে এবারও বিএনপি দলটির সমর্থন পাবে। তবে জোট না হলে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসেন এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেলাওয়ার হোসেনের বড় ভাই ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর।

এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজী চৌধুরী। তিনি এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইমরান হোসেন চৌধুরী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জেলা সভাপতি মনসুর আলীও দলের পক্ষে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।

পুরোনো সংবাদ

নির্বাচন 380239938958036091

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item