পঞ্চগড়- ০১- আওয়ামী জোটে জটিল সমীকরণ,বিএনপি জোটে তৌহিদুলেই ভরসা

সাইদুজ্জামান রেজা, পঞ্চগড়ঃ
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলা শহর। এখানে সংসদীয় আসন ২টি। পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী কেন্দ্রে লবিং করছেন। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় পৃথকভাবে গণসংযোগও করছেন।
অপরদিকে মনোনয়ন নিয়ে জোট-মহাজোট ও ঐক্য ফ্রন্টের শরিক দলগুলোও কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তাই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে দুই প্রধান দলেরই অন্তরায় শরিক দল। জোট-মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট পড়েছে জটিল সমীকরণে। পঞ্চগড়-১ আসনটিতে জাতীয় পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ জাসদ ও জামায়াতে ইসলামী- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর জয় পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর।
পঞ্চগড়-১ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭৩ জন। এ আসনের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে গ্রামের চায়ের দোকান সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী আলোচনা। তবে আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী দৌড়ঝাঁপ শোডাউন দেখা গেলেও বিএনপির প্রার্থীদের তৎপরতা তেমন একটা চোখে পড়ে না। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রার্থী মরহুম মির্জা গোলাম হাফিজ ১৯৯১ সালে এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করলেও বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়- ১ আসনটি  ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পাটির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। ঐ নির্বাচনে অবিভক্ত জাসদের প্রার্থী, বর্তমানে বাংলাদেশ জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধান মশাল প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জেলা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মনে একটাই প্রশ্ন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটে এ আসন থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, নাজমুল হক প্রধান, নাকি জাতীয় পাটির প্রার্থী আবু সালেক, নাকি আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থীদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। জোট, মহাজোট বা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা ছাড় না দিলে এ আসন ২টিতে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নানা মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে। পঞ্চগড়-১ আসনে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাঈমুজ্জামান মুক্তা দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পঞ্চগড় জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক দলীয় বা জোট থেকে মনোনয়ন পেতে দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন, গ্রামে গ্রামে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করছেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি তার পক্ষের লোকজনদের নিয়ে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন নাঈমুজ্জামান মুক্তা। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।সাবেক স্পীকার ও আইনমন্ত্রী মরহুম মির্জা গোলাম হাফিজের জামাতা মো. মনির হোসেন নির্বাচনী এলাকায়  সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। তিনিও বিভিন্ন ব্যক্তি, ক্লাব, প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরে দান-অনুদানসহ এলাকার মানুষের পাশে থাকছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত স¤্রাট বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও শোডাউন করছেন। নবীন-প্রবীণ নেতাকর্মীদের নিয়ে উন্নয়ন ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী নাঈমুজ্জামান মুক্তা বলেন, তরুণ প্রজন্ম এবং স্থানীয় মানুষের ভালোবাসাই আমার ভরসা। আওয়ামী লীগের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনোনয়ন চাইবো। আগামী দিনে ক্লিন ইমেজের এবং তরুণ নেতৃত্ব খুঁজলে আওয়ামী লীগ আমার প্রতি আস্থা রাখবে। সেক্ষেত্রে আমি আমার সততা এবং যোগ্যতা নিয়েই জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারবো।জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ২০০৮ সালে আমি বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছি, এবং ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। এ কারণে তিনি এবার আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আমি আশাবাদী। মানুষের মনের কথা আমি বুঝি। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে আবার নির্বাচিত করবেন। পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত স¤্রাট বলেন, বিগত নির্বাচনে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে সাধারণ মানুষের সমর্থনে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবো বলে আশা করছি। পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সব নেতাকর্মী ও সমর্থক একত্রিত হবে। বিএনপি সাবেক স্পীকার ও আইনমন্ত্রী, পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক এমপি মরহুম মির্জা গোলাম হাফিজের মৃত্যুর পর পঞ্চগড় জেলা বিএনপির হাল ধরেন সাবেক স্পীকার ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী মজাহারুল হক প্রধানের কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবারে কিছু দিন যাবৎ ব্যারিষ্টার জমির উদ্দীন সরকার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির এর পক্ষে পঞ্চগড়- ১ নং আসনে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছেন। ব্যারিষ্টার জমির উদ্দীন সরকার পঞ্চগড়- ১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন না বলে দলীয় সভা-সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ও  ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হতে চান ঢাকায় বসবাসরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকারের পুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনিও দীর্ঘ দিন পর পঞ্চগড়-০১ আসনের বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। পঞ্চগড়-০১ আসনের এবারে মনোনয়ন প্রত্যাশী পঞ্চগড় পৌর বিএনপির সভাপতি, পঞ্চগড় পৌরসভার ৫ বারের মেয়র মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, তিনিও পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী ও তেতুঁলিয়া উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়র তৌহিদুল ইসলাম ১৯৮৩ সালে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই পরবর্তী ১৯৮৫ সালে পঞ্চগড় পৌরসভা গঠিত হলেই ১৯৮৯ সনে প্রথম পৌর চেয়াম্যান নির্বাচিত হয়। পরবর্তীতে ৯৪, ০৪, ১১, ১৫ সালে পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়। বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে এবারে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন। পঞ্চগড় জেলা বিএনপির নবীণ ও প্রবীণ নেতাকর্মীদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত তিনি। পঞ্চগড় জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিশ্বাস মেয়র তৌহিদুল ইসলামকে ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট বা বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। পঞ্চগড়-০১ আসনটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জনগণের ভোটে আমি বার বার নির্বাচিত হয়েছি, নেতা কর্মীদের সাথে আমার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে, পাশাপাশি পঞ্চগড়-১ আসনের ভোটারদের সাথে দীর্ঘদিন যাবত যোগাযোগ রক্ষা করেছি, সুখে-দুঃখে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা ও তারেক রহমান আমার ব্যাপারে অবগত রয়েছেন। আমি মনে করি, তারা আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। 

পুরোনো সংবাদ

পঞ্চগড় 4672744935414229289

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item