সাড়া জাগানো ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হারল বাংলাদেশ

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ২৯ আগস্ট॥
রেফারি মিজানুর রহমান ৬ মিনিটের ইঞ্জুরি সময়ের সঙ্গে আরো ৩ মিনিট যোগ করে ম্যাচ শেষ করলেন। কিন্তু স্কোর ১০ মিনিটের সেই ১-০ই থাকলো। ঘরের মাঠে, প্রায় ২৫ হাজার সমর্থকের সামনে ব্যর্থই হলেন বাংলাদেশের টাইগার ফুটবলাররা। ৮ বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়লো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
আজ বুধবার (২৯ আগস্ট) নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামের অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাকির আলীর শ্রীলংকা হারিয়ে দিলো বাংলাদেশকে।
এশিয়ান গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ দল কাতারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোতে ওঠার পর ফুটবল নিয়ে চারিদিকে একটা হইচই পড়েছিল। কিন্তু সাফ সুজুকি কাপের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটি হারায় প্রত্যাশার সেই ফোলা বেলুন একটু হলেও চুপসে গেলো। কারণ, এশিয়ান গেমসের তরুণদের বিশ্রাম দিয়ে এ ম্যাচের মাধ্যমে সিনিয়রদের পরখ করেছেন ইংলিশ কোচ জেমি ডে। ম্যাচের পর কোচ নিশ্চয় ধাঁধায় পড়লেন-এই সিনিয়রদের দিয়ে কী করবেন তিনি?
মামুনুল ইসলাম, ওয়ালি ফয়সাল, ফয়সাল মাহমুদ, সাখাওয়াত রনি, শহিদুল আলম সোহেলদের পরীক্ষা নিয়েছেন কোচ। কিন্তু তারা কী পেরেছেন কোচের পরীক্ষায় পাস করতে? মামুনুল ইসলামকে কোচ হয়তো কলমের এক খোঁচায় ছেটে ফেলবেন না। তাকে নিয়ে ভাববেন। ৭৮ মিনিট মাঠে ছিলেন অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পড়ে। খারাপ খেলেননি। তবে গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল ও স্ট্রাইকার সাখাওয়াত হোসেন রনি কোচের দৃষ্টি কাড়তেই পারেননি। 
১০ মিনিটে শ্রীলঙ্কার মোহাম্মদ ফজল প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে আচমকা শটে যে গোল করেছেন, সে গোলের জন্য পুরো দায় বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষকের। আর পরে বাংলাদেশ যে ম্যাচে ফিরতে পারেননি তার দায় স্ট্রাইকার সাখাওয়াত রনির।
মাঝমাঠে খেলাটা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। আক্রমণও হয়েছে প্রচুর। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বক্সের আশপাশে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা হতাশ করেছেন নীলফামারীর দর্শকদের। মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগের সেতুবন্ধনটা মোটেও ভালো হয়নি। এ ম্যাচের পর কোচ জেমির দুশ্চিন্তা বাড়লো। সাফে কাকে দিয়ে গোল করাবেন তিনি?
ম্যাচে ৬ জন খেলোয়াড় পরিবর্তন করেছেন জেমি ডে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। অপর স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন কিংবা জুয়েল রানারা নেমেও কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষককে। একমাত্র জাফর ইকবাল বাম দিক দিয়ে ঢুকে কয়েকটি নিঁখুত ক্রস ফেললেও তা গোল আদায়ের মতো ছিল না। দর্শকদের জন্য হতাশার এটাই যে, নিজেদের খেলোয়াড়দের গোল দেখতে পাননি। দেখবেন কি করে? গোল হওয়ার মতো কোনো আক্রমণও যে করতে পারেননি জেমির শিষ্যরা। একটা ভালো শটও ছিল না লঙ্কান পোস্টে।
২০১০ সালে ঘরের মাঠে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে বাংলাদেশকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল শ্রীলংকা। তার পর যতবারই বাংলাদেশের সঙ্গে খেলেছে তারা, হেরেছে; না হয় বড়জোড় ড্র করেছে। দীর্ঘ ৮ বআবার বাংলাদেশকে হারিয়ে সাফের আগে স্বাগতিকদের একটা ধাক্কাই দিলো লঙ্কানরা।
খেলা শুরুর আগেঃ-তিল ধারণের জায়গা ছিলনা নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়ামে। সব গ্যালারিতে উপচে পড়া ভিড়। মোট কথায় শুধু হাউসফুল নয়- ওভার হাউসফুল। কেনই বা হবে না।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক ফিফা প্রীতি ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে। গ্যালারি ছিল দর্শকে টইটুম্বর। ম্যাচের দিন আজ বুধবার (২৯ আগস্ট) সকালটা ছিল  মৃদুমন্দ বাতাস। কিন্তু বেলা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে মেঘের আনাগোনা। এই বুঝি বৃস্টি নামছে নামছে ভাব। মুষলধারে বৃস্টি হলে সব মাটি-? এমন চিস্তায় সকলেই হতাশায়।  না বৃস্টি নামেনি। মেঘ কেটে বাড়তে থাকে রোদের তীব্রতা। কড়া রোদ দর্শকদের উল্লাস থামাতে পারেনি। বিকাল ৪টায় খেলা। অথচ সকাল সাড়ে ১০টা হতে স্টেডিয়ামের আশে পাশে দর্শকদের ঢল নামে। দুপুর সাড়ে ১২টায় স্টেডিয়ামের প্রবেশদাঁড় খোলা হলে শহরজুড়ে লম্বা লাইনের দাঁড়ান ফুটবলপ্রেমীরা।  ধীরে ধীরে ঢুকতে থাকে তারা।
তবে বাইরের অনেক দর্শক টিকেট না পেয়ে ছুটাছুটি করেছেন শেষ মুহূর্তে টিকেট সংগ্রহ করার জন্য। ২১ হাজার ধারন ক্ষমতার শেখ কামাল স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবার পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত ধারনক্ষমতার অতিরিক্ত ৫ হাজার দর্শন প্রবেশের সুযোগ পায় অতিরিক্ত টিকে ছাড়ার কারনে। এর বাহিরে আরো ১৫ হাজার দর্শন  হতাশ মনে ফিরে গেছে। সুমন নামে এক দর্শক গেটের বাইরে থাকা অবস্থায় জানান, কাল অনেক চেষ্টার পর টিকেট সংগ্রহ করতে পারি নাই। ভেবেছিলাম ব্লাকে কিনে নিব। সেটাও চোখে পরেনি।আগের দিন ১১টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল তিন দিনেই শেষ হয়েছে ২১ হাজার টিকিট। অতিরিক্ত যে ৫ হাজার টিকেট ছাড়া হয়েছিল সেটিও ভাগ্যে জোটেনি তার।
উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের এই প্রথম আন্তর্জাতিক  ফুটবল জগতে প্রাণের ¯পন্দনে নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামের অভিষেক হলো। সেই সাথে আনন্দের মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে দিয়ে গেল। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার এই প্রীতি ম্যাচকে ঘিরে তাই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে এসে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার ফুটবল ক্রীড়াপ্রেমী। তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
তবে, মাত্র ২১ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে দর্শকদের চাহিদা ছিলো লক্ষাধিক। তাই এ আনন্দের মাঝেও যারা টিকিট পাননি, অনেকটা বাধ্য হয়ে ঘরে বসে টিভিতে খেলা দেখেই নিজেদের পিপাসা মিটিয়েছেন। এদিকে, বেশি দাম দিয়ে টিকিট কিনেও গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে না পারায় ক্ষোভ ঝরেছে অনেকের কণ্ঠে। তবে তারা খেলা দেখেছে বাড়িতে বসে টেলিভিশনের পর্দায়। 
 রাজধানীর ঢাকায় ফুটবল দর্শক কমেছে এমন কথা অনেকেই বলেন। স্টেডিয়াম এখন খালি থাকে। অনেকে মন্তব্য করেছে ঢাকার বাহিরে  ভবিষ্যতে নীলফামারী সহ বিভিন্ন জেলার স্টেডিয়ামে এমন আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের  মাধ্যমে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে বাফুফের প্রতি আহ্বান জানান নীলফামারীর ফুটবল ভক্তরা।

লাল-সবুজের গ্যালারি : স্টেডিয়ামের গ্যালারি জুড়ে ছিল লাল-সবুজের পতাকা। কিশোর-কিশোরীদের গায়ে ছিল বাংলাদেশের পতাকার রঙে তৈরি জার্সি। তাদের মাথায় ছিল জাতীয় পতাকার স্টিকার। তাদের চোখে-মুখে ছিল বিজয়ের উল্লাস। এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। 
যদিও বাংলাদেশ দল এক গোলে হেরেছে এই ম্যাচে। তাই মন খারাপ করেই বাড়ী ফিরেছে  নীলফামারীর ফুটবল প্রেমিরা। বাংলাদেশ হেরেছে তবে নীলফামারীর মাটিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে- যা  আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশী আশা মিটিয়েছে। 
খেলার শুরু আগে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি,নীলফামারী জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন , পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ,বাফুফের কর্মকর্তাগণ স্টেডিয়াম ঘুরে দর্শকদের হাত নেড়ে স্বাগত জানান।

প্রমীলাদের ভিড় : ফুটবল দেখতে যে শুধু কিশোর-তরুণরাই ভিড় করেনি, প্রমীলা দর্শকদের ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়। মহিলারদের গ্যালারী পৃথক করা হলেও স্থান না হওয়ায়  প্রায় সব গ্যালারিতেই কিশোরীদের পাশাপাশি রমনীদের ভিড় ছিল যথেষ্ট। এমন কি সাংবাদিদের জন্য পৃথক যে গ্যালারীটি রাখা ছিল সেখানেও শেষ মেষ প্রমীলারা এসে ঠাই পেয়েছে। অনেকেই ভাই-বন্ধুদের দিয়ে খেলা দেখার জন্য টিকিট সংগ্রহ করেছেন। আবার অনেকে সরাসরি নিজেই টিকিট কিনেছেন।  কলেজের ছাত্রী শারমিন আক্তার টু¤পা জানালেন, তিনি ফুটবল ভক্ত। তাই টিকিট কেনার জন্য আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কাঙ্খিত টিকিটও তিনি পেয়েছেন।
বেলা ১২টার মধ্যেই তিনি স্টেডিয়ামে হাজির হন। মায়ের সঙ্গে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসেন  ছাত্রী ফারিয়া পিংকি। পিংকি জানান, নীলফামারীতে  ম্যাচ হবে শুনেই মা-বাবার কাছে আবদার ছিল খেলা দেখার। অনেক কষ্টে  আমরা দুটি টিকিট কিনতে পেরেছি।  মাকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছি। শুধু টু¤পা-পিংকি নয়, তাদের মত অনেক কিশোরী এমনকি গৃহবধূও এসেছিলেন   খেলা দেখতে।
পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া হতে খেলা দেখতে এসেছিলেন আব্দুল হামিদ, রফিক, রাজ্জাক সহ ১৫০ জন। তারা জানায় দুই দিন আগে এসে ব্যাংকে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিল তারা। আজ সেই প্রাণের খেলা দেখতে পেল তারা। তারা বলেন ফুটবল গোলের গেলে। হারজিৎ থাকবেই। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল হেরেছে ১ গোলে। তাই বলে মন খারাপের কিছু নেই। 
তাদের কথার মতোই সুত্র পাওয়া গেছে খেলা শেষে বিজয়ী দলের কোচ পাকির আলী ও বাংলাদেশ দলের কোচ জেমি-ডে-র মুখে। প্রেস বিফ্রিং পাকির আলী বললেন নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়াম চমৎকার। এখানকার দর্শন ভাল। গোলের খেলায় গোল হবেই। হারজিৎ থাকবেই। তিনি নীলফামারীর হাজারো ফুটবল দর্শকদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। বাংলাদেশ দলের কোচ বলেছেন দুঃখজনক আমরা ১ গোলে হেরেছি। তবে সাফ ফুটবলের ভাল কিছু করে দেখাতে পারবো।
বলার অপেক্ষা রাখে না শেখ কামাল স্টেডিয়ামে  প্রথম আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচেই পেল হাউসফুল দর্শক। #  



পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 8927567333225567072

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item