সৈয়দপুরে রেলওয়ের অধিকাংশ জমি ও কোয়ার্টার অবৈধ দখলে

তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের অধিকাংশ কোয়ার্টার ও ফাঁকা জমি অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে। রেলওয়ে জমিতে রাতারাতি গড়ে উঠছে পাকা, আধাপাকা ও বহুতল বিশিষ্ট ভবন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও অবহেলায় দিন দিন রেলওয়ে কোয়ার্টার ও জমি দখল অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তারপরও রেলওয়ে কর্র্তৃপক্ষ রয়েছে একেবারে নির্বিকার। অবশ্যই মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
 রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসাম-বেঙ্গল রেলপথকে ঘিরে সৈয়দপুরে রেলওয়ের গোড়া পত্তন হয়। এখানে রেলওয়ের জায়গায় রয়েছে মোট ৭৯৮ দশমিক ৯ একর। তন্মধ্যে ১১০ একর জায়গায় জুড়ে বিগত ১৮৭০ সালে স্থাপিত হয় দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। অবশিষ্ট জায়গায় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলো, সাব-বাংলো, দুই কক্ষ ও এক কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ও আধা-পাকা কোয়ার্টার। এ ছাড়াও বেশ কিছু জায়গা ফাঁকা অবস্থায় পড়ে ছিল। এখানে রেলওয়ের কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে অফিসার্স বাংলো ৩১টি, সাব-বাংলো ১৩৯ টি, দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাসা ৭১১ টি এবং এক কক্ষ বিশিষ্ট বাসা এক হাজার ৬০৭ টি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত বাংলো, সাব বাংলো ও পাকা ও আধাপাকা কোয়ার্টারের মধ্যে বরাদ্দকৃত ৯৭৪টি, খালি পড়ে রয়েছে এক হাজার ৪৬ টি এবং বসবাসের অনুপযোগী ২২৯ টি। আর ১ হাজার ২৩৯ টি ইউনিট দখলে নিয়েছে বহিরাগতরা। এক সময় রেলওয়ের এ সব বাংলো ও কোয়ার্টারের চতুর্দিকে অনেক ফাঁকা জায়গায় ছিল। কিন্তু এসব জায়গায় জমিতে ছিল না কোন রকম সীমানা প্রাচীর। কোথাও কোথাও রেলওয়ের পরিত্যক্ত জায়গায় জমিগুলো শুধুমাত্র রেলওয়ে লাইন কিংবা পাকা স্থায়ী সীমানা খুঁটি দিয়ে সনাক্ত করা ছিল। তবে রেলওয়ে বাংলো ও কোয়ার্টার সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় জমিগুলো রেলওয়ের লাইনের খুঁটি ও তাঁরকাটা দিয়ে ঘেরা অবস্থায় ছিল। কিন্তু তারপরও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতা ও অবহেলায় এ সব ফাঁকা জায়গায় আস্তে আস্তে অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সৈয়দপুরে কি রেলভূমি বেদখল হয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য মেলেনি। তবে রেলওয়ের এক সূত্র জানায়, সৈয়দপুরে রেলওয়ে ভূমির অধিকাংশেরও বেশি বেদখল হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে স্বাধীনতার পর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে অনেকগুলো কোয়ার্টার বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে করে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সব কোয়ার্টার তথা বাসাবাড়িতে থাকতে অনীহা প্রকাশ করে। এর এক পর্যায়ে এর অনেকগুলো আবার পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। আর এই সুযোগে রেলওয়ে এক শ্রেণীর অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর সহযোগিতায় সে সব কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গায় আস্তে আস্তে বেদখল হতে থাকে। পাশাপাশি রেলওয়ে কোয়ার্টারে বসবাসকারী কিছু কিছু রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা কোয়ার্টার দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক শ্রেণীর অসৎ ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীর সহযোগিতায় বসবাসযোগ্য কোয়ার্টার বসবাসের অযোগ্য কিংবা ড্যামেজ দেখিয়ে নিজেদের দখলে রাখেন। পরবর্তীতে তারা সে সব কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গায় বাইরের লোকদের কাছে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করে দেয়। এ শহরে এমন দেখা দেখা গেছে কোয়ার্টারে বসবাসকারী শ্রমিক-কর্মচারী তাঁর নামে বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারের ফাঁকা জায়গায় নতুন করে বাসাবাড়ি তৈরি করেন। পরবর্তীতে সে সব আবার অন্যের কাছে বিপুল অংকের টাকা হস্তান্তর করছে। শহরের যে সব এলাকায় বেশির ভাগ কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গায় জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে, রাইস মিল নিচুকলোনী, অফিসার্স কলোনী, মুন্সীপাড়া, ইসলামবাগ, রসুলপুর, গোলাহাট, বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রীপাড়া, সাহেবপাড়া, গার্ডপাড়া, আতিয়ার কলোনী। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ সব কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গায় জমি দখলের বিষয়ে স্থানীয় থানায় দুই একটি সাধারণ ডায়েরী ছাড়া আর কিছুই করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ের এসব বাসা-বাড়ির অবস্থান, অবকাঠামোগত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাবিক্রি হচ্ছে।
 নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের জায়গায় দখল আর ভবন নির্মাণের দৃশ্য দেখে মনে হবে যেন দখলে প্রতিযোগিতা চলছে। আর দখল প্রক্রিয়াটিই ভিন্ন রকম। রেলওয়ে ফাঁকা জায়গায় বা কোয়ার্টার দখলে নিয়ে প্রথমে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে নেওয়া হচ্ছে। এর পর সেখানে অনুমতি ছাড়াই দিব্যি গড়ে উঠছে বহুতল ভবন ও বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এভাবে রেলওয়ে শহর সৈয়দপুরে প্রায় প্রতিদিনই রেলওয়ে কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গায় জমি সাধারণ মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে। দখলের প্রক্রিয়া থেকে বাদ যায়নি রেলওয়ে বাংলো ও বাসাবাড়িতে অগ্নিকান্ডের হাত থেকে রক্ষার জন্য জলাধারগুলো। শহরের মুন্সিপাড়া মহিলা কলেজ রোডে এ রকম একটি জলাধার দখল করে তাতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে খালেদ মার্কেটের পিছনে এক সময় রেলওয়ে বেশ কিছু কোয়াটার ছিল। বর্তমানে সে সব আর চোখে পড়ে না। সেখানে রেলওয়ে কোয়ার্টার দখল করে পরে সে সব ভেঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
এভাবে রেলওয়ে জমি দখলে নিয়ে বাণিজ্য প্রধান সৈয়দপুর শহরের সর্বত্র শত শত বহুতল ভবন নির্মাণ, পাকা-আধাপাকা বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সৈয়দপুর রেলওয়ের বিভাগের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তহিদুল ইসলাম জানান, দখলদার বিরুদ্ধে থানায় শতাধিক জিডি করা রয়েছে। আর দখলের বিষয়টি রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে।             

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4165590000867733390

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item