নীলফামারী কারাগারে এক হাজতির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে॥দাঙ্গা হাঙ্গার অপচেস্টা

বিশেষ প্রতিনিধি ১৪ জুলাই॥
নীলফামারীতে এক তরুনীর জোড় পূর্বক মাথার চুল ন্যাড়া করে শ্লীলতাহানী ঘটানোর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত তিন আসামীর মধ্যে এক আসামী পুস্প রায়ের (৪৫) মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামার অপচেস্টা করেছে একটি সুবিধাবাদী মহল। গতকাল শুক্রবার (১৩ জুলাই) রাতের এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিকভাবে মৃত্যুর খবরটি যে মিথ্যা তা প্রমান করায় নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নে বড়ধরনের দাঙ্গা হাঙ্গামা হতে রক্ষা পায়।

এলাকাবাসী জানায়, জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নে চাঁদেরহাট কলেজপাড়া গ্রামে প্রেমের সম্পর্কে মৃত ধীরেন্দ্র নাথ রায়ের মেয়ে লক্ষ্মী রাণী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহন পূর্বক রিনা বেগম নাম ধারন করে জেলা সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে অটোচালক রবিউল ইসলামকে বিয়ে করে গত ২ জুলাই (সোমবার) স্বামীর বাড়ি চলে যায়। মেয়েটি শ্বশুড়বাড়িতে সংসার শুরু করে। এ অবস্থায় মেয়েটির এলাকার মাতব্বর আব্দুল করিম ও তার বাহিনীকে নিয়ে মেয়েটির বিধবা মা বুলোবালা রায়কে তার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ সৃস্টি করতে থাকে। ফলে গত ৯ জুলাই (সোমবার) গ্রাম্য মাতব্বররা দুহুলীর গ্রামে মেয়েটির শ্বশুড়বাড়িতে গিয়ে জোড়পূর্বক বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায় এবং মেয়েটির স্বামীর ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে পকেস্থ্য করে। এরপর মেয়েকে নিয়ে এসে তার মায়ের হাতে তুলে নিয়ে তাকে শুদ্ধি করার হুকুম দেয়। শুদ্ধি করতে প্রভাবশালীরা মেয়েটির মাথার চুল ন্যাড়া করার সিদ্ধান্ত দেয়। গত ১০ জুলাই (মঙ্গলবার) ভোর সারে চারটায় গ্রাম্য মাতব্বরদের হুকুমে মেয়েটিকে চেপে ধরে মাথা ন্যাড়া করে দেয় ওই গ্রামের সুরেন চন্দ্র রায়ের ছেলে দিনবন্ধু রায় (৪৩), মৃত সতিশ চন্দ্র রায়ের ছেলে পুস্প রায় (৪৫) ও প্রেম কুমার রায়ের ছেলে সদানন্দ রায় (৩০)।
বিষয়টি এলাকায় তোলপাড় সৃস্টি করলে গুকুমদাতা গ্রাম্য মাতব্বররা গা-ঢাকা দেয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করে ওই তিনজনকে। এ ঘটনায় গত ১১ জুলাই (বুধবার) সন্ধ্যায় ওই তরুণীর মা বাদি হয়ে সদর থানায় তিনজন নামীয় ও অজ্ঞাত ১০জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাটি দায়ের করেন।
আটককৃতদের পুলিশ গত ১২ জুলাই (বৃহস্পতিবার) আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। বিচারক ওই তিন জনকে কারাগারে পাঠিয়ে আগামী ১৬ জুলাই (সোমবার) আবেদনের শুনানীর দিন ধার্য্য করে।

একাধিক সুত্র জানায় গ্রেফতারকৃত তিন আসামী যাতে জিজ্ঞাসাবাদে তরুনীর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার হুকুমদাতাদের নাম প্রকাশ না করতে পারে সে জন্য একটি সুবিধাবাদী মহল ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহে গতকাল শুক্রবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যার পর গুজব ছড়িয়ে দেয় গ্রেফতারকৃত তিনজনের মধ্যে পুস্প রায় নির্যাতনর শিকার হয়ে জেলা কারাগারে মৃত্যু বরন করেছে। ঘটনাটি ধীরে ধীরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে সুবিধাবাদীরা ওই গ্রামে দাঙ্গা হাঙ্গামা লাগিয়ে দিয়ে ফায়দা লুটার অপচেস্টা করতে থাকে।

এ ঘটনায় নীলফামারী কারাগারের জেলার সফিকুল আলম জানান, গুজব ও মিথ্যা খবর প্রচার করে কে বা কারা ফায়দা লুটার চেস্টা করেছে। তবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় তাৎক্ষনিকভাবে পুস্প রায়ের বাবা, মা ও পরিবারের লোকজনকে ডেকে এনে রাতেই তাদের পুস্প রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়। সেই সঙ্গে অপর দুই আসামীও ছিল। তারা ভাল আছে এবং তাদের কোন সমস্যা নেই, তাদের মুখে কথা শুনে পরিবারের লোকজন বাড়ি ফিরে যায়। 

পুস্প রায়ের বাবা সাংবাদিকদের জানায়, গুজব কত খারাপ তা এবার বুঝতে পারলাম। এলাকাবাসী জানায় যারা গুজব ছড়িয়ে দেয় তারা ওই মেয়েটির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের বুদ্ধি করেছিল। তারা যে ভুয়া কথা প্রকাশ করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছিল তা এবার প্রকাশ পেল। আমরা এর বিচার চাই। সব ঘটনার নাটের গুরু ওই করিম।
কে এই করিম জানতে চাইলে তারা বলে এলাকার বড় মাতব্বর। তার অত্যাচারে গ্রামের মানুষজন অতিষ্ঠ।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নীলফামারী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ কুমার ব্যানার্জী জানান, ঘটনারসাথে জড়িত ওই তিন ব্যক্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হুকুমদাতাদের চিহিৃত করা হবে। 
নীলফামারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাবুল আকতার বলেন, যারা মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটার অপচেস্টা ও দাঙ্গা হাঙ্গামা লাগানোর অপচেষ্টা করেছে তাদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 8136414179177273932

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item